রোজায় অসুস্থতা এড়াতে কী খাবেন, কী খাবেন না?

ঐতিহ্যগতভাবে আমরা সেহরি ও ইফতারে যেসব খাবার গ্রহণ করে থাকি সেগুলোর সবই যে যথাযথ তা কিন্তু নয়। এ সব খাবারের মধ্যে কিছু খাবার রয়েছে যা স্বাস্থ্যসম্মত নয়। আবার কিছু খাবার আছে যেগুলো স্বাস্থ্যসম্মত কিংবা পুষ্টিকর খাবার হলেও সময়োচিত নয়। রোজার সময় বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই রোজাদারেরা অসুস্থ হয়ে পড়েন যথাযথ খাবার গ্রহণ না করার কারণে। বিশেষ করে অতিরিক্ত খাবার গ্রহণের কারণেই এই অসুস্থতা দেখা দিয়ে থাকে। এর সাথে অপর্যাপ্ত ঘুম শরীরকে কিছুটা বিপাকে ফেলে দেয়। রোজায় এই শারীরিক বিপত্তি এড়ানো খুবই সহজ, কেবল মনে রাখবেন কিছু সহজ টিপস।

-রোজা রাখার পর সারা দিনের খাবার একসাথে খেতে হবে এ রকম মানসিকতা থেকেই এই বিপত্তি দেখা দেয়। এ কথা ভুলে গেলে চলবে না যে, পাকস্থলীর একটি নির্দিষ্ট আয়তন ও খাবার ধারণের ক্ষমতা রয়েছে। শুধু এক দিন কেন, তিন দিন না খেয়ে থাকার পরও পাকস্থলী তার ধারণক্ষমতার বেশি খাবার গ্রহণ করতে পারবে না। সুতরাং বেশি খেলে বিপত্তি ঘটবেই। তাই এ ধরনের বিপত্তি এড়াতে প্রথম উপদেশ হচ্ছে, সেহরি ও ইফতারে অতিভোজন পরিহার করা।

-শরীর নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি স্বনিয়ন্ত্রিতভাবে রোজার সময় বিপাকক্রিয়ার হার কমিয়ে দেয় এবং শরীরে জমাকৃত চর্বি ক্ষুধা নিবারণে ব্যবহৃত হয়। রোজার সময় খাবারের ব্যাপারে বেশির ভাগ লোকই রুচিকর খাবার গ্রহণের দিকে বেশি মনোযোগী থাকে, কিন্তু সুষম খাবার বা ব্যালান্স ডায়েটের কথা মনে রাখেন না। রোজায় সুস্থ থাকার জন্য সব ধরনের খাবার মিলিয়ে খাদ্য তালিকা তৈরি করতে হবে। বিশেষ করে, আটা বা চাল, দুধ ও দুগ্ধজাতীয় খাবার, মাছ, গোশত ও ডিম, শস্যদানা, শাকসবজি এবং সর্বোপরি ফলজাতীয় খাবার রাখা উচিত। সেহরি ও ইফতার উভয়ের পরই ফল খাওয়ার ব্যাপারে বিশেষভাবে মন দেবেন।

-রোজার খাবার যত সাধারণ হবে ততই ভালো। রোজা হচ্ছে বাড়তি ওজনসম্পন্ন লোকদের জন্য ওজন কমানোর উপায়। কিন্তু অতিভোজনের কারণে সে উদ্দেশ্য বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। একসাথে বেশি খাবেন না, সীমিত পরিমাণে আহার করুন। ওজন কমবেই।

-রোজায় দীর্ঘ সময় উপবাস থাকতে হয় বলে সেহরিতে কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট বা জটিল শর্করা গ্রহণ করা উচিত। এই জটিল শর্করা ধীরগতিতে হজম হয় এবং হজম হতে প্রায় ৮ ঘণ্টা লাগে। ফলে দিনের বেলায় ক্ষুধা কম অনুভূত হয়। জটিল শর্করাজাতীয় খাবারের মধ্যে রয়েছে শস্যদানা বা বীজজাতীয় খাবার, অপরিশোধিত বা ননরিফাইনড আটা, ময়দা এবং ঢেঁকিছাঁটা চাল। অন্য দিকে পরিশোধিত শর্করা দ্রুত হজম হয়ে যায় এবং রক্তে দ্রুত গ্লুকোজের মাত্রা বাড়িয়ে শরীরকে চাঙ্গা করে তোলে। এ ধরনের খাবার হজমে সময় নেয় তিন-চার ঘণ্টা। তাই এ ধরনের খাবার ইফতারে গ্রহণ করা উচিত। দ্রুত হজম হয় এ ধরনের শর্করাজাতীয় খাবারের মধ্যে রয়েছে রিফাইনড ময়দা ও চিনিজাতীয় খাবার।

-খেজুর হতে পারে ইফতারের একটি অন্যতম খাবার। খেজুর হচ্ছে চিনি, তন্তু বা ফাইবার, শর্করা, পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেশিয়ামের উৎস। ইফতারে দু-তিনটি খেজুরই শরীরকে দ্রুত চাঙ্গা করে দিতে পারে; তবে সাথে পানি পান করতে হবে প্রচুর।

-রোজায় ভাজাপোড়া খাবার প্রায় সবারই প্রিয়, কিন্তু এই ভাজাপোড়াজাতীয় ইফতারি গ্রহণের ফলেই অনেক রোজাদার শারীরিক অস্বস্তিতে ভোগেন। ভাজাপোড়া খাবার, অতি মসলাযুক্ত খাবার এবং অতিরিক্ত মিষ্টিজাতীয় খাবার গ্রহণের কারণে অনেকেই রোজা রেখে অবশেষে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তবে রোজার পর এদের বেশির ভাগই ক্রমান্বয়ে সুস্থ হয়ে ওঠেন। হঠাৎ করে একসাথে এসব খাবার গ্রহণের ফলে বদহজম, বুকজ্বলা এবং ওজন বৃদ্ধির সমস্যা দেখা দেয়। রোজা রাখার সময় যাতে এসিডিটি দেখা না দেয় তা প্রতিরোধের জন্য আশযুক্ত খাবার, শাকসবজি ও ফলমূল খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এইজাতীয় খাবার পাকস্থলীর মাংসপেশির সঙ্কোচন-প্রসারণপ্রক্রিয়া বাড়িয়ে দিয়ে পেট ফাঁপা যেমন প্রতিরোধ করে তেমনি খাবারগুলোকে ভেঙে ক্ষুদ্র অংশে পরিণত করে। এতে খাবার সহজেই হজম হয়ে যায়। ফলে এসিডিটি দেখা দেয়ার প্রবণতা হ্রাস পায়।

-ইফতারের পর ঘুমানোর আগ পর্যন্ত শরীরে সারা দিনের পানিস্বল্পতা এবং শরীরকে দূষণমুক্ত করার জন্য প্রচুর পরিমাণ পানি পান করুন। সেহরির পর অনেকেই চা পান করে থাকেন। চা অনেক উপকারী, এ কথাও প্রায় সবার জানা। কিন্তু এই নিবন্ধে গবেষকেরা সেহরির পর চা পান থেকে বিরত থাকতে বলেছেন, একটি ভিন্ন কারণে। চায়ের মধ্যে রয়েছে ক্যাফেইন। এই ক্যাফেইন প্রস্রাবের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে শরীরে খনিজ লবণ ও পানিস্বল্পতা দেখা দিয়ে থাকে। এই পানিস্বল্পতা রোজাদারের জন্য কাম্য নয়।

-সেহরির পর কলা খাওয়া যেতে পারে। কলায় রয়েছে পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম এবং কার্বোহাইড্রেট। তবে কলা কারো কারো ক্ষেত্রে কোষ্ঠকাঠিন্য করে থাকে। সে ক্ষেত্রে আঁশজাতীয় খাবার সাথে খেলে আর কোনো সমস্যা দেখা দেয়ার কথা নয়



মন্তব্য চালু নেই