রুশ প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ শেখ হাসিনার

বাংলাদেশ ও রাশিয়ার সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে দেশটির প্রধানমন্ত্রী দিমিত্রি মেদভেদেভকে ঢাকা সফরের আমন্ত্রণ জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার (১৩ এপ্রিল) প্রধানমন্ত্রীর চিঠিটি রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের হাতে তুলে দেন রাশিয়া সফররত বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলি।

বৃহস্পতিবার রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এতথ্য জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। চিঠিতে শেখ হাসিনা লিখেছেন, বাংলাদেশ ও রাশিয়ার কূটনৈতিক সম্পর্কের ৪৫তম বার্ষিকীতে এই সফর আমাদের সম্পর্ককে পরবর্তী স্তরে নিয়ে যাবে।

এদিকে সন্ত্রাস দমনে ঢাকাকে পাশে চেয়েছে মস্কো। দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে রাশিয়ার এই অবস্থানের কথা তুলে ধরেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ইস্যুসহ সন্ত্রাসবাদ দমনে ঢাকা-মস্কোর মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা হয়।

গত ৪৫ বছরে বাংলাদেশের কোনো পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এটাই প্রথম দ্বিপক্ষীয় রাশিয়া সফর। এ সফরে টেলিকম ও যোগাযোগ ক্ষেত্রে সমঝোতা স্মারক ও সংবাদ সংস্থা বাসস এবং রাশিয়ার ইথার তাসের মধ্যে সমঝোতা স্মারক চুক্তি হয়েছে বলেও জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পরে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী যৌথ সংবাদ বিবৃতি দেন। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে ওই ব্রিফিংয়ের বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে দুই মন্ত্রীর যৌথ সংবাদ সম্মেলনের ছবিও প্রকাশ করা হয়েছে।

দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের বিষয়ে মন্ত্রী সের্গেই লাভরব বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে আমাদের দুই দেশের বন্ধুত্ব। আন্তর্জাতিক, স্থানীয় এবং দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন ইস্যুতে বিশেষত উন্নয়নের প্রশ্নে আমাদের সম্পর্ক অনেক সুদৃঢ়। এ সময় রূপপুর পাওয়ার প্লান্ট, রাজনৈতিক সংলাপ, বাণিজ্যিক এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতার মতো বিষয়গুলোর উল্লেখ করেন তিনি।

দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্কে আইনি কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আনতে বিভিন্ন খাতে অন্তত ১৫টি চুক্তি সইয়ের কাজ চলছে বলেও জানান রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

সন্ত্রাস দমনে রাশিয়া-বাংলাদেশের অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে উল্লেখ করে লাভরভ রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সন্ত্রাসবিরোধী আন্তর্জাতিক জোট গঠনের আহ্বানের প্রয়োজনীয়তার কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করছি, এই জোটে আমাদের সহযোগী দেশের সংখ্যা আরও বাড়বে এবং বাংলাদেশ হচ্ছে অবশ্যই সেসব দেশগুলোর একটি।

সবধরনের সন্ত্রাস ও সহিংস চরমপন্থার বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি বজায় রাখার কথা উল্লেখ করেন মাহমুদ আলী।

দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ রাশিয়ার পুরনো এবং বিশ্বস্ত অংশীদার উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে রাশিয়ার সমর্থন ছিল, এতে মস্কো গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা দিয়েছিল। যুদ্ধপরবর্তী সময়ে (১৯৭২-৭৪ পর্যন্ত) চট্টগ্রাম বন্দর এলাকায় শত্রু পক্ষের পুঁতে রাখা মাইন এবং ডুবন্ত জাহাজ উদ্ধারে রাশিয়ার নাবিকদের বীরত্বপূর্ণ অবদানকে বাংলাদেশ কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করে উল্লেখ করেন মাহমুদ আলী।

রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে মস্কো সফরে আসায় মাহমুদ আলীকে ধন্যবাদ জানান লাভরভ।

উচ্চপর্যায়সহ দ্বিপক্ষীয় রাজনৈতিক সংলাপ আরও শক্তিশালী করতে উভয় দেশ কাজ করছে জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মস্কো সফর এবং সেই সময়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লামিদির পুতিনের সঙ্গে তার বৈঠকের মধ্যদিয়ে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সববিষয়ে সহয়োগিতা শক্তিশালীকরণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল।

ওই সফরে বিদ্যুৎ ও সামরিক কারিগরি সহযোগিতাসহ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের প্রধান খাতগুলোর বিষয়ে দুই দেশ চুক্তি ও সমঝোতায় পৌঁছায়। পরবর্তীতে ২০১৬ সালে মঙ্গোলিয়ায় রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী দিমিত্রি মেদেভেদেভ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকেও সেটি পুনর্ব্যক্ত করা হয়।



মন্তব্য চালু নেই