রাভিনার বিবৃতির নেপথ্যে …
জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি গত ১৬ই জানুয়ারি দেয়া বিবৃতিতে প্রকারান্তরে বাংলাদেশের বিবদমান দুটি দলকে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন যে, গভীরতর রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে হত্যাকান্ডের সংখ্যা বাড়তে থাকলে এর দায় তাদের নেতারা এড়াতে পারবেন না। ওই বিবৃতিতে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে দেয়া নাভি পিল্লাইয়ের বিবৃতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
ঢাকায় জাতিসংঘ সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র এ প্রসঙ্গে স্মরণ করিয়ে দেন যে, ‘নাভি পিল্লাইয়ের দপ্তরের একজন মুখপাত্র তখন চলমান সহিংসতার জন্য বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে হেগে অবস্থিত আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতে বিচারের সম্মুখীন করার দিকে ইঙ্গিত করার কারণ ও প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করেছিলেন।
ওই মুখপাত্র বলেছিলেন,’ সংলাপের মাধ্যমে সুরাহা না হলে এই সহিংসতা আরও নিকৃষ্ট রূপ নিতে পারে। আর ফৌজদারি অপরাধের দায় থেকে ক্ষমতাসীন রাষ্ট্রপ্রধান, সংসদ সদস্য, জনপ্রতিনিধি বা উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাদের কেউই শুধু পদমর্যাদার কারণে রেহাই পেতে পারেন না।
উল্লেখ্য, ১৬ই জানুয়ারির বিবৃতিতে উল্লেখ করা ‘ডেসট্রাকটিভ ব্রিঙ্কম্যানসশিপ’ কথাটি উল্লেখ করেন। এই শব্দটি ২০১৩ সালে পিল্লাইর বিবৃতিতেও বলা হয়েছিল। এর মানে হলো ‘কোন বিপদজনক নীতি অনুসরণ করার ফলে যুদ্ধ বা ধ্বংসের প্রান্তসীমায় পৌঁছানো।’ ২০১৩ সালে বাংলাদেশে নির্বাচনকালীন সংঘাতে প্রাণহানির ঘটনায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের তৎকালীন হাইকমিশনার নাভি পিল্লাই দেশের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে তাদের মতপার্থক্য দূর করে অবিলম্বে ধ্বংসাত্মক নীতি পরিহারের আহ্বান জানিয়েছিলেন। আর তাতে হেগের আদালতে বিচারের মুখোমুখি হওয়ার বিষয়টিরও উল্লেখ ছিল। পিল্লাই বলেছিলেন বাংলাদেশে রোম সংবিধির দস্তখতকারী দেশেগুলোর অন্যতম।
তাই জাতিসংঘের নতুন বিবৃতিতে এক বছর আগে ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেয়া জাতিসংঘ মহাসচিবের বিবৃতির ধারাবাহিকতা বজায় থেকেছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সঙ্কট ও সহিংসতা গভীরতর হওয়ার জন্য ২ বড় দলের ব্যর্থতাকে চিহ্নিত করেছে।
চলমান সংঘাতকে উদ্বেগজনক হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন মানবাধিকার কমিশনের মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি। জেনেভায় এক সংবাদ বিবৃতিতে চলমান রাজনৈতিক সংঘাতে যেসব হত্যাকান্ড হয়েছে তার সবগুলোর নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করা হয়েছে। এসব হত্যাকান্ড সরকার বা সরকারের বাইরে যাদের দ্বারাই হোক না কেন বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ অবিলম্বে সেগুলোর নিরপেক্ষ এবং কার্যকর তদন্তের উদ্যোগ নেবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নেয়া পদক্ষেপগুলো যেন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের গন্ডির মধ্যে থাকে সরকারকে তা নিশ্চিত করতে হবে বলে তিনি গুরুত্ব আরোপ করেন।
উল্লেখ্য, জাতিসংঘের তরফে ২০১৩ সালে বাংলাদেশ নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে এ ধরনের হুঁশিয়ারি ইতিহাসে এই প্রথম। ২০০৭ সালে কেনিয়ায় নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতায় এক হাজারের বেশি নাগরিকের মৃত্যুর দায়ে কেনীয় প্রেসিডেন্ট ও ডেপুটি প্রেসিডেন্ট আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতে বিচারের সম্মুখীন হন।
বর্তমানে বিশ্বের ৮টি দেশে আইসিসি মামলা তদন্ত করছে। সব কটিই আফ্রিকায়। এর মধ্যে ৫টি দেশ (সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, আইভরি কোস্ট, কঙ্গো, মালি ও উগান্ডা) নিজেরাই তাদের মামলাগুলো আইসিসিতে পাঠিয়েছে। আর লিবিয়া ও সুদানের ক্ষেত্রে প্রস্তাব পাস হয়েছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে।
কঙ্গোর বিদ্রোহী নেতা টমাস লুবাঙ্গা আইসিসিতে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। তার মামলা বর্তমানে আপিলে আছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ বহুসংখ্যক ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। তাদের মধ্যে বর্তমানে কয়েকজনের বিচার চলছে। রাজনৈতিক সহিংসতাজনিত অন্যান্য পরিস্থিতিতে (যেমন- গিনি ও হন্ডুরাস) এখন আইসিসির প্রসিকিউটর দ্বারা প্রাথমিক পরীক্ষা চলছে। মানবজমিন
মন্তব্য চালু নেই