রাসায়নিক অস্ত্রনিরস্ত্রীকরণ সংস্থার নেতৃত্বে বাংলাদেশ

রাসায়নিক অস্ত্রনিরস্ত্রীকরণ সংস্থা বা অর্গানাইজেশন ফর দ্য প্রোহিবিশন অব কেমিক্যাল উইপনস’র (ওপিসিডব্লিউ) নির্বাহী পর্ষদের চেয়ারপারসন নির্বাচিত হয়েছে বাংলাদেশ।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বৃহস্পতিবার দেয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো সংস্থাটির শীর্ষপদে নির্বাচিত হয়েছে জানিয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, এর মাধ্যমে বাংলাদেশ বড় ধরনের কূটনৈতিক সাফল্য অর্জন করেছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ওপিসিডব্লিউ’র নির্বাহী পর্ষদের চেয়ারপারসন পদে এ অর্জন আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশের অগ্রণী ভূমিকা, অবদান ও আন্তর্জাতিকভাবে অস্ত্রনিরস্ত্রীকরণ এবং এর বিস্তার প্রতিরোধে বাংলাদেশের ভূমিকার প্রতি বিশ্ব সম্প্রদায়ের সন্তোষজনক মনোভাবেরই প্রতিফলন।

রাসায়নিক অস্ত্রনিরস্ত্রীকরণ সনদকে কার্যকর করার লক্ষ্য নিয়ে ১৯৯৭ সালে যাত্রা শুরু করে নেদারল্যান্ডসের হেগভিত্তিক ওপিসিডব্লিউ সংস্থাটি। বর্তমানে ১৮৯টি দেশ এ সংস্থার সদস্য।

ওপিসিডব্লিউ জাতিসংঘের সংস্থা না হলেও নীতিগত বিষয়সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার সম্পর্ক রয়েছে প্রতিষ্ঠান দুটির। কোনো দেশে রাসায়নিক অস্ত্রের বিষয়ে পরিদর্শন বা পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন হলে জাতিসংঘ ওপিসিডব্লিউর সহায়তা নেয়। এ বিষয়ে ২০০০ সালে একটি চুক্তিও করে সংস্থা দুটি।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়েছে, নেদারল্যান্ডসে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও ওপিসিডব্লিউতে নিযুক্ত বাংলাদেশ স্থায়ী প্রতিনিধি শেখ মুহম্মদ বেলাল ১২ মে থেকে ২০১৮ সালের ১১ মে পর্যন্ত ওপিসিডব্লিউর নির্বাহী পর্ষদের ২০তম চেয়ারপারসনের দায়িত্ব পালন করবেন।

পর্যায়ক্রমিক আবর্তনের ফলে প্রতি পাঁচ বছর পরপর এশিয়া গ্রুপ এই গুরুত্বপূর্ণ পর্ষদের চেয়ারপারসন হওয়ার সুযোগ পেয়ে আসছে এবং এ পর্যন্ত এশিয়া গ্রুপ থেকে চারবার এ দায়িত্ব পালন করা হয়েছে। চারবারের মধ্যে দুবার ভারত ও শ্রীলঙ্কা এবং ফিলিপাইন একবার করে চেয়ারপারসনের দায়িত্বে নির্বাচিত হয়।

মূলত নির্বাহী পর্ষদ ওপিসিডব্লিউ’র চালিকাশক্তি। রাসায়নিক অস্ত্র কনভেনশন যথাযথভাবে বাস্তবায়ন, পর্যবেক্ষণ ও তদারকি এর কর্মপরিধিভুক্ত। এছাড়া নির্বাহী পর্ষদ ওপিসিডব্লিউ সচিবালয়ের কার্যক্রম দেখভাল, সদস্য দেশসমূহের জাতীয় কর্তৃপক্ষের সাথে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান এবং সদস্য দেশগুলোর অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে পরামর্শ ও সহযোগিতা দিয়ে থাকে।

ওপিসিডব্লি’র নির্বাহী পর্ষদ ৪১ সদস্যবিশিষ্ট। সদস্যরা সমানুপাতিক ভৌগোলিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা, রাসায়নিক শিল্প এবং রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়াদি বিবেচনাপূর্বক পর্যায়ক্রমিক আবর্তন ব্যবস্থায় দুই বছরের জন্য নির্বাচিত হয়।

ওপিসিডব্লিউ-জাতিসংঘের যৌথ অনুসন্ধানমূলক কর্মব্যবস্থা প্রতিবেদনের বিষয়ে জাতিসংঘের সাথে নিবিড় যোগাযোগ, সিরিয়ায় রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার ইত্যাদির সাথে সাথে নির্বাহীপর্ষদের নতুন চেয়ারপার্সনকে আরো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। কেননা তিনিই সংস্থাটির পরবর্তী মহাপরিচালক নিয়োগের বিষয়টি তত্ত্বাবধান করবেন।

এছাড়াও সিরিয়া ও ইরাকে রাসায়নিক অস্ত্রের ক্রমাগত ব্যবহারের অভিযোগ এবং নিরাপত্তা পরিষদ কর্তৃক ব্যবস্থা গ্রহণের আগে সেসব অভিযোগের বিষয়ে তদন্তভার এই গুরুত্বপূর্ণ পর্ষদটির উপর নিয়মিতভাবে ন্যস্ত করায় এবারের নির্বাচন বিশেষ গুরুত্ব রাখে।

রাসায়নিক অস্ত্রের বিস্তার প্রতিরোধে অসামান্য অবদানের জন্য ওপিসিডব্লিউ ২০১৩ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার অর্জন করে। ১৯২ সদস্য রাষ্ট্র নিয়ে সংস্থাটি ১৯৯৩ সালে রাসায়নিক অস্ত্র কনভেনশন বাস্তবায়ন করেছে। বাংলাদেশ ১৯৯৩ সালের ১৪ জানুয়ারি এই কনভেনশনে স্বাক্ষর করে এবং ২৫ এপ্রিল ১৯৯৭ তারিখে তা অনুসমর্থন করে।



মন্তব্য চালু নেই