রাণীনগরে ঐতিহাসিক শাহ সুলতান বলখী মাহীসোয়ার (রঃ) কোচমুড়ী দরগা
দেশের বিভিন্ন স্থানে ঐতিহাসিক অনেক দরগা রয়েছে যা আমাদের কাছে পরিচিত নয়। তন্মধ্যে নওগাঁ জেলার রক্তদহ বিলের তিন’শত বছরের ঐতিহাসিক শাহ সুলতান বলখী মাহী সোয়ার (রঃ) আস্তানা কোচমুড়ী দরগা একটি অন্যতম। রক্তদহ বিলটি ১০ মাইল দৈর্ঘ্য ৪ মাইল প্রশস্ত । নওগাঁ জেলার রাণীনগর উপজেলা ও বগুড়া জেলার আদামদীঘি উপজেলা জোড়ে এ বিলটির অবস্থান। কোচমুড়ী দরগার চর্তুদিকে প্রায় হাজার বিঘা আবাদী জমি রয়েছে।
সরেজমিন জানা গেছে, নওগাঁ জেলার রাণীনগর উপজেলার পারইল ইউনিয়ন পরিষদের বেলঘড়িয়া গ্রামের বিলকৃষ্ণপুর বাজার হতে মাত্র ১০ কিঃ মিঃ পাকা রাস্তার যাতায়াত এ ঐতিহাসিক দরগা। বর্ষাকালে পানিতে নৌকায় যাতায়াত হয়। ১০৯৬ হিজরী (১৮৮৫ খ্রীঃ) শাহ সুলতান বলখী মাহী সোয়ার (রঃ) বগুড়ার মহাস্থান গড়ের সর্বশেষ রাজা পরশুরামর সঙ্গে যুদ্ধ করার উদ্দেশ্যে পানি পথে যাওয়ার জন্য একটি বিশাল মাছের পিঠে আহরন করে, যাত্রা পথে এ স্থানে কয়েক ঘন্টার জন্য অবতরন করেন ।
স্থানটি উক্ত বিলের জনশূন্য মাঝখানে এক বড় উচু মাটির স্থানে একটি বড় বটগাছের নিচে অবস্থিত । চর্তুদিকে পানি, তার সাথে বেশ কয়েকজন সাহাবা ছিলেন । এ স্থানে নামাজ শেষে বিশ্রামের পর উক্ত মাছের পিঠে চড়ে যাত্রা শুরু করেন মহাস্থানের পথে। এ যুদ্ধে পরশুরাম রাজাকে যুদ্ধে পরাজিত করে সর্ব প্রথম এদেশে ইসলামের বিজয় পতাকা উত্তোলন করেন । তখন থেকে এ স্থানটির নাম করণ করা হয় কোচমুড়ী দরগা । তিন শতাধিক বছরের ঐতিহাসিক বটগাছটি নেই । উক্ত বট গাছটির মঠে (ডাল) বর্তমান বটগাছটির জন্ম ।
এ গাছের গায়ে বেশ বড় ফোঁকর রয়েছে এবং এর নিচের গর্ত কতখানি তা জানা সম্ভব হয়নি । এ ফোঁকরটির নিচে সাপ বেজি একত্রে বসবাস করে । অনেকে এই বিষয়টিকে অলৌকিক মনে করেন । এ স্থানটি পূর্বে ও বর্তমানে কখনও বর্ষাকালে পানিতে ডুবেনি ।
সে সময় বর্ষাকালে বড় বড় পাল তোলা নৌকায় যাতায়াত ছিল। এই বিশাল বিলটি বন্যার পানির নিচে আর বন্যার পানির উপরে এ দরগাটি সর্বদাই ভাসতো বলে অনেকে আধ্যাত্মিক শক্তির পরিচয় বলে মনে করেন । প্রতি বছর বাংলা বৈশাখ মাসের শেষ বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার বার্ষিক ওরশ ও মেলা অনুষ্ঠিত হয় । শত শত বিভিন্ন ধর্মের নারী পুরুষ ভক্তদের আগমন ঘটে।
সবাই একত্রে নামাজ পড়ে মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন তাদের বাসনা পূরনের জন্য। ঐতিহাসিক দরগাটি বর্তমানে বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত। স্থানটির পবিত্রতা রক্ষার জন্য চর্তুদিকে পাকা প্রাচীর বেষ্টিতকরন, মহিলাদের জন্য পৃথক প্রাচীর, একটি আধুনিক বিশ্রামাগার, তিনটি টিউবওয়েল পানি ব্যবহারের জন্য অতি জরুরী ।
দরগাটির সাথে সংযুক্ত প্রায় ১ কিঃ মিঃ কাঁচা রাস্তাটি পাকা করা প্রয়োজন । অবিলম্ভে বহিরাগতদের প্রতি অবহেলিত এ ঐতিহাসিক দরগাটিকে অতি আর্কষনীয় করার জন্য বর্তমান গনতান্ত্রিক সরকার, ধর্ম মন্ত্রনালয়, নওগাঁ জেলা ও রাণীনগর উপজেলা প্রশাসন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, আর্ন্তজাতিক ইসলামি সংস্থা ও বিভিন্ন দাতা সংস্থার কাছে সংশ্লিষ্টদের দাবী ।
মন্তব্য চালু নেই