যেভাবে হামলা হয় শিয়া মসজিদে

বগুড়ায় শিবগঞ্জ উপজেলার আটমূল ইউনিয়নে হরিপুর গ্রামের শিয়া মসজিদ আল মোস্তফা।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে ওই মসজিদে নামাজের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন ১৫-২০ মুসল্লি। শিয়া সম্প্রদায়ের নিয়ম অনুযায়ী মাগরিব এবং এশার নামাজ এক সঙ্গে আদায় করা হয়ে থাকে।

প্রথমে মাগরিবের নামাজ শেষ করনে তারা। এরপর এশারের নামাজের নিয়ত বাঁধার পরপরই মুসল্লিদের লক্ষ্য করে এলোপাথাড়ি গুলি বর্ষণের শব্দ শোনা যায়।

প্রত্যক্ষদর্শী আব্দুর রশিদ ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, আজান দেওয়ার পরপর ২০-২২ বছরের অপরিচিত তিন যুবক মসজিদে প্রবেশ করে। তাদের মাথায় টুপি এবং পরনে পায়জামা-পাঞ্জাবি ছিল। মাগরিব শেষে এশার নামাজের সময় ওই তিন যুবক মুসল্লিদের লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়তে থাকে।

আব্দুর রশীদ বলেন, ‘গুলিবর্ষণ শুরু সঙ্গে সঙ্গে আমি মসজিদের মেঝেতে শুয়ে পড়ি। কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ার পর ওই তিন যুবক মসজিদের সীমানাপ্রচীর টপকে দৌড়ে পালিয়ে যায়।’

তিনি আরো জানান, গুলিতে আহত মুয়াজ্জিনসহ চারজনকে মসজিদের বাইরে নিয়ে আসার চেষ্টা করলে দেখা যায়, মূল ফটক বাইরে থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পরে আশপাশের লোকজন এসে ফটক খুলে দিলে আহত চারজনকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে নেওয়ার কিছুক্ষণ পর মুয়াজ্জিন মোয়াজ্জেম হোসেন (৬০) মারা যান।

আরেক প্রত্যক্ষদর্শী উকিল হোসেন জানান, কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে গুলি বর্ষণের শব্দ শুনেই চোখ বন্ধ করে তিনি মাটিতে শুয়ে পড়েন। মিনিট পরে চোখ খুলেই দেখতে পান, রক্তাক্ত শরীরে মাটিতে লুটিয়ে আছেন মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিনসহ চারজন।

ঘটনার পর রাত আটটার দিকে ওই মসজিদে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য উপস্থিত হয়েছেন। মসজিদের মেঝেতে ছোপ ছোপ রক্ত। মসজিদের ভেতর থেকে আলামত সংগ্রহ করছেন পুলিশ সদস্যরা।

এদিকে মসজিদে গুলি হওয়ার খবর শুনে ছুটে আসেন আশপাশের বিভিন্ন এলাকার লোকজন। গ্রামের লোকজন জানান, গুলির শব্দ শুনে তাঁরা মসজিদের দিকে দৌড়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু গুলিবর্ষণকারীরা আগেই মসজিদে প্রবেশের মূল ফটক ভেতর থেকে বন্ধ করে রাখায় তারা ঢুকতে পারেননি। খুব দ্রুত ঘটনা ঘটিয়ে গুলিবর্ষণকারীরা মসজিদের সামনের দেয়াল টপকে পালিয়ে যায়।

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আক্তার হোসেন জানান, এটি একটি পরিকল্পতি হত্যাকাণ্ড। ধারণা করা হচ্ছে মসজিদে এসে তারা রেকি করে গিয়েছিল। তা না হলো মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে হামলা করে পালিয়ে যাওয়া কঠিন ছিল। কারণ মসজিদের তিন দিকেই বসতবাড়ি; এক পাশে ধানি জমি। এটা তাদের আগে থেকেই জানা ছিল। এছাড়া তাদের অপারেশনের আগেই মসজিদের মূল ফটক বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল।

বগুড়ার পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান জানান, তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, এটি দুর্বৃত্তদের হামলা। তবে কারা, কী উদ্দেশ্যে এ হামলা করেছে, তা তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব হয়নি। বন্দুকধারীরা কোনো জঙ্গিগোষ্ঠীর সদস্য কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, তদন্ত না করে বলা সম্ভব নয়। আপাতত বলা যায়, এটা দুর্বৃত্তদের পরিকল্পিত হামলা। সবকিছুই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার রাতে শিবগঞ্জে শিয়া মসজিদে মুসল্লিদের ওপর গুলি বর্ষণে মসজিদের মুয়াজ্জিন নিহত হন। গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন ইমামসহ তিনজন।

শিয়া সম্প্রদায়ের এই মসজিদ পরিচালনা করে বাংলাদেশ ইমামিয়া জনকল্যাণ ফাউন্ডেশন। এর চেয়ারম্যান আলহাজ আবু জাফর মণ্ডল জানান, ১৯৯২ সাল থেকে এই ফাউন্ডেশনের কাজ শুরু হয়। ইরানি দূতাবাসের সহায়তায় তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়। মসজিদের আশপাশে প্রায় ১২০টি পরিবারের বসবাস।



মন্তব্য চালু নেই