রাজধানীতে ভয়াবহ যানজট, পায়ে হেঁটে গন্তব্যে

বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের সমাবেশকে কেন্দ্র করে সংশ্লিষ্ট এলাকার বেশ কয়েকটি সড়কে গাড়ি চলাচল সীমিত থাকার কারণে এর প্রভাব পড়ছে রাজধানীর অন্য সড়কগুলোতে।

দুপুরের পর থেকে সমাবেশের কারণে নির্ধারিত রুটের পরিবর্তে বিকল্প সড়কে একাধিক রুটের যানবাহন প্রবেশের কারণে সৃষ্টি হয়েছে ভয়াবহ যানজটের। ধীরে ধীরে তা বিস্তৃত হয়ে পড়ছে রাজধানীর অন্য এলাকগুলোতেও। গাড়ির গতি থমকে যাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছে রাজধানীবাসী।

কর্মব্যস্ত দিন হওয়ার কারণে যানজটে ভোগান্তির মাত্রা বেশি হচ্ছে বলে মনে করছেন ভুক্তভোগীরা। সংসদ ভবন এলাকা, মাহাখালী, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজারে, শাহবাগ, সায়েন্সল্যাব এলাকাসহ অনেক এলাকায় যানবাহনের তীব্র সংকটে মানুষ পায়ে হেঁটে পাড়ি দিচ্ছে গন্তব্যে।

রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে যানজটে আটকা পড়ে একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা জামসেদ মোল্লা বলেন, ‘বন্ধের দিন হলে যানজট হলেও তাড়া থাকত না। কারণ একঘণ্টা পরে গেলেও সমস্যা হতো না। কিন্তু অফিসডে হওয়ার কারণে যানজট মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।’

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বড় কোনো সমাবেশ থাকলেই বরাবর যানজটের ভোগান্তিতে পরে রাজধানীবাসী। মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের সমাবেশকে কেন্দ্র করে এই বিষয়টি নিয়ে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছিলেন, ‘১০ জানুয়ারি ঢাকার সকল এলাকা থেকেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মিছিল আসবে। সেদিন রাস্তায় জনদুর্ভোগ সহনীয় রাখার চেষ্টা আমাদের করতে হবে। সম্পূর্ণ রাস্তায় মিছিল না করে রাস্তার একপাশে মিছিল করলে যানবাহন চলাচল করতে পারবে। এতে মানুষের ভোগান্তি কম হবে। জনগণ দুর্ভোগের শিকার হলে দলের জন্য ইতিবাচক হবে না।’

নগরবাসী যাতে যানজটে না পড়ে সেজন্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের আন্তরিকতা থাকলেও শেষ পর্যন্ত যানজটে পড়তে হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে যানবাহনের সংকটের কারণে বাধ্য হয়ে পায়ে হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছাচ্ছেন মানুষ। বয়স্ক, শিশু আর নারীরা পড়েছেন আরো বিপদে। গণপরিবহন তো নেই-ই, উপরন্তু রিকশারও দেখা মিলছে না।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মঙ্গলবার দুপুর ২টা থেকে আওয়ামী লীগের সমাবেশ শুরুর কথা থাকলেও নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে আসতে শুরু করেন দুপুর ১২টার পর থেকে। সকালের দিকে যানবাহনের গতি অনেকটা স্বাভাবিক থাকলেও সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন এলাকায় মাঝারি ধরনের যানজট দেখা দেয়। বেলা যত গড়াতে থাকে যানজট ততই বাড়তে থাকে।

শাহবাগ থেকে মৎস্য ভবনের দিকে সড়কটি সমাবেশের কারণে যান চলাচল বন্ধ থাকায় বিপদে পড়েন ওই সড়কে চলাচলকারীরা। রাস্তার দুই ধারের ফুটপাথ ধরে অসংখ্য মানুষকে পায়ে হেঁটে মৎস ভবন হয়ে গুলিস্তানের দিকে যেতে দেখা গেছে।

রাজধানীর মতিঝিল থেকে বারডেম হাসপাতলে এসেছিলেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত জোবায়ের হোসেন। তিনি জানান, বাস বা রিকশা না পেয়ে তিনি পায়ে হেঁটেই মতিঝিল আসেন।

ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বেলা ১টার পর থেকে কিছু সড়কে সাধারণ যানবাহন চলাচল বন্ধ করে বিকল্প পথ অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশ শেষ না হওয়া পর্যন্ত শাহবাগ ক্রসিং হতে মৎস্য ভবন পর্যন্ত এবং টিএসসি থেকে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত সড়কটির উভয় পাস বন্ধ থাকবে। বেলা একটা থেকে সাধারণ যাত্রীবাহী বাস ও অন্য যানবাহনগুলোকে মৎস্য ভবন, শাহবাগ ও বাংলামোটর এলাকা এড়িয়ে চলতে কিছু বিকল্প পথ বাতলে দিয়েছে পুলিশ। এর মধ্যে বিজয় সরণি (উত্তর ও পশ্চিম দিক থেকে আসা) সিগন্যাল হয়ে ফার্মগেট-শাহবাগ অভিমুখী গাড়িগুলোকে তেজগাঁও লাভ রোড হয়ে মগবাজার ফ্লাইওভারের ওপর দিয়ে যেতে বলা হয়েছে। ফিরতি পথে গুলিস্তান-মতিঝিলের দিক থেকে আসা বিজয় সরণি অভিমুখী গাড়িগুলোকেও একই পথ ধরতে বলা হয়েছে।

গাবতলী থেকে আসা গাড়িগুলোকে সায়েন্সল্যাব-নিউমার্কেট হয়ে গুলিস্তান-মতিঝিল-সদরঘাটে যেতে বলা হয়েছে। ফিরতি পথেও গাড়িগুলোকে একইভাবে বঙ্গবাজার দিয়ে চানখাঁরপুল হয়ে সায়েন্স ল্যাব-মিরপুর রোডে চলতে বলা হয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই