রাজনৈতিক অস্থিরতায় বাতিল হচ্ছে হিমায়িত মাছের রফতানি আদেশ

মোঃ বদরুজ্জামান, বিশেষ প্রতিনিধি, সাতক্ষীরা : এবার দেশে সাদা সোনা হিসাবে বিবেচিত চিংড়ি উৎপাদন ভালো হলেও বিদ্যমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় রফতানি পণ্য হিমায়িত মাছের বিদেশী ক্রেতারা সরে যাচ্ছে। তারা একের পর এক রফতানি আদেশ বাতিল করে দিচ্ছে। মূলত নির্দিষ্ট সময়ে সরবরাহ করতে না পারার কারণেই এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। অথচ এদেশ থেকে চিংড়ি রফতানি করে গত ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৪ হাজার ২৯১ কোটি টাকা আয় করেছিল। কিন্তু এবার বছরের শুরুতেই টানা অবরোধ ও হরতালে এদেশের দ্বিতীয় রফতানি আয়ের এ খাত হুমকির মুখে পড়েছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশ ও উৎপাদকরা। হিমায়িত খাদ্য রফতানিকারকদের সূত্রে এ তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশের সাতক্ষীরা, খুলনা, কক্সবাজার, চকরিয়াসহ নোয়াখালীর চরাঞ্চলের বিভিন্ন ঘেরে এবার বিপুল পরিমাণে উৎপাদন হচ্ছে সাদা সোনা খ্যাত বাগদা চিংড়ি। এসব চিংড়ি রফতানি করে বাংলাদেশ প্রতিবছরই বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে থাকে। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতায় এবারের চিত্র পাল্টে যাচ্ছে। হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে হিমায়িত মাছের বাজার। যথাসময়ে পণ্য রফতানি করতে না পারায় ক্রেতারা একের পর এক রফতানি আদেশ বাতিল করছে। ইতিমধ্যে গত ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি মাস পর্যন্ত সময়ে প্রায় ১১ মিলিয়ন ডলার মূল্যের হিমায়িত মাছ রফতানি কমে গেছে। আর রাজনৈতিক এ ধারা অব্যাহত থাকলে চিংড়ি মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আয় তো দূরের কথা, বরং উৎপাদক ও রফতানিকারকদের পথে বসতে হবে। ইতিমধ্যে তার নমুনা দেখা দিতে শুরু করেছে। সূত্র জানায়, গত ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এদেশে প্রায় ৫৫ হাজার মেট্রিক টন চিংড়িসহ বিভিন্ন জাতের মাছ উৎপাদন হয়েছিল। এর মধ্যে শুধুমাত্র চিংড়িই উৎপাদন হয়েছিল ৪৯ হাজার ৫৬৭ মেট্রিক টন। এসব মাছ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রফতানি করে ৫ হাজার ১০৫ কোটি টাকা আয় হয়েছল। আর শুধুমাত্র চিংড়ি রফতানি করে আয় হয়েছিল ৪ হাজার ২৯১ কোটি টাকা। আর এর আগের অর্থবছর অর্থাৎ ২০১২-১৩ অর্থবছরে চিংড়িসহ বিভিন্ন জাতের মাছ রফতানি করে আয় হয়েছিল ৪ হাজার ২৪২ কোটি টাকা। সূত্র আরো জানায়, রাজনৈতিক অস্থিরতা অব্যাহত থাকায় বিদেশী ক্রেতারা এদেশ থেকে মাছ নেয়া কমিয়ে দিয়েছ। ইতিমধ্যে বিদেশী ক্রেতারা এদেশ থেকে মাছ কেনার আদেশ বাতিল করে প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে মাছ আমদানি শুরু করেছে। আর এ ধারা অব্যাহত থাকলে স্বল্পসময়ের মধ্যেই বাংলাদেশের রফতানি আয়ের দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা হিমায়িত মাছ শিল্প আন্তর্জাতিক বাজার হারাবে বলে মনে করছেন রফতানিকারকরা। তাদের মতে, অবরোধ-হরতালের কারছে পরিবহন ব্যবস্থা হযবরল হয়ে পড়েছে। ফলে নির্দিষ্ট সময়ে রফতানি পণ্য জাহাজিকরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এভাবে একের পর এক রফতানি আদেশ বাতিল হলে ব্যবসায়ীদের পক্ষে ব্যাংক ঋণই শোধ করা সম্ভব হবে না। অথচ চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে নিরবচ্ছিন্নভাবে এদেশ থেকে হিমায়িত মাছ রফতানি হলেও গত জানুয়ারি মাস থেকেই অবরোধ ও হরতালের কারণে এখন এ খাতটি হুমকির মুখে পড়েছে। বিভিন্ন জেলায় উৎপাদিত মাছ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে পৌঁছানো যাচ্ছে না। ফলে একদিকে কাঁচামাল সঙ্কট সৃষ্টি হচ্ছে, অন্যদিকে ঘেরে উৎপাদিত মাছ বিক্রি করতে না পারায় মাঠপর্যায়ের খামারিরা লোকসানের মুখে পড়ছে। গত জানুয়ারি মাসে এদেশ থেকে হিমায়িত মাছ রফতানি হয়েছে মাত্র ৪২ দশমিক ৫৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ফলে এক মাসের ব্যবধানে প্রায় ১০ দশমিক ৮২ মিলিয়ন ডলারের মাছ রফতানি কমে যায়। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ হিমায়িত খাদ্য রফতানিকারক সমিতির সহসভাপতি আশরাফ হোসেন মাসুদ জানান, হিমায়িত মাছ শিল্প রফতানিতে বড় ধরনের সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে কাঁচামালের অভাবে প্রক্রিয়াজাত কারখানাগুলো বন্ধ রয়েছে। কোনো কাজ ছাড়াই ওসব কারখানার মালিকদের শ্রমিকদের বেতন দিতে হচ্ছে। আর এ ধারা অব্যাহত থাকলে শিগগিরই মাছ প্রক্রিয়াকরণ কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। পাশাপাশি বিশ্ববাজার থেকে হারিয়ে যেতে পারে এদেশের হিমায়িত মাছ রফতানিও।



মন্তব্য চালু নেই