রাণীনগরে শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী চরক পূজা অনুষ্ঠিত
কাজী আনিছুর রহমান, রাণীনগর (নওগাঁ): গত সোমবার নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার মাধাইমুড়ি গ্রামে শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী চরক পূজা ও মেলা অনুষ্ঠিত হয়।
দুপুরের পর থেকেই দলে দলে আবাল, বৃদ্ধ, বনিতা, মহিলা-পুরুষ মাধাইমুড়ি শিব ও কালী মন্দীর প্রাঙ্গনে উপস্থিত হতে থাকে। বিকেল ৫ টার দিকে শুরু হয় চরক পূজার প্রস্ততি পর্ব। ৩০ ফুট উঁচু একটি শিশু গাছের মাথায় বাঁশ দিয়ে চরকী তৈরি করে তার এক মাথায় পূজারীর পিঠে বরশী ফুটিয়ে দড়ি দিয়ে বেঁধে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। আর বাঁশের অপর মাথায় দড়ি বেঁধে সে দড়ি গাছের নীচের দিকে আর একটি বাঁশ বেঁধে তার মাথায় বেঁধে দেওয়া হয়। তারপর ৭-৮ জন লোক মিলে নিচের বাঁশ ধরে সজরে ঘোরাতে থাকেন। তার পিঠে ও পায়ে বরশী ফুটিয়ে ঝুলিয়ে দেওয়া লোকটি চরক গাছে ঘুরতে ঘুরতে বাতাশা (চিনির তৈরী মিষ্টি) ছিটাতে থাকেন। ভক্তরা সে বাতাশা খুটে খুটে খান। সোমবার চরক গাছে ঝুলছেন ২ জন। তিনি রাজশাহী জেলার মতিয়া থানার বিলসিমলা গ্রামের সুশান্ত (৩৫) ও অজিদ চন্দ্র প্রামানিক বগুড়া জেলার নাগরকান্দি গ্রামে।
তারা জানান, এর আগেও এ বছর তারা বিভিন্ন এলাকায় ৩ বার চরক গাছে ঘুরছেন। এ বছর এমনিতেই মাধাইমুড়ি গ্রামে চরক গাছে ঘুরতে এসেছেন। তাদের শিক্ষাগুরু নাটোর জেলার সিংড়া থানার হাতিন্দা গ্রামের বাবুল চন্দ্র সরকার (সন্নাসী) জানান, সখ করে তারা আমার কাছ খেকে এ কাজ শিখেছেন।আমার শিক্ষাগুরু ছিলেন,নাটোর জেলার ভুজনগাছী গ্রামে সুশিল চন্দ্র মহন্ত। তিনার পিছনে সাত বছর ঘুরে আমাকে এ শিক্ষা দেন।
স্থানীয় ঠাকুর নারায়ন চন্দ্র চরক পূজার প্রধান পুরোহিত। তার সহযোগী চন্দন জানান, গত বছর পূজার শেষে পুকুরের পানিতে ডুবিয়ে রাখা চরক গাছটি (শিশু গাছ) আগের দিন রাতে তোলা হয়। তারপর থেকে চলে পূজা অর্জনা। চরক গাছটি যে গর্তে স্থাপন করা হয় সেখানে আগে পূজা দেওয়া হয়। তারপর চরক গাছের মাথায় বাঁশের চরকীতে পূজারীকে তুলে দেওয়ার আগে তাকে শীব-কালীর মন্দিরে নিয়ে ঠাকুরের মস্ত্র পাঠের সাথে সাথে তার পিঠে লোহার শিক দিয়ে তৈরি বরশী ফুটিয়ে তাতে দড়ি বেঁধে চরক গাছে ঝুলানো হয়। পূজার শেষে চরক গাছটি আবার পুকুরে ডুবিয়ে রাখা হয়।
মন্তব্য চালু নেই