রমজানে ‘জঙ্গি ষড়যন্ত্র’ ঠেকাতে সতর্ক পুলিশ

দেশে ধারাবাহিক হত্যার ‘ষড়যন্ত্র’ পবিত্র রমজানে যেন নতুন কোনো মাত্রা যোগ করতে না পারে সেজন্য পুলিশের সব সদস্যকে সতর্ক করে দিয়েছে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। পুলিশ বলছে, রমজানে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপত্তিকর মন্তব্য ও গুজব ছড়িয়ে নৈরাজ্য তৈরির চেষ্টা করা হয়।

সম্প্রতি দেশে বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের পর আইএস ও আল-কায়েদার নামে দায় স্বীকারের ঘটনায় দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। রমজানে এই ‘ষড়যন্ত্র’ ভিন্ন কৌশলে চালানো হতে পারে।

মঙ্গলবার (২৫ মে) পুলিশ সদর দপ্তরে আসন্ন রমজান ও ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে আইন-শৃঙ্খলা এবং ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত এক সভায় বক্তারা ওইসব মন্তব্য করেন।

সভা সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হকের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠনের কার্যক্রম নিবিড় পর্যবেক্ষণ এবং গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সভায় পুলিশের চাঁদাবাজিসহ সব ধরনের চাঁদাবাজি বন্ধের ব্যাপারে কঠোর নির্দেশ দেন আইজিপি।

তিনি বলেছেন, রমজান ও ঈদকে কেন্দ্র করে সব ধরনের চাঁদাবাজি বন্ধে পুলিশ কর্মকর্তাদের তৎপর থাকতে হবে। ফরমালিন ও রাসায়নিক উপাদান মিশ্রিত ফল বিরোধী মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ভেজালহীন খাদ্য নিশ্চিত করতে হবে। সমাজের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে সঙ্গে নিয়ে মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। জনগণের সঙ্গে পুলিশের দূরত্ব কমাতে কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান আইজিপি।

সভায় এ কে এম শহীদুল হক সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া মহাসড়কে তল্লাশির নামে যানবাহন না থামানো, মহাসড়কে ডাকাতি প্রতিরোধ এবং যানজট নিরসনে হাইওয়ে ও জেলা পুলিশকে বিশেষ তৎপর থেকে দায়িত্ব পালন করার নির্দেশ দিয়েছেন। মহাসড়কে ঈদের সময় যেন নসিমনসহ ধীরগতির যানবাহন না চলে সে ব্যাপারে আগাম পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশও দেন আইজিপি।

সূত্র জানায়, সভায় বর্তমান সময়ের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং ঈদের আগে কোন ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা হতে পারে এসব বিষয়ে আলোচনা করেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

তারা বলেন, সম্প্রতি ভিন্ন মতাদর্শী ও বিদেশিদের ওপর হামলা করে বিদেশি জঙ্গি সংগঠনের নামে দায় স্বীকারের ঘটনা বেড়েছে। এটি ‘রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র’ বলে মন্তব্য করেন তারা।

উর্ধতন কর্মকর্তারা বলেন, পবিত্র রমজান মাসে এমন ‘অরাজক ঘটনা’ ঘটিয়ে সরকার ও প্রশাসনকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা হতে পারে। তাই জঙ্গিদের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করে আগাম ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। গোয়েন্দা তৎপরতার পাশাপাশি অভিযান বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেন পুলিশ কর্মকর্তারা।

সভার শুরুতে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (গোপনীয়) মো. মনিরুজ্জামান পবিত্র রমজান ও ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে সভাকে অবহিত করেন। সভায় পবিত্র রমজান মাসের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা, ট্রেন, বাস ও নৌপথে নিরাপদ চলাচল ও যাত্রীদের নিরাপত্তা, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনা, ঈদ জামায়াতের নিরাপত্তা এবং জাল টাকার অপব্যবহার রোধ ইত্যাদি সম্পর্কে বিশদ আলোচনা করা হয়।

সভায় ঢাকা মহানগরসহ সারাদেশে চাঁদাবাজি, ছিনতাই ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ রোধে বিশেষ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। রেলওয়ে স্টেশন, বাস ও লঞ্চ টার্মিনালে পকেটমার ও অজ্ঞান পার্টির তৎপরতা প্রতিরোধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিয়োজিত থাকবেন। ঢাকা মহানগরীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের বড় বড় শহরে বিপণী বিতান ও শপিংমল যথাসম্ভব সিসিটিভির আওতায় এনে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হবে। জনসাধারণের কেনা-কাটার সুবিধার্থে এবং তারাবির নামাজের সময় অপরাধমূলক তৎপরতা প্রতিরোধে গভীর রাত পর্যন্ত নৈশ টহলের ব্যবস্থাও করা হবে। ব্যাংক ও অর্থলগ্নী প্রতিষ্ঠানে বড় অংকের আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে পুলিশ জনসাধারণকে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করবে। মহাসড়কে ডাকাতি প্রতিরোধ এবং যানজট নিরসনে হাইওয়ে এবং জেলা পুলিশ বিশেষ তৎপর থেকে দায়িত্ব পালন করবে।

সভায় আরো বলা হয়, রেলওয়ে স্টেশন, বাস ও লঞ্চ টার্মিনালে টিকেট কালোবাজারী প্রতিরোধে পুলিশ, মালিক ও শ্রমিক নেতৃবৃন্দ এবং কমিউনিটি পুলিশের সমন্বয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। জাতীয় ঈদগাহ ময়দানসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের ঈদ জামাতস্থলে পর্যাপ্ত নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। রমজান, ঈদ এবং ঈদ পরবর্তী আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সার্বিক সমন্বয়ের লক্ষ্যে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স, প্রতিটি জেলা ও ইউনিটে কন্ট্রোল রুম চালু থাকবে।

সভায় অতিরিক্ত আইজিপি (অ্যাডমিন অ্যান্ড অপস) মো. মোখলেসুর রহমান, সিআইডির অতিরিক্ত আইজিপি শেখ হিমায়েত হোসেন, রেলওয়ে রেঞ্জের অতিরিক্ত আইজিপি মো. আবুল কাশেম, এপিবিএন’র অতিরিক্ত আইজিপি মো. সিদ্দিকুর রহমান, ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া, সব পুলিশ কমিশনার, রেঞ্জ, হাইওয়ে, রেলওয়ে, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ, নৌপুলিশসহ অন্যান্য ইউনিটের ডিআইজি, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ র‌্যাব, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা, আনসার এবং বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রতিনিধিরা উপস্থিতি ছিলেন।



মন্তব্য চালু নেই