মানুষের উদ্বৃত্ত খাদ্য যাচ্ছে গরু হাঁস মুরগি মাছের পেটে!

বাংলাদেশে বছরে প্রায় ৩ কোটি ৬০ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য উৎপাদন হয়। অথচ প্রায় ১৬ কোটি জনসংখ্যার এই দেশে বছরে খাদ্য চাহিদা ৩ কোটি টনের মতো। বাকি প্রায় ৬০ লাখ টন খাদ্য উদ্বৃত্ত থাকে। তারপরও আমদানি করা হচ্ছে খাদ্য। যদিও সীমিত আকারে কিছু পরিমাণ চাল রপ্তানিও করা হয়।

তবে এই উদ্বৃত্ত খাদ্য যায় কোথায়? জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘গরু-মহিষ, হাঁস-মুরগি ও মাছের খাবার হিসেবে তাদের পেটে যাচ্ছে। এছাড়া কিছু উৎপাদন প্রক্রিয়ায়ও লস হয়।’

এর ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘দেশে এখন গোচারণ ভূমি কমে গেছে। গরু-মহিষকে এখন জাউ-ভাত রান্না করে খাওয়ানো হয়। মাছ এখন আর শ্যাওলা খেয়ে বড় হয় না। বেশিরভাগ মাছই চাষের মাধ্যমে উৎপাদন হয়। আর এই মাছের জন্যও খাদ্য সরবরাহ করতে হয়।’

কুড়া এখন আর হাঁস-মুরগি খেতে পারে না জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘এই কুড়া দিয়ে তেল উৎপাদন করা হচ্ছে। হাঁস-মুরগি এখন ঘাস, শামুক কিংবা পোকামাকড় খেয়েও বড় হয় না। এসব উৎপাদনে বাণিজ্যিকভাবে ফার্ম করা হয়। এতেও খাদ্যের একটা অংশ চলে যায়। এছাড়া উৎপাদন প্রক্রিয়াও খাদ্য নষ্ট হয়। যেমন, বস্তায় ভরা এবং এক স্থান থেকে অন্যস্থানে আনা নেয়া বা পরিবহনের সময়ও অনেক খাদ্য পড়ে যায় বা লস হয়।’

তাহলে কেন আবার বিদেশ থেকে খাদ্য আমদানি করা হয়, এর জবাবে মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘আমি বলতে পারবো না। এটা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিষয়। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন।’

চাল আমদানির বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কৌশলী উত্তর, ‘বেশি না, খুব সামান্য চালই আমদানি করা হয়।’

এদিকে বিআইডিএস’র তথ্য মতে, দেশের জনসংখ্যা ১৫ কোটি ৮৯ লাখ ৪০ হাজার। এই জনসংখ্যার জন্য বছরে খাদ্য চাহিদা ২ কোটি ৯৫ লাখ মেট্রিক টন। এ হারে দৈনিক জনপ্রতি খাদ্য চাহিদা রয়েছে ৫০৯ গ্রাম। যদিও বছরে প্রায় ৩ কোটি ৬০ লাখ মেট্রিকটন খাদ্য উৎপাদন হয়।

এর মধ্যে বাংলাদেশে বছরে গমের চাহিদা রয়েছে ২৬ লাখ ৮১ হাজার মেট্রিক টন। এতে জনপ্রতি দৈনিক চাহিদা দেখানো হয়েছে ১ দশমিক ৬৩ আউন্স। বছরে চালের চাহিদা ২ কোটি ৬৮ লাখ ২৪ হাজার মেট্রিক টন। দৈনিক জনপ্রতি চালের চাহিদা ১৬ দশমিক ৩১ আউন্স।

গত বছর শ্রীলংকায় ৫০ হাজার মেট্রিকটন চাল রপ্তানি করে বাংলাদেশ। এর বিপরীতে ওই বছর ভারত থেকে প্রায় ১৫ লাখ টন চাল আমদানি করা হয়। এবছরও প্রায় আড়াই লাখ টন চাল আমদানি করা হয়েছে ইতোমধ্যে। আরো আমদানির প্রক্রিয়া চলছে। অন্যদিকে আফ্রিকার কয়েকটি দেশে চাল রপ্তানির জন্য আলাপ-আলোচনা চলছে।

সরকারি গুদামে বেশ খাদ্য মজুদ রয়েছে বলেও জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম। তবে এই মজুদ জমিয়ে রাখলে আগামী বোরো মৌসুমে চাল সংগ্রহ করা কঠিন হয়ে পড়বে। তাই খাদ্যমন্ত্রী বলেছেন, ৫০ লাখ পরিবারকে কম মূল্যে পল্লি রেশনিংয়ের মাধ্যমে ৩০ কেজি করে চাল দেয়া হবে। ধারণা করা হচ্ছে, এই চাল প্রতিকেজি ১০ থেকে ১২ টাকায় দেয়া হতে পারে। আর এতে করেই গুদাম খালি করা সম্ভব।

এছাড়াও মানুষের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন হওয়ায় বাংলাদেশে গমের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে ফাস্টফুডের ব্যবহার বেড়ে গেছে। প্রতিবছর দেশে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ লাখ টন গমের প্রয়োজন হয়। আর এ বছর মোট গম উৎপাদন হয়েছে মাত্র ১৩ লাখ ৯৮ হাজার মেট্রিক টন। এ দেশে গম উৎপাদনের উপযোগী যে পরিমাণ জমি আছে তাতেও সর্বোচ্চ ১৭ থেকে ১৮ লাখ টন গম উৎপাদন সম্ভব। তাই বাংলাদেশকে গম আমদানি নির্ভর হয়েই থাকতে হচ্ছে।

সম্প্রতি খাদ্য পরিধারণ ও পরিকল্পনা কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, এ বছর আভ্যন্তরীণ বাজার থেকে ২ লাখ মেট্রিক টন গম সংগ্রহ করা হবে। দাম দেয়া হবে প্রতিকেজি ২৮ টাকা করে। আর এই প্রতিকেজি গম উৎপাদনে কৃষকের খরচ হয়েছে ২৭ টাকা। তাদের কেজিতে এক টাকা করে লাভ দেয়ার কথা বলা হয়েছে। যদিও বিদেশ থেকে মাত্র ১৫ থেকে ১৬ টাকা দরে গম আমদানি করা হয়।

বিদেশ থেকে কম দামে আনার সুবিধা থাকলেও দেশের বাজার থেকে ২৮ টাকা দরে কেন গম কেনা হচ্ছে জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘দেখেন না পচা গম আসছে! গম নিয়ে নানা প্রশ্নও তোলা হচ্ছে। তাছাড়া ২৮ টাকা দরে গম কিনে কৃষকদের প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। আমাদের কৃষক ও খৃষিখাতকেও তো বাঁচিয়ে রাখতে হবে।’



মন্তব্য চালু নেই