রমজানের প্রথম তারাবি নামাজে মুসল্লিদের ঢল

শুক্রবার পবিত্র রমজান মাস। বৃহস্পতিবার রাতে প্রথম তারাবি নামাজের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে পবিত্র মাহে রমজানের আনুষ্ঠানিকতা। আজ শেষ রাতে সেহরি খাবেন মুসলমানগণ।

তারাবির নামাজ উপলক্ষে ঢাকাসহ সারা দেশে মসজিদে মুসল্লিদের ঢল নামে। ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ পাড়া-মহল্লার কোনো মসজিদেই তিল ধারণের জায়গা নেই। বেশ কিছু মসজিদে বাইরে সামিয়ানা টাঙিয়ে তারাবির নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কোনো কোনো মসজিদের আঙিনা ছাড়িয়ে রাস্তায় জায়নামাজ, চাদর ও পাটি বিছিয়ে মুসল্লিদের তারাবির নামাজ আদায় করতে দেখা গেছে।

প্রতিবছরের মতো এবারও রমজান মাসে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে খতম তারাবিহ হয়েছে। আজ প্রথম দিনে পবিত্র কোরআনের প্রথম পারা থেকে পাঠ শুরু করে প্রথম দেড় পারা পর্যন্ত পড়া হয়।

বায়তুল মোকাররম মসজিদ কমিটি সূত্র জানায়, খতম তারাবিহ নামাজে ষষ্ঠ দিন পর্যন্ত প্রতিদিন দেড় পারা করে মোট ৯ পারা শেষ হবে। সপ্তম তারাবি থেকে ২৭তম তারাবি পর্যন্ত প্রতিদিন এক পারা করে পাঠের মাধ্যমে ৩০ পারা পবিত্র কোরআন শরিফ খতম হবে।

সারা দেশের মুসল্লি, ইমাম-খতিব ও মসজিদ কমিটিকে বায়তুল মোকাররমের মতো পদ্ধতিতে তারাবি নামাজ আদায় করতে আহ্বান জানিয়েছেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দ্বীনি দাওয়াত ও সংস্কৃতি বিভাগ।

বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, পবিত্র রমজান মাসে প্রতিদিন বাদ জোহর বায়তুল মোকাররমে পূর্ব সাহানে পবিত্র কোরআনের তাফসির এবং তারাবি নামাজের আগে নামাজে পঠিতব্য আয়াতের সারসংক্ষেপের ওপর আলোচনা হবে। এতে তাফসির করবেন দেশবরেণ্য ওলামায়ে কেরামগণ।

শুক্রবার থেকে রমজান শুরু হলে বৃহস্পতিবার এশার নামাজের পর তারাবি শুরু হবে- এ বিষয়টি মাথায় রেখে নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে বিপুলসংখ্যক মুসল্লি মাগরিবের নামাজ সেখানে আদায় করেন। যাতে তারা দেশের বৃহত্তম এই মসজিদে বিপুলসংখ্যক মুসল্লির সঙ্গে প্রথম দিকের কাতারে দাঁড়িয়ে তারাবির নামাজ আদায় করতে পারেন।

পুরান ঢাকার আবাসন ব্যবসায়ী লোকমান হোসেন জানান, প্রথম রোজার তারাবির নামাজ বায়তুল মোকাররমে লাখ লাখ মুসল্লির কাতারে আদায়ের জন্য তিনি বিকেলে ব্যবসায়িক কাজকর্ম গুটিয়ে ফেলেন। সন্ধ্যার আগেই তিনি ঢুকে পড়েন বায়তুল মোকাররমে। জামাতে মাগরিবের নামাজ আদায়ের পর তিনি আর মসজিদ থেকে বের হননি। সেখানে বসেই নফল নামাজ আদায় ও কোরআন পাঠসহ নানা ইবাদত করেন।

মসজিদ থেকে বের হলে পাছে তারাবির নামাজে ইমামের কাছাকাছি কাতারে জায়গা পাওয়া না যায়, এই আশঙ্কায় তার মতো অনেকেই মাগরিবের নামাজ আদায় শেষে মসজিদেই অবস্থান করেন। তারাবির নামাজ ফরজ না হলেও এই নামাজে মুসল্লিদের ভিড় সম্পর্কে বায়তুল মোকাররম মসজিদে নামাজ পড়তে আসা এক নামাজি জানান, এটি অনেকটা ধর্মীয় আনন্দের অনুষঙ্গে পরিণত হয়েছে। বিশাল কাতারে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায়ের মধ্য দিয়ে অনেকেই মানসিক পরিতৃপ্তি খুঁজে পান।

তারাবি নামাজ সর্ম্পকে বিশিষ্ট আলেমগণ জানান, রমজান মাসের জন্য নির্দিষ্ট তারাবি নামাজ জামাতে পড়া ও সম্পূর্ণ কোরআন শরিফ একবার খতম করা সুন্নতে মোয়াক্কাদা। রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজে তারাবি নামাজ পড়েছেন এবং সাহাবায়ে কেরামকে পড়ার জন্য আদেশ দিয়েছেন। তারাবি নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করা ও কোরআন শরিফ খতম করা অধিক সওয়াবের কাজ। তবে ঘরে সূরা-কিরাতের মাধ্যমে আদায় করলেও সওয়াব পাওয়া যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) তারাবি নামাজের জন্য রাতের কোনো বিশেষ সময়কে নির্দিষ্ট করে দেননি। তবে তারাবি নামাজ অবশ্যই এশার নামাজের পর থেকে সুবহে সাদিকের আগে আদায় করতে হবে।



মন্তব্য চালু নেই