যেভাবে বাস লুকিয়ে রেখেছেন মালিকরা

রাজপথে বিআরটিএ’র ভ্রাম্যমাণ আদালত তৎপর থাকায় রাজধানীতে গণপরিবহনের বহু বাস চলাচল করছে না। কাগজপত্র ঠিক না থাকায় জরিমানা ও ডাম্পিংয়ের ভয়ে নিজেদের বাসগুলো লুকিয়ে রাখছেন মালিকরা। আদালত চলে যাওয়ার পর আবার যাত্রী পরিবহনে নেমে পড়ছে বাসগুলো। এ কারণে তিন দিন ধরে নগরীতে রীতিমতো পরিবহন সংকট চলছে। সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পরিবহন মালিকরা এভাবে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

এ প্রসঙ্গে বিআরটিএ’র চেয়ারম্যান মো. মশিয়ার রহমান বলেন, ‘যাত্রীসেবার জন্যই বাসগুলোর রুট পারমিট দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনের সময় এগুলো যদি যাত্রী পরিবহন না করে তাহলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) সকাল ৯টায় সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, যাত্রাবাড়ী-টঙ্গী রুটে চলাচলকারী গ্রেট তুরাগ ট্রান্সপোর্ট কোম্পানির অন্তত আটটি বাস যাত্রাবাড়ী ওয়াপদা কলোনি গেট সংলগ্ন সিফাত সিএনজি স্টেশনের সামনে প্রধান সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। দাঁড়িয়ে থাকা বাসগুলো হলো: ঢাকা মেট্রো ব-১১-৩১৬৬, ব-১৪-১৬৬৯, জ-১৪-০০৫১, জ-১৪-১১২৭, ব-১৪-০০৫৬, ব-১৪-২৭৪৬, জেএম তুরাগ ট্রান্সপোর্ট কোম্পানির ঢাকা মেট্রো জ-১৪-১৬৪০, জ-১১-১৯৪০। একই সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা হয় রাইদা পরিবহনের একটি বাস (ঢাকা মেট্রো ব-১১-৮২১২)।

সকালে অফিসগামী যাত্রীদের তোলার জন্য বাসগুলো যেখানে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়, সেখানে এভাবে সড়কের ওপর দাঁড় করিয়ে রাখা প্রসঙ্গে তুরাগ বাসের কর্মী আবুল বলেন, ‘মালিকদের নির্দেশ, তাই গাড়ি বন্ধ। তবে গত দু’দিন বিকাল থেকে তারা বাস চালিয়েছেন- একথা জানিয়ে আবুল বলেন, বিকালে রাস্তায় ভ্রাম্যমাণ আদালত থাকে না।’

সকাল সোয়া ১১টায় সায়েদাবাদ টার্মিনালের পূর্বদিকে সিটি করপোরেশনের পেট্রোল পাম্পের ভেতর, টার্মিনালের ভেতর, জনপথ সড়কের দক্ষিণ প্রান্তে ফ্লাইওভারের গুলিস্তানমুখী প্রবেশপথ সংলগ্ন সিএনজি স্টেশনের ভেতরও অনেক বাস দাঁড় করিয়ে রাখতে দেখা গেছে। স্বামীবাগের প্রবেশপথে ফ্লাইওভারের নিচে শ্রাবণ পরিবহনের একটি বাস দাঁড় করিয়ে রাখা হয়।

গুলিস্তান পার্কের দক্ষিণ দিকে ফ্লাইওভারের নিচে মুরগি পট্টিতে গজারিয়া পরিবহনের সাতটি বাস দাঁড় করানো অবস্থায় দেখা যায়। বেলা তখন সাড়ে ১১টা। দাঁড়িয়ে থাকা বাসগুলোর রেজিস্ট্রেশন নম্বর হলো: ঢাকা মেট্রো জ-১৪-০৮৫৯, জ-১১-০৩১০, জ-১৪-২৫৪২, জ-১১-০৩৭৩, জ-১৪-০১৩২, মানিকগঞ্জ জ-০৪-০০০৩ ও নারায়ণগঞ্জ জ-০৪-০১৮৩।

স্থানীয় সিগারেট বিক্রেতা জানান, ১৬ এপ্রিল থেকে প্রতিদিন বিকাল পর্যন্ত ফ্লাইওভারের নিচে মুরগি পট্টিতেই দাঁড় করিয়ে রাখা হয় বাস। এ কারণে মানুষের যাতায়াত বিঘ্ন হলেও বাসমালিকদের তাতে টনক নড়ছে না। বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে গজারিয়া পরিবহনের একটি বাসের ভেতর আড্ডারত সালাম নামে এক শ্রমিক জানালেন, মালিকদের কথামতো এখানে রাখা হয়েছে বাস। বিকাল থেকে আবারও এগুলো রাস্তায় নামবে বলে জানান তিনি।

দাঁড় করিয়ে রাখা আরও দুটি বাসখোঁজ নিয়ে জানা গেছে— শুধু যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ কিংবা গুলিস্তানই নয়, নগরীর মোহাম্মদপুর, মিরপুর, আশকোনা, আবদুল্লাহপুর প্রভৃতি এলাকার রাস্তায়ও এভাবে ফিটনেসবিহীন অনেক বাস সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত দাঁড় করিয়ে রাখা হচ্ছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত চলে গেলে আবার যাত্রী পরিবহনে চলতে শুরু করে এগুলো। এ কারণে তিন দিন ধরে পরিবহন সংকট চলছে নগরীতে।

ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মনসুর আলম বাস বন্ধ রাখার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘ঢাকায় যেসব বাস চলে সেগুলোর যথাযথ কাগজপত্র রয়েছে। কিন্তু সমস্যা হলো চালকদের নিয়ে। তাদের বেশিরভাগের ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। জাল লাইসেন্স দিয়েই দীর্ঘদিন ধরে গাড়ি চালাচ্ছে তারা। জাল লাইসেন্সধারী ড্রাইভারদের ভ্রাম্যমাণ আদালত কারাদণ্ড দেওয়ায় তাদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে বহুবার বলেও তাদের কাজে আনতে পারছি না।’

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, “যাত্রী হয়রানি বন্ধে সরকারি উদ্যোগকে বানচাল করার জন্য কতিপয় মালিক তাদের বাস চলাচল বন্ধ রাখছেন। এসব বাসের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ঠিক নেই। বিআরটিএ’র উচিত এসব বাসের রুট পারমিট বাতিল করে দেওয়া।” প্রসঙ্গত, সিটিং সার্ভিস ও ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে গত ১৬ এপ্রিল থেকে বিআরটিএ’র পাঁচটি ভ্রাম্যমাণ আদালত নগরীর বিভিন্ন স্পটে তৎপর রয়েছে। প্রতিদিনই ত্রুটিপূর্ণ বাসের জরিমানা কিংবা ডাম্পিং করছে আদালত। পাশাপাশি জাল ড্রাইভিং লাইসেন্সের কারণে শাস্তিও দেওয়া হচ্ছে চালকদের।খবর বাংলা ট্রিবিউনের।



মন্তব্য চালু নেই