যে পাঁচটি বিষয় জানলে আপনাকে হাসতেই হবে

‘রামগড়ুরের ছানা হাসতে তাদের মানা,/হাসির কথা শুনলে বলে,/”হাসব না-না, না-না”।’ আপনি যদি রামগড়ুরের ছানার মতো এমন কোনো পণ করে থাকেন যে, হাসবেন না, তাহলে মারাত্মক ভুল করবেন। কারণ হাসি আপনার জীবনের জন্য খুবই উপকারি। কখনো আনন্দ আপনার হাসি এনে দেয় এবং কখনো হাসিও আপনার আনন্দ এনে দেয়। হাসিকে ইতিবাচক মনোভাবের বিষয় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ বিষয়ে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে হাফিংটন পোস্ট। হাসির ফলে আপনার যেসব উপকার হবে তার মধ্যে পাঁচটি এ লেখায় তুলে ধরা হলো।

১. শারীরিক ও মানসিকভাবে আপনি ভালো বোধ করবেন
আপনি যখন ভালো মুডে থাকবেন না, তখনও হাসি আপনার মনোভাব পরিবর্তনে কাজে আসবে। ১৮৭২ সালে ডারউইন এ বিষয়টিতে সমর্থন জানিয়ে বলেন যে, মুখের মনোভাব পরিবর্তন করলে আবেগগত পরিবর্তনও চলে আসে। একে তিনি বলেন ‘ফেসিয়াল ফিডব্যাক রেসপন্স’ থিওরি। সাইকোলজিক্যাল বিভিন্ন গবেষণায় ডারউইনের এ দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন যে, মুখের ভাব শুধু মনোভাবের ফলই নয়, বরং মুখের ভাব মনোভাবকে প্রভাবিত করতে পারে।

২. এটা আপনাকে দীর্ঘ জীবন দেবে
হাসি বাস্তবে আপনাকে দীর্ঘ জীবন এনে দেবে। এ বিষয়টি বিভিন্ন গবেষণাতেও প্রমাণিত হয়েছে। ওয়েইন স্টেট ইউনিভার্সিটি ১৯৫২ সালের বেসবল খেলোয়াড়দের হাসি নিয়ে গবেষণা করে। তারা দেখে যে হাসিখুশি খেলোয়াড়রা গড়ে ৭৯.৯ বছর বেঁচে থাকেন। এটি সেখানকার গড় আয়ুর চেয়ে দুই বছর বেশি। এ ছাড়া সেই গবেষণায় দেখা যায়, যেসব খেলোয়াড়দের কোনো ছবিতে একবারের জন্যও হাসতে দেখা যায়নি, তারা গড়ে ৭২.৯ বছর বেঁচে ছিলেন। ফলে হাসিখুশি খেলোয়াড়দের সঙ্গে গম্ভীর খেলোয়াড়দের জীবনকালের পার্থক্য দেখা যায় প্রায় সাত বছরের। এ ছাড়াও হৃৎযন্ত্রের সুস্থতার জন্য হাসি কাজে আসে। আর পর্যাপ্ত হাসি ছাড়াও উপযুক্ত খাবার, পর্যাপ্ত ঘুম ও শারীরিক পরিশ্রম আপনার জীবনে যোগ করতে পারে কয়েকটি মূল্যবান বছর।

৩. আপনার হাসি অন্য কারো উপকার করতে পারে
‘প্রত্যেকবার কারো প্রতি আপনার হাসি একটা উপহার হতে পারে। একটা খুব সুন্দর বিষয়।’ মাদার তেরেসার এ উক্তি ছিল খুবই সঠিক এক উপলব্ধি। গবেষণাতেও দেখা গেছে অন্য কারো হাসিমুখ দেখলে তা হৃৎপিণ্ড ও মস্তিষ্কের উপকারে লাগে। এটি চকলেট খাওয়া, যৌনতা বা অর্থ গ্রহণের মতোই ইতিবাচকভাবে কাজ করে। কোনো শিশুর হাসি দেখাও খুবই উপকারি।

৪. আপনার সম্পর্ক শক্তিশালী হবে, ডিভোর্সের সম্ভাবনা কমবে
হাসিখুশি মানুষের থাকতে পারে সফল বিবাহিত জীবন। ২০০১ সালের এক গবেষণায় কেল্টনার ও হার্কার নারীদের মাঝে এক গবেষণায় দেখেন যারা ইয়ারবুকে হাসিখুশি ছবি দিয়েছে তারা ৫২ বছর বয়সে বিবাহিত জীবনেও অন্যদের তুলনায় বেশি সন্তুষ্ট। ২০০৯ সালে এ ধরনের আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের হাসি বেশি তাদের মাঝে ডিভোর্সের হারও কম। এ ছাড়া দেখা গেছে যাদের খুব সামান্য বা একেবারেই হাসি দেখা যায় না, তাদের ডিভোর্সের হার অন্যদের তুলনায় পাঁচগুণ বেশি। এসব গবেষণায় প্রমাণিত হয় যে, যারা বেশি হাসে তারা ইতিবাচক, আনন্দদায়ক ও মানসিকভাবে স্থিতিশীল জীবনযাপন করে।

৫. আপনার সম্পর্কে অন্যরা ইতিবাচক হবে
হাসিখুশি মানুষরা অন্যের বিশ্বাসভাজন হয়। এ ছাড়াও অন্যরা হাসিখুশি মানুষদের অন্যদের তুলনায় নিষ্ঠাবান, সামাজিক ও দক্ষ বলে মনে করে। অরবিট কমপ্লিট এর এক গবেষণায় দেখা যায়, ৭০ ভাগ মানুষ হাসিখুশি নারীদের বেশি আকর্ষণীয় বলে মনে করে। এটি এমনকি মেকআপের চেয়েও বেশি কার্যকর।

এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, হাসতে কোনো অর্থ খরচ হয় না, প্রয়োজন হয় না বাড়তি কোনো কিছুরই। সম্পূর্ণ বিনাপয়সার এ বিষয়টি আপনি যতোই চর্চা করবেন ততোই আপনার মানসিক চাপ কমবে, সম্পর্ক উন্নতি হবে এবং আপনার আয়ু বেড়ে যাবে। ফলে অপেক্ষা না করে এখন থেকেই হাসি দেওয়া শুরু করুন।



মন্তব্য চালু নেই