রাজবাড়ীর পাংশায় আরেক ‘ফারাক্কা !’

ফারাক্কার মতো গঙ্গায় ‘গঙ্গা ব্যারেজ নামের আরেকটি বাঁধের পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। রাজবাড়ী জেলার পাংশায় পদ্মা নদীতে এ ব্যারেজ নির্মাণের জন্য সম্ভাব্য স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। ৩২ হাজার কোটি টাকা খরচ হবে এ ব্যারেজ নির্মাণে। গঙ্গা ব্যারেজের ব্যাপক সমীক্ষার আলোকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আবার বিশেষজ্ঞরা বলছেন এতো টাকা দিয়ে এ ব্যারেজ নির্মাণ করলেও কোনো উপকারেই আসবে না। উল্টো হারিয়ে যাবে পদ্মার মূলধারা। জানা গেছে, প্রস্তাবিত মূল ব্যারেজটি বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত থেকে ৮২ কিলোমিটার ভাটিতে এবং হার্ডিঞ্জ ব্রিজ (পাকশী ব্রিজ) ও রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে ৫২ কিলোমিটার ভাটিতে অবস্থিত। সঠিক সময়ে অর্থের সংস্থান হলে আগামী ৫ বছরে গঙ্গা ব্যারেজ নির্মিত হবে। তবে এ প্রকল্পে চীন ও মালয়েশিয়া আগ্রহ প্রকাশ করছে।

গঙ্গা ব্যারেজ সম্পর্কে পানিসম্পদমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ জানান, ‘প্রকল্পটি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে। এ প্রকল্পে ৩২ হাজার কোটি টাকা ব্যায় ধরা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘গঙ্গা ব্যারেজ করে দেশের এক-তৃতীয়াংশে ইকোলোজিক্যাল ব্যালেন্স আনা সম্ভব হবে। সুন্দরবন রক্ষা, লবণাক্ততা দুরিকরণ, আর্সেনিক কমানো, ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি, শতাধিক ছোট বড় নদীতে শুষ্ক মৌসুমে পানি পৌঁছে দেয়া সম্ভব হবে।’
বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের মধ্যে শুকনো মৌসুমে ফারাক্কা পয়েন্টে গঙ্গা নদীর পানি বণ্টনের লক্ষ্যে ১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর ত্রিশ বছর মেয়াদী এক ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। গঙ্গা চুক্তির আলোকে প্রাপ্ত গঙ্গার পানির সমন্বিত ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বৃহত্তর রাজশাহী, কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনা, ফরিদপুর ও বরিশাল অঞ্চলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, দারিদ্র বিমোচন এবং পরিবেশ সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে গঙ্গা ব্যারেজ নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশে গঙ্গার পানি নির্ভর এলাকা ৪৬ হাজার বর্গকিলোমিটার। গ্রোস উপকৃত এলাকা ৫১ দশমিক ৮৮ হেক্টর, চাষযোগ্য এলাকা ২৮ দশমিক ৭৭ হেক্টর এবং সেচযোগ্য এলাকা ১৯ হেক্টর। গঙ্গা ব্যারেজ ২ হাজার ৯শ মিলিয়ন ঘনমিটার পানি ধারণযোগ্য একটি বিশাল জলাধার সৃষ্টি করবে। জলাধারটি পাংশা থেকে পাংখা পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। যার দৈর্ঘ্য হবে ১৬৫ কিলোমিটার।

ব্যারেজটি সম্পন্ন হলে গঙ্গা নির্ভর এলাকায় ১২৩টি আঞ্চলিক নদীতে পানি পৌঁছে দেয়া সম্ভব হবে। এছাড়া জলাধারের পানি  প্রকল্প এলাকায় সারা বছর সেচ, ইলিশসহ মৎস্য সম্পদ উন্নয়ন, ১১৩ মেগাওয়াট পানিবিদ্যুৎ উৎপাদন, নৌ-পরিবহণ, লবণাক্ততা নিয়ন্ত্রণ, জলাবদ্ধতা সমস্যা নিরসন এবং প্রকল্প এলাকায় প্রাকৃতিক ভারসাম্য পুনরুদ্ধারসহ সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য ও বনজ সম্পদ রক্ষার কাজে ব্যবহৃত হবে বলে প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে।



মন্তব্য চালু নেই