যাবজ্জীবন সাজা পেয়েও আদালতে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান বদরুলের

সিলেটের কলেজছাত্রী খাদিজা আক্তার হত্যাচেষ্টা মামলায় শাবি ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত নেতা বদরুল আলমকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন খাদিজার পরিবার। অন্যদিকে বদরুল আদালত চত্বর ছেড়ে যাওয়ার সময় ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে দম্ভ প্রকাশ করেন।

মঙ্গলবার দুপুরে সিলেটের মহানগর দায়রা জজ মো. আকবর হোসেন মৃধা এই মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে একই সঙ্গে বদরুলকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও দুই মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়।

রায় ঘোষণার আগে কাঠগড়ায় তোলার পর বদরুল একরকম চুপচাপ ছিলেন। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে রায় পড়া শুরু করেন বিচারক। ৩০ পৃষ্ঠার রায় ঘোষণা শেষ হয় দুপুর ১২টায়। এ সময় বদরুলকে বিমর্ষ দেখায়। যাবজ্জীবন সাজার রায় ঘোষণার পর একদম চুপ হয়ে যান বদরুল।

তবে আদালত থেকে তাকে কারাগারে নিয়ে যাওয়ার সময় বদরুল জনাকীর্ণ আদালত চত্বরে ‘জয় বাংলা’ বলে স্লোগান দিয়ে ওঠেন্। এরপর বলতে থাকেন, ‘এই রায়ে আমার কিছুই হবে না।’ এই বাক্যটি কয়েকবার বলেন তিনি।

বদরুলের যাবজ্জীবন রায় হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মহানগর ও দায়রা জজ আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট মফুর আলী। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, এই রায় নারীদের সুরক্ষায় ভূমিকা রাখবে। উচ্চ আদালতেও এই রায় বহাল থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

এই রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে মামলার বাদী খাদিজার চাচা আবদুল কুদ্দুস বলেন, ‘এ রায়ে আমরা খুশি। এ রায় যেন উচ্চ আদালতে বহাল থাকে, এটাই চাই।’ তিনি প্রধানমন্ত্রীসহ দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।

তবে এ রায়ের মাধ্যমে বদরুল ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন বলে দাবি করেন তার আইনজীবী মো. সাজ্জাদুর রহমান চৌধুরী। তিনি জানান, তারা এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন।
এর আগে আদালত রায়ে বলেন, ‘এই ঘৃণিত অপরাধের জন্য দণ্ডবিধির ৩২৬ ধারায় আসামি বদরুলের সর্বোচ্চ সাজাই প্রাপ্য। তাই তাকে এ আইনে সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হলো।’

গত ২৮ ফেব্রুয়ারি এই মামলার সাক্ষ্য দেন বদরুলের হামলার শিকার খাদিজা। তিনি বদরুলের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেছিলেন আদালতে। বুধবার আদালতের রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন খাদিজা। একটি গণমাধ্যমকে দেয়া প্রতিক্রিয়ায় খাদিজা বলেন, ‘আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যেই বদরুল গরু কাটার চাপাতি দিয়ে কুপিয়েছে। আমি এর বিচার পেয়েছি। এ জন্য আদালতসহ সবার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।’

গত বছরের ৩ অক্টোবর সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রী খাদিজা এমসি কলেজে পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে হামলার শিকার হন। এ সময় বদরুল চাপাতি দিয়ে উপর্যুপরি কোপায় খাদিজাকে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং পরদিন রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে কয়েকবার অস্ত্রোপচার করা হয় তার মাথায় ও হাতে। প্রায় দুই মাসের চিকিৎসায় মোটামুটি সুস্থ হয়ে ওঠেন খাদিজা। পরে গত ২৮ নভেম্বর তাকে চিকিৎসা-পরবর্তী পুনর্বাসনের জন্য সাভারের সিআরপিতে ভর্তি করা হয়।

বর্তমানে খাদিজা সিলেটে তাদের নিজের বাড়িতে অবস্থান করছেন। তার শারীরিক অবস্থা এখনো পুরোপুরি ভারো নয়। আরো দীর্ঘদিন তাকে চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে বলে চিকিৎসকরা জানান।



মন্তব্য চালু নেই