মৃত ব্যক্তিকেও রেহাই দিচ্ছে না দুদক!

প্রাইভেটাইজেশন বোর্ডের প্রাক্তন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও প্রাক্তন সচিব (গৃহায়ণ ও গণপূর্ত) কামরুল ইসলাম সিদ্দিক। প্রায় সাত বছরে আগে চলে গেছেন না ফেরার দেশে। তবু দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তাকে রেহাই দিল না। এমন একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির বিষয়ে ভালোভাবে না জেনেই পুরোনো অভিযোগের নতুন করে অনুসন্ধানে সিদ্ধান্ত নিল দুদক।

অনিষ্পন্ন সেলের ডেস্ক অফিসার উপপরিচালক মো. গোলাম ফারুক স্বাক্ষরিত ওই নির্দেশনার খবর দুদকের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। যার স্মারক নং-১৬৫-২০০১(গ)/টা: ফো:-৪/ অ: বি: সেল-১/২৮৭৪৩/১(২)। তারিখ-৪/১০/২০১৫।

তবে দুদকের এমন সিদ্ধান্তকে অনেকটা অনিচ্ছাকৃত ভুল বলছেন দুদক চেয়ারম্যান মো. বদিউজ্জামান। তিনি বলেন, দুদক কোনো মৃত ব্যক্তির বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করে না। এমনকি অনুসন্ধান পর্যায়ে অভিযুক্ত কোনো ব্যক্তি মারা গেলেও অভিযোগের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়।

তিনি আরো বলেন, দুদক থেকে যদি এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়াও হয়ে থাকে। তাহলে হয়তো কোনো ভুল করে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

কামরুল ইসলাম সিদ্দিক ২০০৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। অথচ তার বিরুদ্ধে অন্যদের যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধভাবে কম্পিউটার সরবরাহসহ জনবল নিয়োগের অভিযোগ আনা হয়েছে।

দুদক সূত্রে আরো জানা যায়, ২০০১ সালে বিলুপ্ত দুর্নীতি দমন ব্যুরোতে এমন অভিযোগের অনুসন্ধান শুরু করা হয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন অভিযোগটি দুদকের অনিষ্পন্ন সেল-১-এর ফাইলবন্দি অবস্থায় ছিল। এরপর চলতি মাসের ৪ অক্টোবর কমিশন থেকে অভিযোগটি নতুন করে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আর অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দুদকের উপপরিচালক এস এম মফিদুল ইসলামকে।

প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম সিদ্দিকের মারা যাওয়ার বিষয়টি প্রাইভেটাইজেশন বোর্ড থেকেও নিশ্চিত করা হয়েছে।

এ বিষয়ে প্রাইভেটাইজেশন বোর্ডসহ বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ১৯৪৫ সালের ২০ জানুয়ারি কুষ্টিয়া শহরে জন্ম নেওয়া কামরুল ইসলাম সিদ্দিক ১৯৬৭ সালে কুষ্টিয়া জেলা বোর্ডে পূর্ত কর্মসূচি শাখায় সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরে নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্ব লাভ করেন। অংশগ্রহণ করেছেন মুক্তিযুদ্ধেও। স্বাধীনতার পর খুলনা মিউনিসিপ্যালিটিতে পূর্ত কর্মসূচির নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে বদলি হন। ১৯৯২ সালে ব্যুরোর মর্যাদা বৃদ্ধি করে প্রতিষ্ঠিত হওয়া স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রথম প্রধান প্রকৌশলী নিযুক্ত হন। ১৯৯৯ সালের মে পর্যন্ত প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন কামরুল ইসলাম সিদ্দিক। ওই বছরের মে মাসে তিনি বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে যোগদান করেন। ২০০০ সালের প্রথম দিকে তিনি পূর্তসচিব ও ২০০১ সালের দ্বিতীয়ার্ধে প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। ২০০২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অবসর প্রস্তুতি ছুটিতে যান। ২০০৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সিতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এলজিইডির প্রথম প্রধান প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম সিদ্দিককে বাংলাদেশে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের স্বপ্নদ্রষ্টাও বলা হয় বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়।রাইজিংবিডি



মন্তব্য চালু নেই