রজনীগন্ধা দিয়ে বন্দিদের বরণ নতুন কারাগারে!

কলেজ বা বিয়েবাড়ির মতই রজনীগন্ধা দিয়ে কারাবন্দিদের বরণ করে নেয়া হচ্ছে কেরানীগঞ্জের নবনির্মিত কারাগারে। কারাগারের প্রধান ফটকে প্রবেশের সময় প্রত্যেক বন্দিকে ফুল দিয়ে বরণ করে নিতে দেখা যায়।

শুক্রবার (২৯ জুলাই) সকাল ৬টা থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে সাড়ে ৬ হাজার পুরুষ বন্দিকে কেরানীগঞ্জে নবনির্মিত কারাগারে স্থানান্তর শুরু হয়। তবে রাজনৈতিক ও যুদ্ধাপরাধীর মামলার হেভিওয়েট বন্দিদের নেয়া হচ্ছে কাশিমপুর কারাগারে।

বেলা সাড়ে ১১টায় কারা অধিদপ্তরে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে আইজি প্রিজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন বলেন, ‘সকাল থেকে ২৫টি প্রিজন ভ্যানে এরই মধ্যে ২ হাজার বন্দিকে কেরানীগঞ্জের নবনির্মিত কারাগারে স্থানান্তর করা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ৮ হাজার বন্দি রয়েছেন। এর মধ্যে ৬ হাজার ৪শ’ বন্দিকে কেরানীগঞ্জ কারাগারে স্থানান্তর করা হচ্ছে। সেখানে নারী সেল না থাকায় নারীবন্দিদের কাশিমপুর কারাগারে স্থানান্তর করা হচ্ছে।’

বন্দি স্থানান্তরকে কেন্দ্র করে ভোর ৪টা থেকে কেন্দ্রীয় কারাগার ও এর আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার শেখ মারুফ হাসান।

তিনি বলেন, ‘সকাল থেকেই ঢাকা নাজিমুদ্দিন রোড থেকে কেরানীগঞ্জ নবনির্মিত কারাগার পর্যন্ত ব্যাপক নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে। রাস্তায় ২০০ গজ পরপর অবস্থান নিয়েছে র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবি ও এপিবিএন।’

তিনি আরও বলেন, ‘বন্দি স্থানান্তরে কোনো থ্রেট (হুমকি) নেই। তারপরেও যেহেতু এটি ইতিহাসের একটি বড় ঘটনা, তায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিয়েই বন্দি স্থানান্তর করা হচ্ছে।’

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মুহসীন রেজা জানান, কারাবন্দি হস্তান্তর নির্বিঘ্ন করতে ২৪ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।

গত ১০ এপ্রিল কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়া ইউনিয়নের রাজেন্দ্রপুরে সাড়ে চার হাজার বন্দি ধারণ ক্ষমতার নতুন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

কারাসূত্রে জানা যায়, কেরানীগঞ্জের রাজেন্দ্রপুরে প্রায় ১৯৪ একর জায়গার ওপর চার শতাধিক কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে এশিয়ার সর্বাধুনিক ও বৃহত্তম এই কারাগারটি।

১৯৮০ সালে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের আশপাশে বেশ কয়েকটি বড় আবাসিক ভবন গড়ে ওঠে। এতে কারাগারের নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা উভয়ই বিঘ্নিত হচ্ছে বলে উপলব্ধি করে তৎকালীন সরকার।

সে বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত কাউন্সিলের একটি সভায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার সরানোর বিষয়টি প্রথম উঠে আসে। ১৯৯৪ সালে একে চূড়ান্তভাবে সরিয়ে দুটি কারাগার নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর মধ্যে একটি গাজীপুরের কাশিমপুরে ও অন্যটি কেরানীগঞ্জে।

অবশেষে ২০০৬ সালে একনেকে কেরানীগঞ্জে এই প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। এরপর থেকেই শুরু হয় জমি অধিগ্রহণের কাজ। বাস্তবায়নের সময় নির্ধারণ করা হয় ২০১১ সালের জুন মাস পর্যন্ত। কিন্তু পরে তিন দফায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে করা হয় ২০১৭ সাল পর্যন্ত।



মন্তব্য চালু নেই