রাণীনগরে জমে উঠেছে আখের বাজার ॥ চালান হচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে

নওগাঁর রাণীনগর রেলগেট সংলগ্ন একমাত্র আখের বাজার জমে উঠেছে। আখ চাষের জন্য বিখ্যাত রাণীনগর উপজেলা। এই আখ চালান হচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। এতে এলাকার অনেক বেকার খুজে পাচ্ছে তাদের কর্মসংস্থানের পথ। উপজেলার অধিকাংশ এলাকায় এই আখ উৎপাদিত হলেও উপজেলার বাহাদুরপুর, চকমনু, ত্রিমোহনী, চুনিয়াগাড়ী ও মিরাট গ্রামে এই আচাফ্যারাম ও বাবুলাল জাতের আখ উৎপাদনে বিখ্যাত।

এই দুই জাতের সুপ্রিয় আখের রস পাণ করার জন্য নিজ জেলাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় এই আখের কদর সর্বদাই। অনেক বছর পূর্বে হতেই এই গ্রামগুলোতে আখ চাষ করে আসছে এলাকার আখ চাষিরা। বছরের জুন হতে নভেম্বর মাস পর্যন্ত জমি হতে আখ কেটে বিক্রয় করার মৌসুম আর এই সময়ে প্রতিদিন ভোর হতে সকাল ১১ টা পর্যন্ত রাণীনগর রেলগেট সংলগ্ন আগের বাজারে চলে আখ বিক্রয়।

অধিকাংশ খুচরা আখ ব্যবসায়ীরা বছরের ছয় মাস আখের ব্যবসা করেন আর বাঁকী ছয় মাস অন্যান্য কাজ করে জীবন- যাপন করেন। খুচরা ভাবে আখ বিক্রয়ে লাভ অনেক দ্বিগুন হওয়াই বর্তমানে নওগাঁ জেলাসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার লোকদের কাছে এই ব্যবসা অনেকটাই জনপ্রিয়তার র্শীর্ষে।

জেলাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরা এসে এই বাজার থেকে আখ চাষীদের কাজ থেকে পাইকারি হিসাবে আখ ক্রয় করে নিয়ে গিয়ে দ্বিগুন মূল্যে বিক্রয় করেন বলে খুচরা আখ ব্যবসায়ীরা জানান।

বাজারে আখ বিক্রয় করতে আসা উপজেলার চকমুনু গ্রামের আখচাষী আব্দুল আলীম (৩৩) জানান, এই আখ চাষ তাদের পৈত্রিক পেশা। তিনি এই আখ মৌসুমে ১০ বিঘা জমিতে আখের চাষ করেছেন। নিজেদের চাহিদা পূরণ করে প্রতি বছর সব খরচ বাদ দিয়ে আখ বিক্রয় করে দ্বিগুন পরিমান অর্থ লাভ করেন যা এই সব উচু জমিতে অন্যান্য আবাদ চাষ করে লাভ করা সম্ভব নয়।

বাহাদুরপুর গ্রামের আখ চাষী আনিছুর রহমান (৪০) জানান, তিনি এবার ৭ বিঘা জমিতে আখের চাষ করেছেন। তবে আখ চাষের শুরুতেই যদি আকাশের বৃষ্টি পাওয়া যেত তাহলে আখের ফলন অন্যান্য বছরের তুলনায় আরও অনেক বেশি পাওয়া যেত বলে তিনি জানান।

চুনিয়াগাড়ী গ্রামের আখচাষী তছলিম উদ্দিন (৫০) জানান, তিনি এই মৌসুমে ৫ বিঘা জমিতে আখের চাষ করেছেন। জেলাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা আমাদের এই বাজার থেকে পাইকারি ভাবে আখ ক্রয় করে নিয়ে যায় বলে আমরা একটু লাভের মুখ দেখতে পাই। তিনি আরও জানান, বাজারে আমরা পাইকারি হিসাবে প্রতিটি ভাল আখ ৪ টাকা করে বিক্রয় করে থাকি যা খুচরা ব্যবসায়ীরা প্রতিটি আখ ১০-১৫ টাকা করে বিক্রয় করে থাকে।

উপজেলার দেউলিয়া গ্রাম হতে আখ কিনতে আসা খচরা ব্যবসায়ী রফিক জানান, তিনি দীর্ঘদিন যাবত এই আখের ব্যবসা করে আসছেন। তিনি প্রতিদিন খুব ভোর বেলায় এসে এই বাজার হতে পাইকারি ভাবে আখ ক্রয় করে নিয়ে গিয়ে এলাকার বিভিন্ন স্থানে ভ্যানে ফেরি করে খুচরা ভাবে বিক্রি করে দ্বিগুন মূল্যে। এত লাভ যা হয়তা দিয়ে সংসার চালিয়ে আসছেন আর বছরের বাকি সময় অন্যান্য দিনমজুরের কাজ করেন।

বাজারে আখ ক্রয় করতে আসা উপজেলার পশ্চিম বালুভরা গ্রামের বেকার যুবক জনি,খট্রেশ্বর গ্রামের রুবেল, চন্ডিপুর গ্রামের বিপ্লব, বাহাদুরপুর গ্রামের আশরাফুল ইসলামসহ অনেকেই জানান, বছরের এই কদিন দিনমজুর কাজের পরিমান অনেক কম থাকে তাই এই বাজার হতে কম মূল্যে আখ ক্রয় করে খুচরা ভাবে বিক্রয় করে সংসার চালিয়ে আসছি।

জেলার ফতেপুর বাজার মান্দা বাজার, বদলগাছী বাজার হতে আখ ক্রয় করতে আসা ব্যবসায়ী রফিকুল, জব্বার ও রহিম জানান, এই জাতের আখের চাহিদা ব্যবসায়ে লাভের পরিমাণ অনেক বেশি। যোগাযোগের ব্যবস্থা অনেক ভালো হওয়াই মিনি ট্রাক করে এসে আমরা পাইকারি আখ ক্রয় করে নিয়ে গিয়ে খুচরা ভাবে দ্বিগুন মূল্যে বিক্রয় করে থাকি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এসএম গোলাম সারোয়ার জানান, এই মৌসুমে উপজেলায় মোট ৪০ হেক্টর জমিতে আচাফ্যারাম ও বাবুলাল জাতের আগের চাষ হয়েছে। তবে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও কোন প্রকার পোকার আক্রমণ না থাকায় অন্যন্য বছরের তুলনায় এ বছর আখের ফলন খুবই ভালো হয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই