‘রিভিউয়ের সুযোগ দিয়েছি, আর সময় নয়’
জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর রিভিউ শুনানিতে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বলেছেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের দণ্ডপ্রাপ্তদের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে রিভিউ করার কোনো সুযোগ আইনে ছিল না। আপিল বিভাগ জামায়াতের নেতা কাদের মোল্লার মামলার রায়ে রিভিউ করার সুযোগ দিয়েছে। মীর কাসেম আলীর রিভিউ শুনানির জন্য আর সময় দেয়া হবে না বলে তিনি সাফ জানিয়ে দেন।
মীর কাসেমের পক্ষে সময় আবেদনের শুনানিতে বুধবার প্রধান বিচারপতি এ মন্তব্য করেন। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের বেঞ্চে এ শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। বেঞ্চের অন্য চার বিচারপতি হলেন- বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার এবং বিচারপতি বজলুর রহমান।
মীর কাসেমের পক্ষে শুনানি করেন সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
সকাল ৯টা ৩৬ মিনিটে শুনানি শুরু হয়। শুনানির শুরুতে মাহবুব হোসেন জানান, মীর কাসেমের ছেলে মীর আহমেদ বিন কাসেম (আরমান) আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ধরে নিয়ে গেছে। তার কাছে মামলার সব নথিপত্র উল্লেখ করে সময় আবেদন করেন।
এসময় প্রধান বিচারপতি আসামিপক্ষের আইনজীবীদের উদ্দেশে বলেন, এর আগে আপনাদের আমরা রিভিউ শুনানির প্রস্তুতির জন্য এক মাস সময় দিয়েছি। এখন আর সময় দিতে পারছি না। আমরা দুখিঃত। শুনানি শুরু করুন।
খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, জুনিয়র আইনজীবীদের না পাওয়ায় শুনানি প্রস্তুতি নেয়া সম্ভব হয়নি। এজন্য আমরা সময় চাচ্ছি।
প্রধান বিচারপতি বলেন, কেন সময় চাচ্ছেন? আপনি যে যুক্তি দেখিয়েছেন তাতে সময় দেয়া যাবে না। আপনি আবেদনে বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মীর কাসেমের ছেলেকে তুলে নিয়ে গেছে। বিষয়টি ভিন্ন রকমও তো হতে পারে। আপনি কেন যুক্তি দেখিয়ে সময় চাচ্ছেন।
খন্দকার মাহবুব বলেন, আমার কাছে মামলার কোনো কাগজপত্র নেই। আমি অসহায়।
প্রধান বিচারপতি বলেন, রিভিউ শুনানিতে আপিল বিভাগের রায়ের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। সেদিন তো আপনার কাছে মামলার পেপারবুক ছিল। আমি যথেষ্ট লিবারেল। ২৫ জুলাই রাষ্ট্রপক্ষের বিরোধিতা সত্ত্বেও আপানাদেরকে সময় দিয়েছিলাম। আমাদের কাছে পেপারবুক আছে। আমি পেপারবুক নিয়ে শুনানি শুরু করুন। রবিবার শেষ করবেন।
খন্দকার মামবুব এই পর্যায়ে এক সপ্তাহের সময় চান। এরপর আদালত সময় না দিয়ে খন্দকার মাহবুব শুনানি শুরুর নির্দেশ দেয়। এরপরই শুনানি শুরু হয়।
গত ১৯ জুন আপিল বিভাগের মৃত্যুদণ্ডের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন করেন মীর কাশেম আলী। এ আবেদনের দ্রুত শুনানি চেয়ে আবেদন করেন রাষ্ট্রপক্ষ। রাষ্ট্রপক্ষের আনা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২১ জুন আপিল বিভাগের চেম্বারকোর্ট বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকি শুনানির জন্য ২৫ জুলাই দিন ধার্য করেন। ২৫ জুলাই শুনানিতে আসামিপক্ষ সময় আবেদন করলে তা মঞ্জুর করে ২৪ আগস্ট নির্ধারণ করেন আদালত।
জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদ সদস্য মীর কাসেম আলীকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দেয়া মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় গত ৬ জুন প্রকাশ করা হয়। এরআগে গত ৮ মার্চ মীর কাসেম আলীর মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে সংক্ষিপ্ত রায় রায় ঘোষণা করেছিল আপিল বিভাগ।
২০১৪ সালের ২ নভেম্বর মীর কাসেম আলীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করে ট্রাইব্যুনাল।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এ মামলায় ট্রাইব্যুনালের আদেশে ২০১২ সালের ১৭ জুন মীর কাসেম আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন। বর্তমানে তিনি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন।
মন্তব্য চালু নেই