মেহেদির রং না মুছতেই বিধবা হলো শিউলি

নওগাঁর আত্রাই উপজেলার হাটকালুপাড়া ইউনিয়নের উত্তরবিল দড়গাপাড়া গ্রামের রিয়াজ উদ্দিন মোল¬ার ছেলে নিহত সাজেদুর রহমান মোল (৩৫) ৬ সদস্যের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন তিনি। তিন ছেলে। এক ছেলে সুজুন সে শারীরীক প্রতিবন্ধি। স্থানীয় স্কুলে ৯ম শ্রেণীতে লেখাপড়া করে। অপর ছেলে মোহন সেও একই শ্রেণীতে পড়ালেখা করে। ছোট ছেলে রিমন সে চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ে। স্ত্রী ও বৃদ্ধ মা আছেন সংসারে। তার উপার্জিত অর্থ দিয়েই চলতো সংসার ও সন্তানদের পড়ালেখা।

দু’চোখে স্বপ্ন ছিল ছেলেদের লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষের মতো মানুষ করে তোলা। কিন্তু নিয়তির পরিহাস, স্বপ্ন পুরন হলোনা। স্বামীকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে আছে স্ত্রী রোকসানা,বৃদ্ধ মা সুবেদা বেওয়া তার যেন ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকা ছাড়া আর কোন ভাষা নেই।

কি করে চলবে সংসার, কে নিবে তার ৩ সন্তানের লেখাপড়ার দায়িত্ব। সব কিছু মিলেই স্তব্ধ হয়ে গেছেন তারা। থেমে গেছে তাদের জীবন জীবিকার পথ চলা। অপরজন নিহত রুবেলের স্ত্রী শিউলি বিবি তার হাতে রয়েছে এখনো বিয়ের মেহেদির রং।

তিনি জানান, গত ৩ মাস আগে বিয়ে হয়েছে তাদের। রোববার সকালে বাড়ি থেকে যাবার আগে স্বামী রুবেল তাকে আশা দিয়েছিল আগামী কালী পূজায় বাড়ি ফিরবে। কিন্তু পরের দিনই লাশ হয়ে বাড়ি ফিরলো রুবেল। ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল সংসার নামক স্বপ্নময়ী জীবন। আশা আশাই থেকে গেল পূর্ণ হতে দিলোনা সড়ক দূর্ঘটনায়। হাতের মেহেদির রং না মুছতেই বিধবা হলেন শিউলি।

একই গ্রামের নিহত আলম হোসেন মোল¬ার স্ত্রী সভেদা বেগম জানান, তাদের একটি মেয়ে সন্তান রয়েছে। আলমের পিতা নূর হোসেন জানান সাংসারিক অভাবের কারনে নূর হোসেন চট্টগ্রামে কাজ করতে যাচ্ছিল। নিহত কালাম মন্ডলের এর স্ত্রী মাজেদা বেগম এর সাথে কথা বলার চেষ্টা করা হলে, তিনি বারবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলছিলেন।

এ সময় তার পিতা আপির উদ্দিন মন্ডল জানান তার ছেলের ২ টি ছেলে ১ টি মেয়ে মিলে ৩ টি সন্তান রয়েছে। জোতসম্পত্তি থাকলেও অতি সামান্ন। একই গ্রামের নিহত যুবক টিপু হোসেনের স্ত্রী ধলি বেগমের সাথে কথা বলা হলে, তিনি অশ্র“শিক্ত নয়নে বলেন তাদের ৩ টি মেয়ে সন্তান রয়েছে। সংসারে উপার্জনের আর কেউ রইল না। সস্তাানদের ভবিষ্যৎ নিয়েই সে বারবার বিলাপ করছে।

গত রোববার সকালে দারিদ্রতাকে হার মানিয়ে সংসারের স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে জীবিকার টানে ছুটে চলে ছিলেন সাজেদুল, রুবেলসহ আরো ৫-৬ জন চট্রগ্রামের উদ্দেশ্যে। সেখানে তারা শ্রমিক হিসাবে মাটি কাটা কাজ করার কথা ছিল।

নিহত সাজেদুর রহমানের স্ত্রী রোকসানা জানালেন, রবিবার সকাল ১০ টায় সাজেদুর মোবাইল ফোন করে জানিয়েছিলেন বাসের টিকিট কাটা হয়ে গেছে, কিন্তু সঙ্গে থাকা আরো শ্রমিকরা কম ভারায় পৌঁছার লোভে বাসের টিকিট ফেরত দিয়ে চেপে বসে চাল বোঝাই টাকের উপর। চট্রগাম পৌঁছার আগেই সোমবার ভোরে মিসরাইল উপজেলার জোরারগঞ্জ সোনাপাহাড় এলাকায় ট্রাকটি উল্টে খাদে পড়ে যায়।

এতে চালের বস্তার নিচে পড়ে সাজেদুলসহ একই গ্রামের নুর উদ্দীনর মোল¬ার ছেলে আলম মোল¬া (৩০), জিয়াউল হকের ছেলে রুবেল হক (২৫),আপির উদ্দীনের ছেলে কালাম মন্ডল (২০) ও সাদেক আলীর ছেলে টিপু সুলতান (৪০) সহ মোট ৭ জন ঘটনাস্থলেই নিহত হন। এখবর মোবাইল ফোনে গ্রামে পেঁৈছলে শোকে ভারী হয়ে ওঠে পুরো এলাকা।

গত মঙ্গলবার সকালে একসঙ্গে ৫ টি লাশ গ্রামে পৌঁছলে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। সকাল ৯ টায় দড়গাপাড়া ঈদগাহ ময়দানে নিহতদের জানাজা শেষে নিজ নিজ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

এসময় আত্রাই উপজেলার পরিষদ চেয়ারম্যান এবাদুর রহমানসহ এলাকার সর্বস্তরের লোকজন জানাজায় অংশ নেয়। এব্যাপারে আত্রাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মকলেছুর রহমান জানান, নিহতদের পরিবারে জেলা প্রসাশকের পক্ষ থেকে ২০ হাজার টাকা করে ১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

এছাড়াও স্থানীয় সংসদ সদস্যের পক্ষ থেকে ৭৫ হাজার, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এবাদুর রহমান ২৫ হাজার এবং পল¬ীবিদ্যুৎ সমিতি আত্রাই শাখার পক্ষ থেকে ২৫ হাজার ও ব্যবসায়ী গোলাম হোসেন ৫০ হাজার টাকা অনুদান প্রদান করা হয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই