মান্দায় নিপা ভাইরাসে দুই শিশুসহ তিনজনের মৃত্যু ॥ কর্তব্যে অবহেলায় দুই কর্মকর্তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ

নওগাঁর মান্দায় নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত এক সপ্তাহে দুই শিশুসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে। নিহতের শরীরে নিপা ভাইরাসের জীবানু পাওয়া গেছে বলে নিশ্চিত করেছেন নওগাঁর সিভিল সার্জন ডা: মোজাহারুল ইসলাম। এদিকে কর্তব্যে অবহেলার অভিযোগে মান্দা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দুই কর্মকর্তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে।

তদন্তে গঠন করা হয়েছে তিন সদস্যের একটি মেডিকেল টিম। এছাড়া ঘটনাটি আরো নিবিড়ভাবে পর্যপেক্ষণ ও নিপাহ ভাইরাস নিয়ন্ত্রনের লক্ষ্যে ঢাকার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, রোগতত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং কলেরা হাসপাতাল ( আইসিডিআরবি) থেকে ৬ সদস্যের একটি চিকিৎক দল ভালাইন ও বালুবাজার গ্রাম পরিদর্শন করবেণ বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন ডা: মোজাহার হোসেন।

নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া দুই শিশু হলো , উপজেলা ভালাইন ইউনিয়নের ভালাইন গ্রামের মকলেছুর রহমানের ছেলে আপেল মাহমুদ (১১) ও আবুল কাসেমের ছেলে কাওসার আলী (১৩)। অপরজন পরানপুর ইউনিয়নের বালুবাজার গ্রামের আলিমুদ্দীনের ছেলে হাফিজুল ইসলাম (২৫)। সোমবার বিকেলে সরেজমিনে গেলে শিশু আপেল মাহমুদের মা জুলেখা বিবি জানান, গত ২০ জানুয়ারী খেজুরের রস পান করে।

২২ জানুয়ারী সে জ্বরে আক্রান্ত হলে বিকেলে তাকে মহাদেবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। একইদিন আপেলকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৩ জানুয়ারী মৃত্যুবরণ করে আপেল। একই ঘটনায় কাওসার আলীকে ২৪ জানুয়ারী রামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হলে ২৯ জানুয়ারী পরিবারের লোকজন তাকে বাড়ি নিয়ে আসে। পরদিন ৩০ জানুয়ারী সকালে তার মৃত্যু হয়।

অপরদিকে বালুবাজার গ্রামের হাফিজুল ইসলাম বড়ই খেয়ে জ্বরে আক্রান্ত হলে ১৭ জানুয়ারী রামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২২ জানুয়ারী তিনি মারা যান। এদিকে নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে তিনজনের মৃত্যু সংবাদে এলাকাজুরে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। খেজুরের রস খাওয়া ও সংগ্রহ বন্ধ করে দিয়েছে স্থানীয়রা। সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে স্বাস্থ্য কর্মীরা গত দুইদিন ধরে এলাকায় অবস্থান করছেন।

এ ঘটনায় তাৎক্ষনিক রিপোর্ট দাখিল না করায় কর্তব্যে অবহেলায়র অভিযোগে মান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য পরিদর্শক (ইনচার্জ) ফয়েজ উদ্দিন তরফতার ও সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক তাইজুল ইসলামকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে।

নওগাঁর সিভিল সার্জন ডা: মোজাহারুল ইসলাম জানান, মারা যাওয়া দুই শিশুসহ তিনজনের লালা ও রক্ত পরীক্ষা করে নিপা ভাইরাসের জীবানু পাওয়া গেছে। ঘটনার তদন্তে নওগাঁ সদর হাসপাতালের মেডিকের অফিসার ডা: জাহিদ নজরুল ইসলাম চৌধুরীকে প্রধান করে ,ডা: মনোরঞ্জন মন্ডল ও ডা: আল মাসুদ মিজানুর রহমানকে নিয়ে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটি এলাকায় কাজ শুরু করেছে। মৃত্যু ব্যক্তিদের সংস্পর্শে থাকা ৩৯ জনকে শনাক্ত করে তাদের পর্যবেক্ষনে রেখেছেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা।

এছাড়া ঘটনাটি আরো নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষন ও নিপাহ ভাইরাস নিয়ন্ত্রনের লক্ষ্যে ঢাকার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, রোগতন্ত্র, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং কলেরা হাসপাতাল (আইসিডিআরবি) থেকে মোট ৬ সদস্যের একটি চিকিৎক দল ভালাইন ও বালুবাজার গ্রাম পরিদর্শন করবেন বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন মোজাহার হোসেন।



মন্তব্য চালু নেই