রাজধানীতে ফুটপাথ দখলে চলছে নতুন ভাগবাটোয়ারা

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ উপলক্ষে রাজধানীতে রাস্তা সংস্কার, ফুটপাত দখলমুক্ত হওয়ায় নগরবাসী ছিলেন স্বস্তিতে। কিন্তু টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার পরপরই ফের পুরনো চেহারায় রাজধানীর মিরপুর। বিশ্বকাপ ঘিরে যেসব সড়ক সংস্কারের পর চকচক করছিল, সেই সড়কের অধিকাংশ নতুনভাবে দখল হয়েছে। আর ফুটপাত ঘিরে এই বাণিজ্যে সরকারদলীয় লোকজন, বিরোধী দলের নেতাকর্মী, পুলিশ প্রশাসন- কেউ পিছিয়ে নেই।

সরেজমিন রাজধানীর মিরপুরের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা যায়, বিশ্বকাপের পরপরই প্রশস্ত সড়কের ফুটপাত দখল হয়ে গেছে। কোনো কোনো এলাকায় সরকারদলীয় সংগঠনের সাইনবোর্ড বসিয়ে ফুটপাতের জায়গায় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান খোলা হয়েছে। ফুটপাতের এসব দোকান থেকে দিনে ৫০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়। ‘লাইনম্যান’ হিসেবে পরিচিত ব্যক্তিরা এসব টাকা তুলে থাকে। রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর থেকে মিরপুর ১৪ নম্বর পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পরপরই ফুটপাতে দোকান বসেছে। মিরপুর-২ নম্বরে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের সামনের ফুটপাত দখল হয়ে গেছে। মিরপুর-১ নম্বর কাঁচাবাজার ঘিরে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার চাঁদা আদায় হয়। সেখানে সক্রিয় একাধিক গ্রুপ। মিরপুর কমার্স কলেজ সংলগ্ন চেতনা মডেল একাডেমির সামনের সড়কের একটি বড় অংশ দখল করে কাঠের ১২টি দোকান বসানো হয়েছে। বাস্তুহারা লীগের সাইনবোর্ড বসিয়ে সেখানে চলছে রমরমা বাণিজ্য। এ ছাড়া মিরপুর ১০ নম্বর বি ব্লকের হোপ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের সামনের দু’পাশের ফুটপাতে বসেছে তিন শতাধিক দোকান। সেখানে ফুটপাতের পুরোটাই দখল হওয়ায় আশপাশের অন্তত ১৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিশু-কিশোরদের নিয়ে অভিভাবকরা মূল সড়ক হয়েই রাস্তা পার হয়ে থাকেন। এতে প্রায়ই সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে।

এ ছাড়া মিরপুর-১৪ নম্বর থেকে ভাসানটেক পর্যন্ত ১২০ ফুট প্রশস্ত সড়কের উভয় পাশেই সহস্রাধিক দোকান বসানো হয়েছে। এতে সড়কের ৮০ ফুট ইতিমধ্যে দখল হয়ে গেছে। সেখানে প্রতি দোকানের মাসিক ভাড়া ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা। রাস্তার ওপর অবৈধ এসব দোকানের অধিকাংশের মালিক ভাসানটেক থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ ও তার সাঙ্গোপাঙ্গ। এ ছাড়া স্থানীয় জলিল, সিরাজ, বকুল, কবির মহাজন, বকুলের ভাই জাহাঙ্গীর ওরফে কানা জাহাঙ্গীর, রিয়াজ, কাঁকন, সজীব, গোলাপ, সালাম, ইব্রাহিমের বড় ভাই মজিবর এসব দোকান বসিয়েছেন। ইব্রাহিম বর্তমানে কারাবন্দি থাকলেও তার লোকজন নিয়মিত এসব দোকান থেকে প্রতি মাসে টাকা তোলে। এ ছাড়া ফুটপাতের দোকানের মোটা অঙ্কের টাকার ভাগ কাফরুল থানার ছাত্রলীগের সাবেক সেক্রেটারি ভুট্টো, আওয়ামী লীগ নেতা জুলহাস হোসেন, সৈনিক লীগের মামুন, যুবলীগের নুর হোসেন জাহাঙ্গীরসহ অনেকে পান বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনকি ডেন্টাল ও হোমিওপ্যাথি কলেজের ছাত্রনেতাদের পকেটে চাঁদার টাকা পৌঁছার অভিযোগ রয়েছে। ভাসানটেক এলাকায় রাস্তার দু’পাশ দখল হওয়ায় ওই এলাকায় ডেন্টাল কলেজ, সিআরপি, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, ফিন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট একাডেমিসহ বেশ কিছু সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সাধারণ পথচারীদের বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে।

সরেজমিন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ফুটপাতকেন্দ্রিক চাঁদা সাধারণত তিনটি ভাগে বণ্টন হয়। আদায়কৃত চাঁদার মধ্যে স্থানীয় পুলিশ পায় ৩০ শতাংশ ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের গ্রুপ ৩০ শতাংশ পায়। বাকি ৪০ শতাংশ ‘ফুটপাত মালিকের।’ তবে ক্ষমতার পালাবদলে ফুটপাতের নিয়ন্ত্রণও হাতবদল হয়। এমনকি ফুটপাতের টাকার ভাগ অনেক শীর্ষ সন্ত্রাসী আর নেতাদের পকেটেও চলে যাচ্ছে।



মন্তব্য চালু নেই