আমিন ধ্বনিতে শেষ হল ৫০তম বিশ্ব ইজতেমা

বাংলাদেশসহমুসলিম উম্মাহর সুখ-সমৃদ্ধি ও কল্যাণ কামনার মধ্য দিয়ে শেষ হল তাবলিগ জামাতের সর্ববৃহৎ জমায়েত ৫০তম বিশ্ব ইজতেমার কার্যক্রম।

টঙ্গীর তুরাগ তীরে অনুষ্ঠিত বিশ্ব ইজতেমায় আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেন ভারতের মাওলানা মোহাম্মদ সা’দ। রবিবার বেলা ১১টা ২৪ মিনিটে শুরু হয়ে আখেরি মোনাজাত চলে ১১টা ৫৪ মিনিট পর্যন্ত।

মাঘের কনকনে শীত উপেক্ষা করে আধা ঘণ্টাব্যাপী এ মোনাজাতে দেশ বিদেশের লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লি অংশ নেন। এ সময় পুরো টঙ্গী এলাকা ধর্মপ্রাণ লাখো মুসল্লির আমিন আমিন ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে।

আল্লাহুম্মা আমিন ধ্বনি উচ্চারিত হয় দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশের মাটিতেও। স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলগুলো বিশ্ব ইজতেমার বিশেষ মোনাজাত সরাসরি সম্প্রচার করায় দেশ-বিদেশের মুসল্লিরা বাসা বাড়ি, দোকান, অফিস, আদালত ও নিজ নিজ অবস্থান থেকে মোনাজাতে শরিক হন।

১৬০ একর ইজতেমা ময়দান পেরিয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক, আশেপাশের রাস্তা, অলি-গলিতসহ কয়েক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে মানুষের ঢল নামে। কেউ বসে, কেউ দাঁড়িয়ে মোনাজাতে শরিক হন। অনেকে বাসা বাড়ির ছাদে ছামেয়ানা টানিয়ে ইজতেমার মুসল্লিদের সুরে আমিন আমিন ধ্বনি তোলেন। পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও মোনাজাতে অংশ নেন। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কসহ আশেপাশেররাস্তায় পত্রিকা বা চট বিছিয়ে মুসল্লিদের মোনাজাতে শরিক হতে দেখা গেছে।

রাষ্ট্রপতি এ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ বঙ্গভবনে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে বসে মোনাজাতে শরিক হন। আর প্রথম পর্বের মতো শেষ পর্বেও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া গুলশান তার রাজনৈতিক কার্যালয়ে ‘অবরুদ্ধ’ অবস্থায় মোনাজাতে শরিক হন।

তিন দিনব্যাপী দুই পর্বের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব গত ৯ জানুয়ারি থেকে ১১ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়। চারদিন বিরতি দিয়ে গত ১৬ জানুয়ারি শুক্রবার বাদ ফজর দ্বিতীয় ও শেষ পর্ব শুরু হয়। রবিবার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে তাবলিগ জামাতের ৫০তম বিশ্ব ইজতেমার আনুষ্ঠানিকতা শেষ হল।

প্রথম দফার ইজতেমায় আবহাওয়া অনুকূলে থাকলেও শেষ দফার দ্বিতীয় দিন বাদ ফজর থেকে দফায় দফায় টিপটপ বৃষ্টি মুসল্লিদের চরম ভোগান্তিতে ফেলে দেয়। শনিবার রাত থেকে ঘন কুয়াশা আর উত্তরের হিমেল হাওয়া শীতের তীব্রতা আরও বাড়িয়ে দেয়। এতে দুর্ভোগের মাত্রাও বাড়ে।

আখেরী মোনাজাতের আগে রবিবার সকাল ১০টা থেকে চলে হেদায়েতি বয়ান। হেদায়েতি বয়ান করেন ভারতের মাওলানা সা’দ। উর্দু ও হিন্দি ভাষার হেদায়েতি বয়ানের অনুবাদ করেন ঢাকার মাওলানা মো. জোবায়ের আহমেদ ও ওয়াসিফুর ইসলাম। বয়ানে তিনি আল্লাহর রাস্তায় (তাবলীগে) দাওয়াতি কাজে পায়ে হেঁটে মানুষের কাছে দাওয়াত পৌঁছে দেওয়ার পরামর্শ দেন।

তিনি বলেন, ‘পায়ে হেঁটে বেশি মানুষকে দ্বীনের দাওয়াত দেওয়া সম্ভব হবে। এতে পায়ে যে ধূলাবালি লাগবে তা জাহান্নামের আগুনকে ঠাণ্ডা করে দেবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘মসজিদে হারমাইনে ইবাদতের চাইতেও আল্লাহর রাস্তায় বের হয়ে ইবাদত করা উত্তম।’ এজন্য তিনি মুসলমানদের ঘরে বসে না থেকে আল্লাহর রাস্তায় বের হওয়ার আহ্বান জানান।

বয়ানের তাৎক্ষণিক অনুবাদ : বিশ্ব ইজতেমায় বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের তাবলীগ মারকাজের শুরা সদস্য ও বুজর্গরা বয়ান করেন। মূল বয়ান উর্দূতে হলেও বাংলা, ইংরেজি, আরবি, মালয়, তুর্কি ও ফরাসি ভাষায় তাৎক্ষণিক অনুবাদ করে শোনানো হয়। বিদেশি মেহমানদের জন্য মূল বয়ান মঞ্চের উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্বপাশে হোগলা পাটিতে বসেন। বিভিন্ন ভাষাভাষি মুসল্লীরা আলাদা আলাদা বসেন এবং তাদের মধ্যে একজন মুরুব্বি মূল বয়ানকে তাৎক্ষণিক অনুবাদ করে শোনান।

নিরাপত্তা ব্যবস্থা : বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে সরকার। বিশেষ করে ২০ দলীয় জোটের অবরোধ কর্মসূচি থাকায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়। নিয়মিতভাবে ইজতেমায় ১২ হাজার আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত থাকার পাশাপাশি অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়। ইজতেমাস্থলে নিরাপত্তা ছিল চোখে পড়ার মতো। সেখানে বেশ কয়েকটি সুউচ্চ পর্যবেক্ষণ টাওয়ার বসানো হয়। র‌্যাব ও পুলিশ সদস্যরা ওইসব টাওয়ার থেকে ইজতেমাস্থল পর্যবেক্ষণ করেন। এছাড়া সিসি ক্যামেরার ইজতেমা ময়দান ও আশেপাশের এলাকা পর্যবেক্ষণ করেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। আকাশে হেলিকপ্টার ও তুরাগ নদীতে স্পিড বোটের টহলও জোরদার ছিল।

দ্বিতীয় ও শেষ দফার তিনদিনের ইজতেমায় মোট আট জনের মৃত্যু হয়েছে। এর আগে প্রথম দফায় মোট নয়জন মুসল্লির মৃত্যু হয়। দুই দফায় এ নিয়ে মারা গেলেন মোট ১৭ জন মুসল্লি।



মন্তব্য চালু নেই