রাণীনগর-আত্রাইয়ে ২২ কিলোমিটার খাল খনন: দেড় লাখ মানুষ উপকৃত হবে
কাজী আনিছুর রহমান, রাণীনগর (নওগাঁ) সংবাদদাতা: ভূ-পরিস্থ পানির স্তর সংস্কারের জন্য বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে নওগাঁর রাণীনগরে খাল খননের কাজ শুরু হয়েছে। এই খালের দু’পাশের প্রায় ২৪ হাজার হেক্টর অনাবাদি জমি চাষের আওতায় আনা হচ্ছে। এতে ওই জমিগুলোতে এক ফসলের পরিবর্তে কৃষকরা তিনটি ফসল উৎপাদন করতে পারবে। এত উপকৃত হবে এলাকার প্রায় দেড় লাখ মানুষ। রাণীনগর ও আত্রাই উপজেলার প্রায় ২২ কিলোমিটার এই খাল খনন করা হচ্ছে। এই প্রকল্পের আওতায় প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে আগামী ৩ বছরের মধ্যে খাল খননের কাজ সম্পন্ন হবে। বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ রাণীনগর জোনের সহকারি প্রকৌশলী মোঃ তিতুমীর রহমান জানান, রাণীনগর ও আত্রাই উপজেলার ২২ কিলোমিটার খাল খননের প্রথম পর্যায়ে রাণীনগর উপজেলার মিরাট ইউনিয়নের ধনপাড়া ৩নং স্লুইস গেইট থেকে পলাশবাড়ি স্লুইস গেইট পর্যন্ত শ্রীমতখালি খালের ১৭ কিলোমিটার খাল খনন প্রকল্পের আওতায় নেওয়া হয়েছে। চলতি অর্থ বছরে প্রকল্পের অংশ হিসাবে রাণীনগর উপজেলার ৩নং স্লুইস গেইট থেকে পলাশবাড়িসহ ৯ কিলোমিটার খালের ৪ কিলোমিটার ও আত্রাই উপজেলার ৫ কিলোমিটার কাজ আগামী ১ মাসের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। পুরো খাল খনন করা হলে এই এলাকার প্রায় দেড় লাখ মানুষ উপকৃত হবে বিভিন্ন ভাবে। দীর্ঘদিন খালগুলো খনন না করায় কারণে পলি জমে এই খালগুলো ভরাট হয়ে গেছে। ফলে খালের পাশের জমি গুলোতে কৃষকরা একটি মাত্র ফসলই চাষ করতে পারতো কিন্তু এই খাল খননের পর তার একই জমিতে তিন ফসল চাষ করতে পারবেন। খাল খননের ফলে সব সময় খালে পানি থাকবে ফলে কৃষকদের জমিতে পানি সেচ অনেকটা সহজলভ্য হবে এবং সেচ খরচ অর্ধেকে নেমে আসবে। ভূ-গর্ভস্ত পানির পরিমাণ বৃদ্ধিসহ ভূ-উপরিস্ত পানির ব্যবহার বাড়বে। খাল খননের কারণে খালে সব সময় পানি থাকার কারণে দেশি-বিদেশীসহ অনেক প্রজাতির মাছ খালে মুক্ত পানিতে বড় হবে। আর মাছ ধরে এই এলাকার মৎস্যজীবিরা জীবণ ধারণ করতে পারবেন। খাল খননের পর খালের দৃই পাশ দিয়ে প্রায় ৪৪ কিলোমিটার রাস্তা তৈরি করা হবে যা এই এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরো একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে। খালের উপর দিয়ে প্রায় ২লক্ষ বিভিন্ন ফলদ, বনজ ও ওষধি বৃক্ষ রোপন করা হবে এজন্য এলাকার পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাসহ জীব-বৈচিত্র রক্ষা পাবে। অপরদিকে উপজেলার বেতগাড়ি ছোট যমৃনা নদীর সংযোগস্থল থেকে আত্রাই উপজেলার কালিকাপুর পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার খাল নতুন করে খননের কাজ এই অর্থ বছরেই শেষ করা হবে। যার ফলে উপকৃত হবে এই অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ। স্থানীয় সংসদ সদস্যের প্রচেষ্টায় ও বর্তমান উন্নয়নমুখি সরকারের গ্রামীণ অবকাঠামোগত উন্নয়নের ধারাবাহিকতার অংশ হিসাবে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ধরপাড়া গ্রামের কৃষক আব্দুর রহিম জানান, দেশ স্বাধীন হবার পর প্রত্যন্ত এই এলাকার মানুষদের চাষাবাদ ও বর্ষা মওসুমে চলাচরের সুবিধার জন্য খালগুলো খনন করা হয়েছিল। দীর্ঘদিন খালগুলোর কোন সংস্কার না করায় এখন সেগুলো মরা খালে পরিণত হয়েছে। আমরা খালের পাশের জমিতে এক ফসল ছাড়া চাষ করতে পারতাম না। কিন্তু নতুন করে খালগুলো খনন করায় আবার আমরা নব জীবন পেয়েছি। আমরা এই খালে জমা পানি দিয়ে এক ফসলের যায়গায় তিন ফসল চাষ করতে পারবো। গরীব অসহায় মৎস্যজীবিরা এই খাল থেকে মাছ ধরে জীবন ধারণ করতে পারবে। খালের পাড়ে বসবাসকারী রহিমা বিবি জানান, আমরা বাস্তহারা প্রায় ৩শত পরিবার দীর্ঘদিন যাবত এই খালের দুই পাড়ে ঘর-বাড়ি তৈরি করে বসবাস করছি। খাল খননের ফলে আমরা আরো অনেক জায়গা পাবো। সেখানে আমরা বিভিন্ন রকমের চাষাবাদ করতে পারবো। বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষের নওগাঁ জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল মালেক চৌধুরী জানান, দীর্ঘদিন এই খালগুলো এই এলাকার মানুষের কোন কাজেই আসেছি। খালগুলো ভরাট কারণে বিভিন্ন মওসুমে পানি পাওয়া যাচ্ছিল না। তাই খাল খননের ফলে এলাকার কৃষকদের আর পানির অভাব হবে না। তারা এক ফসলের জায়গায় তিন ফসল উৎপাদন করতে পারবে। স্থানীয় সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলম বলেন, আমরা এই প্রত্যন্ত এলাকার হাজার হাজার গরীব-অসহায় ও মৎস্যজীবি মানুষ নানা ভাবে এই খাল খননের ফলে উপকৃত হবে। খানগুলো নতুন করে খনন করা হলে খালের দুই পাশের প্রায় ২৪ হাজার হেক্টর জমিতে তিনটি ফসলের আবাদ করতে পারবে কৃষকরা যা আগে সম্ভব হতো না। খাল খননের ফলে পাড়ের প্রস্থ বেড়ে যাবে ফলে বসবাসের জন্য আরো দ্বিগুন পরিমাণ জায়গা পাবে বাস্তহারা পরিবারগুলো। খালে সব সময় পানি থাকার কারণে প্রাকৃতিক ভাবে চাষ হবে দেশি-বিদেশী প্রজাতির বিভিন্ন মাছ যা দ্বারা এই এলাকার মৎস্যজীবিরা জীবণ ধারণ করতে পারবে।
মন্তব্য চালু নেই