রোহিঙ্গাদের নির্যাতনের কথা শুনলেন রাখাইন কমিশনের সদস্যরা

রোহিঙ্গা পরিস্থিতি সরেজমিন দেখতে রাখাইন অ্যাডভাইজারি কমিশনের তিন সদস্যের প্রতিনিধি দলটি কক্সবাজারে পৌঁছেছেন।

রোববার বেলা পৌনে ১২টার দিকে প্রতিনিধি দল উখিয়ার নতুন রোহিঙ্গা বস্তিতে যায়। সেখানে অবস্থান করা নির্যাতিত রোহিঙ্গা অনেক পরিবারের সঙ্গে একান্তভাবে কথা বলে।

প্রতিনিধি দল দুপুর ১টার দিকে বালুখালী নতুন বস্তি থেকে বেরিয়ে কুতুপালং রোহিঙ্গা বস্তির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়।

এখান থেকে ফিরে প্রতিনিধি দল কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে।

পরে ঢাকায় তারা পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও বৈঠক করবে।

কমিশনের সদস্যরা হলেন- মিয়ানমার নাগরিক উইন ম্রা ও আই লুইন এবং লেবাননের নাগরিক ঘাসান সালামে।

এর আগে প্রতিনিধি দলটি শনিবার রাতে ঢাকায় পৌঁছে।

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, সোমবার ঢাকায় প্রতিনিধি দলের সদস্যরা মঙ্গলবার বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিস (বিস) প্রাঙ্গণে সুশীল সমাজের
প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।

মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর নোবেল বিজয়ী অং সান সুচি রোহিঙ্গা অধ্যুষিত রাখাইন রাজ্যের সমস্যা সম্পর্কে জানা এবং সমাধানের সুপারিশ প্রণয়নের লক্ষ্যে রাখাইন অ্যাডভাইজারি কমিশন গঠন করেছেন।

যৌথভাবে এ কমিশন গঠনে যুক্ত হয়েছে কফি আনান ফাউন্ডেশন। ৯ সদস্যবিশিষ্ট এ কমিশনের প্রধান জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান। তবে কফি আনান এ সফরে ঢাকায় আসেননি।

এদিকে চলতি বছরের শেষ নাগাদ রাখাইন কমিশন তাদের প্রতিবেদন মিয়ানমারের সরকারের কাছে পেশ করবে।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বিভিন্ন গোষ্ঠি ও সম্প্রদায়ের সঙ্গে আলোচনা করে রাখাইন কমিশন স্বাধীনভাবে প্রতিবেদন দেবে বলে জানানো হয়েছে।

রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের বিষয়টি নিয়েও সুপারিশ পেশ করা রাখাইন কমিশনের আওতাভুক্ত। বাংলাদেশ সফরকালে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব সম্পর্কে তাদের কাছে তথ্যপ্রমাণ চাইতে পারে কমিশন, এমন কথা থাকলেও রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কমিশন সদস্যরা কী কথা বলছেন তা গণমাধ্যমকে জানানো হয়নি।

উল্লেখ্য, রোহিঙ্গারা পরম্পরায় রাখাইন রাজ্যে বসবাস করলেও এখন পর্যন্ত তারা মিয়ানমারের নাগরিকত্ব পায়নি। সে কারণে তারা নাগরিক সুবিধা থেকেও বঞ্চিত আছে। সংকটের সমাধান তাই নাগরিকত্বের মধ্যেই নিহিত বলে সংশ্লিষ্টরা বলছেন।

নাগরিকত্বের মতো সমস্যার মূল বিষয় নিষ্পত্তি না করলে রোহিঙ্গারা উগ্রবাদের মতো বিপথগামী হতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে।

এদিকে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আলোচনার লক্ষ্যে ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় আসছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার সংক্রান্ত বিশেষ দূত (র্যাপোটিয়ার) ইয়াংহি লি।

তিনি কক্সবাজারে গিয়ে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে মানবাধিকারের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে জানবেন। ইয়াংহি লি এরই মধ্যে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য সফর করেছেন। এরই মধ্যে জাতিসংঘ মানবাধিকার হাইকমিশনারের ‘ফ্যাক্ট ফাউন্ডিং মিশন’ বাংলাদেশ সফর করে গেছে।

এ মিশনের প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনকে তাদের বক্তব্য দিতে হবে।

অপরদিকে ঢাকায় নিযুক্ত নরডিক রাষ্ট্রদূতরা কক্সবাজার সফর করে বলেছেন, রাখাইন রাজ্যে পরিস্থিতির উন্নতি না হলে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান সম্ভব হবে না।

ফেব্রুয়ারির প্রথমদিকে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা এলাকা পরিদর্শনে যাবেন ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শিয়া স্টিফেন্স ব্লুম বার্নিকাট।

গত বছরের ৯ অক্টোবর সীমান্ত চৌকিতে সন্ত্রাসী হামলায় মিয়ানমারের নয়জন ‘বর্ডার গার্ড পুলিশ’ (বিজিপি) সদস্য নিহত হওয়ার জের ধরে দেশটির সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা অধ্যুষিত রাখাইন রাজ্যে অভিযান শুরু করে।

এ অভিযানে নির্বিচারে রোহিঙ্গাদের হত্যা, বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ এবং রোহিঙ্গা নারীদের ধর্ষণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

অভিযান শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৬৬ হাজার রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। এছাড়া প্রায় তিন লাখ রোহিঙ্গা আগে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে কক্সবাজার ও তার আশেপাশে খুপরি ঘর তুলে অবৈধভাবে বাস করছেন।

তার বাইরে ৩৩ হাজার রোহিঙ্গা আছেন বাংলাদেশে শরণার্থী শিবিরে।



মন্তব্য চালু নেই