রাষ্ট্রায়ত্ত আলীম জুট মিল

রক্ত দিয়ে হলেও মিল রক্ষার ঘোষণা

খুলনায় রাষ্ট্রায়ত্ত আলীম জুট মিলের প্রায় দেড় হাজার শ্রমিক-কর্মচারীর ভাগ্য এখন অনিশ্চয়তার মুখে। মিলটি ব্যক্তিমালিকানায় হস্তান্তর প্রক্রিয়ার কারণে চাকরি হারানোর ভয়ে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে তারা।

মিলটি রক্ষায় প্রতিরোধ কমিটির মাধ্যমে গত দুবছর ধরে শ্রমিকরা লাগাতার কর্মসূচি পালন করে আসছে। শ্রমিক আন্দোলনে খুলনার আটরা শিল্প এলাকা এখন উত্তাল। শ্রমিকরা ঘোষণা দিয়েছে, রক্ত দিয়ে হলেও মিলটি তারা রক্ষা করবে। ব্যক্তিমালিকানায় যেতে দেবে না।

ধারাবাহিক আন্দোলনের অংশ হিসেবেই বৃহস্পতিবার সকালে আলীম জুট মিলের শ্রমিক পরিবারের (স্ত্রী ছেলে মেয়ে) সদস্যরা আফিল গেট শিল্প এলাকায় ঝাড়ু মিছিল বের করে। মিছিলটি আলীম জুট মিল থেকে শুরু করে ইস্টার্ন ও আফিল গেট ঘুরে আবার আলীম জুট মিলের প্রধান গেটের সামনে এসে শেষ হয়।

একইদাবিতে ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে আগামী শনিবার সকাল ১০ টায় লাঠি মিছিল করার ঘোষণা দিয়েছে শ্রমিকরা। পরে বিকেলে রাষ্ট্রায়ত্ব জুট মিলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শ্রমিক-কর্মচারীরা।

শ্রমিক আন্দোলন বিষয়ে আলীম জুট মিলের সিবিএ সভাপতি আব্দুস সালাম জোমাদ্দার বলেন, ‘মিলটি ব্যক্তিমালিকানায় ছেড়ে দেয়ার প্রতিবাদে শ্রমিকরা প্রায় দুই বছরের বেশি সময় ধরে আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে আসছে।’

শ্রমিক নেতা আরো বলেন, ‘মিলটি রক্ষায় শ্রমিকদের পাশে থেকে রাষ্ট্রায়ত্ব ২৬টি জুট মিলের সিবিএ-ননসিবিএ ঐক্যপরিষদের নেতারাও কেন্দ্রীয়ভাবে কর্মসূচি দিয়ে আসছে। আলীম জুট মিলের শ্রমিকরা সর্বশেষ পরিবারের স্ত্রী সন্তান নিয়ে রাজপথে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। যার ধারাবাহিকতায় তারা ঝাড়ু মিছিল করেছে।’

আব্দুস সালাম জোমাদ্দার আরো বলেন, ‘বর্তমানে মিলটিতে স্থায়ী ও বদলিসহ প্রায় দেড় হাজার শ্রমিক কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। এর সঙ্গে এলাকার ক্ষুদে ব্যবসায়ী ও দোকানদারসহ নানা পেশার হাজার হাজার মানুষ জড়িত। যদি মিলটি ব্যক্তিমালিকানায় হস্তান্তর করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, তাহলে শ্রমিক-কর্মচারীসহ নানা পেশার মানুষ পরিবার পরিজন নিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়বে। অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাতে হবে শ্রমিকদের। বন্ধ হয়ে যাবে তাদের সন্তানদের লেখাপড়া।’

ক্ষোভ প্রকাশ করে এই সিবিএ নেতা বলেন, ‘শ্রমিক-কর্মচারীরা রক্ত দিয়ে হলেও এ মিলকে ব্যক্তি মালিকানায় দিতে দেবে না।’

আলীম জুট মিল ব্যক্তিমালিকানায় হস্তান্তর প্রতিরোধ কমিটির আহ্বায়ক মো. আব্দুর রশিদ জানান, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা ‘আর কোনো রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পকে ব্যক্তি মালিকানায় হস্তান্তর হবে না’ উপেক্ষা করে খুলনার আলীম জুট মিল ব্যক্তি মালিকানায় ছেড়ে দেয়ার চক্রান্ত চলছে। সার্বিক বিষয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন পাটকল শ্রমিকরা।’

একটি প্রভাবশালী মহলের ষড়যন্ত্রে সরকারি আলীম জুট মিল ব্যক্তিমালিকানায় হস্তান্তর করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করে মিলটি মালিকের কাছে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানান আব্দুর রশিদ।

উল্লেখ্য, ১৯৬৮ সালের ১ জুলাই খুলনার আটরা শিল্প এলাকায় ব্যক্তি মালিকায় প্রতিষ্ঠিত হয় মেসার্স আলীম জুট মিলস লিমিটেড। পরবর্তীতে ১৯৭২ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতির আদেশ বলে (পি ও ২৭) মিলটি রাষ্ট্রায়ত্ত করা হয় এবং বিজেএমসির নিয়ন্ত্রাণাধীন মিল হিসেবে এখনও পর্যন্ত পরিচালিত হয়ে আসছে।



মন্তব্য চালু নেই