রহস্যজনক ফোন পেয়ে আশা দেখছেন আলোচিত সেই জোহার পরিবার

পাঁচ দিনে খোঁজ না মিললেও ‘একটি ফোন পেয়ে’ তথ্য প্রযুক্তি ‘বিশেষজ্ঞ’ তানভীর হাসান জোহাকে ফিরে পাওয়ার আশায় আছে তার পরিবার।

এজন্য থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে গিয়েও করেননি বলে জানিয়েছেন তানভীরের চাচা, বাংলাদেশ টেলিভিশনের সাবেক উপ-মহাপরিচালক মাহবুবুল আলম।

কারা ফোনটি করেছিল- এই প্রশ্নে উত্তর এড়িয়ে তিনি বলেন, একটা ফোন আসার পরেই আমরা জিডি না করে চলে আসি। আমরা আশায় আছি। ছেলের যেন কোনো সমস্যা না হয়, সেভাবেই আমাদের এগুতে বলেছেন জোহার মা। এ বিষয়ে আমরা সজাগ।

গত ১৬ মার্চ মধ্যরাতে তুলে নেওয়ার পর উদ্ধারে পুলিশের সহযোগিতা না পাওয়ার অভিযোগ তুলেছিল তানভীর জোহার পরিবার। শনিবার ভাষানটেক থানায় জিডি করতে গিয়েও না করে ফিরে আসেন তারা।

ভাষানটেক থানার ওসি মো. নজরুল ইসলাম বলেন, “তানভীরের পরিবারের কয়েকজন সদস্য বিকাল পৌনে ৫টায় জিডি করতে থানায় এসেছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করে তাদের কাছে একটা ফোন আসে। এরপর তারা জিডি না করে চলে যান।”

মুখ খুলতে না চাইলেও তানভীরের পরিবারের সদস্যদের কথায় ইঙ্গিত মিলছে, বিভিন্ন সময়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিভিন্ন বাহিনীকে সহায়তা দিয়ে আসা তানভীর কোনো বাহিনীর কাছেই রয়েছে বলে তাদের ধারণা।

“কেউ বলছেন, তাকে দুই-তিন দিনের মধ্যে ছেড়ে দেওয়া হবে। কেউ বলছেন তাকে একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হবে। বিভিন্ন মাধ্যমে এ ধরনের নানা কথা শোনা যাচ্ছে,” বলেন মাহবুবুল।

তবে কোনো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীই তানভীরকে আটকের কথা স্বীকার করেনি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরির মামলার তদন্তে থাকা সিআইডি বলছে, তারা তানভীরকে খুঁজছে।

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মীর্জা আব্দুলা হেল বাকী সোমবার বলেন, “যেহেতু জোহা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে বলেছেন, তিনি জানেন কারা এর সঙ্গে জড়িত। এখন তার প্রয়োজন খুব। তাকে পেলে তদন্তে অনেক উপকার হবে।”

রিজার্ভের অর্থ চুরির আলোচিত ঘটনার তদন্তের নানা দিক নিয়ে গণমাধ্যমে ‘বিশেষজ্ঞ’ পরিচয়ে মতামত দেওয়ার এক পর্যায়ে ঢাকা সেনানিবাস এলাকা থেকে তানভীর জোহাকে তুলে নেওয়া হয় বলে তার সঙ্গী এক বন্ধু জানান।

পরদিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন, রিজার্ভ চুরির তদন্তে সন্দেহভাজনদের আটক করছে পুলিশ। তবে এদের মধ্যে তানভীর জোহা রয়েছেন কি না, তা উনি জানেন না।

মাহবুবুল বলেন, “যেহেতু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এক বক্তব্যে জোহার প্রসঙ্গ এনেছেন, তাহলে বিষয়টি তার নলেজে আছে। এজন্য আমরা সবাই আশাবাদী।”

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তানভীর জোহাকে আটকের খবর স্বীকার না করলেও একটি বাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “সে তো অত বড় কেউ না। দেখবেন কয়েকদিনের মধ্যে তাকে পাওয়া যাবে।”

সোমবার দুপুরে তানভীর জোহার কলাবাগানের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার জন্য উদ্বিগ্ন পরিবারের সদস্যরা।

মাহবুবুল বলেন, “পরিবারের সব সদস্য মুষড়ে পড়েছেন এবং তার মা খাওয়া প্রায় ছেড়ে দিয়েছেন। খালি ছেলেকে চাইছেন।”

তানভীরের স্ত্রী কামরুন নাহার একজন চিকিৎসক। তিনি বলেন,তার স্বামী বাংলাদেশের প্রতিটি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গেই তথ্য প্রযুক্তি সহায়তা দিতে কাজ করেছেন। বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে প্রশিক্ষক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।

সরকারের আইসিটি বিভাগের সাইবার সিকিউরিটি ফোকাল পয়েন্টের কর্মকর্তা পরিচয়ে সম্প্রতি রিজার্ভ চুরির তদন্তের নানা বিষয়ে গণমাধ্যমে কথা বলছিলেন তানভীর জোহা।

এরপর আইসিটি বিভাগ থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে তানভীরের সঙ্গে বিভাগের কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতার খবর নাকচ করা হয়। তখন তানভীর বলেন, তিনি আগে এই বিভাগের কাজে যুক্ত ছিলেন।

তানভীর বর্তমানে ইনসাইট বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠানের ভাইস চেয়ারম্যান। এর কার্যালয় ঢাকার মিরপুরে। -বিডিনিউজ



মন্তব্য চালু নেই