মানবতাবিরোধী আরো দশ মামলা তদন্তাধীন

একাত্তরে মানবতা বিরোধী মামলার একের পর এক রায় হচ্ছে। ফলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রথম দিকে আমলে নেয়া মামলার সংখ্যা ক্রমেই কমে আসছে। বাংলাদেশের সব যুদ্ধাপরাধীর বিচার করার সরকারি অঙ্গীকার বাস্তবায়নে এখন নতুন মামলা সংযোজনের প্রক্রিয়া চলছে। নতুন করে যোগ হচ্ছে ১০টি মামলা।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, আটক, অগ্নিসংযোগ ও মুক্তিপণ আদায়সহ মানবতা বিরোধী বহু অভিযোগে তদন্ত চলছে এই দশটি মামলার। তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত হলেই সেগুলো ট্রাইব্যুনালে বিচারধীন হবে।

তদন্তাধীন এসব মামলার তদন্ত প্রক্রিয়ায় সহায়তার স্বার্থে ইতোমধ্যে প্রতিটি মামলার সঙ্গে প্রসিকিউটরদের (রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী) সংযুক্ত করা হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের পাঠানো ‘অফিস আদেশ’ এর মাধ্যমে তদন্তকারী কর্মকর্তাদেরকে প্রসিকিউটরদের পক্ষ থেকে সহায়তা দেয়ার কথা বলা হয়েছে। অফিস আদেশটি ইস্যু করা হয়েছে গত ২ নভেম্বর।

নতুন এ ১০ মামলার এক নম্বরে রাখা হয়েছে তদন্ত কর্মকর্তা হরি দেবনাথের মামলাটি। এ মামলার আসামি চার জন। তারা হলেন- মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর থানাধীন আলাউদ্দিন চৌধুরী(৭২), একই থানার মাওলানা আকমল আলী, লালমিয়া (৭২) এবং মো. মতিন মিয়া। মামলাটির তদন্তে সহায়তার জন্য সংযুক্ত করা হয়েছে প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী এবং প্রসিকিউটর শেখ মোসফেক কবিরকে।


অফিস আদেশ অনুসারে তদন্ত কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম কক্সবাজার জেলার পেকুয়া থানাধীন মহসীন হায়দার চৌধুরীর মামলাটি তদন্ত করছেন। এর আগে গত ১২ মে মামলাটির তদন্ত কাজ শুরু হয়। এ মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা হলেন প্রসিকিউটর রানাদাশ গুপ্ত এবং প্রসিকিউটর তাপস কান্তি বল।


কক্সবাজার জেলার পেকুয়া থানার সালামত খান উল্লাহ খান প্রকাশ আঞ্জুবর ওরফে ‘পঁচাইয়া রাজাকার’ এর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার তদন্ত শুরু হয় গত ১২ মে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে আছেন তদন্ত কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম। প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম ও প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা বেগমকে এ মামলার তদন্ত কাজে সংযুক্ত করা হয়েছে।


তদন্ত কর্মকর্তা মো. শাহজাহান কবিরের তত্ত্বাবধানে আব্দুল খালেক তালুকদারের (৬৭) মামলার তদন্ত চলছে। তদন্ত শুরু হয় গত ১১ ফেব্রুয়ারি। আব্দুল খালেক নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা থানার বাসিন্দা।তার বাবার নাম মৃত রুস্তম আলী তালুকদার। এ মামলায় তদন্তকারীকে সহযোগিতা করার জন্য আছেন প্রসিকিউটর মোখলেছুর রহমান বাদল এবং প্রসিকিউটর সাবিনা ইয়াসমিন খান।


প্রসিকিউটর মোহাম্মাদ আলী ও প্রসিকিউটর আবুল কালাম আজাদ তদন্ত কর্মকর্তা হরি দেবনাথের মামলাটিতে সংযুক্ত হয়েছেন। এ মামলার তদন্ত গত ১২ অক্টোবর থেকে শুরু করা হয়। মামলায় আসামিরা হলেন- বাগাজুরা গ্রামের মৃত মস্ত মিয়ার ছেলে আল বদর কমান্ডার শামসুল হক, জামুরা গ্রামের ফরজান মিয়ার ছেলে রাজাকার কমান্ডার নেছার আলী এবং সোনাটিকি গ্রামের সুরুজ মিয়ার ছেলে রাজাকার কমান্ডার ইউনুছ মৌলভী। তদন্তাধীন এই তিন আসামির গ্রামের ঠিকানা ও পিতার নাম উল্লেখ থাকলেও অফিস আদেশে তাদের অবস্থানরত জেলার নাম অজ্ঞাত রাখা হয়েছে।


মো. শাহজাহান কবীর তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে মৃত মীরজান আলীর দুই ছেলে রাজাকার আজিজ (হাবুল) ও রাজাকার আব্দুল মতিনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার তদন্ত পরিচালনা করছেন। গত ১৬ অক্টোবর শুরু হওয়া এ তদন্তে প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে প্রসিকিউটর আলতাব উদ্দিন হাওলাদার ও প্রসিকিউটর সৈয়দ সায়েদুল হককে সংযুক্ত করা হয়েছে।


এ মামলায় প্রসিকিউটর হৃষীকেশ সাহা ও প্রসিকিউটর মো. জাহিদ ইমাম মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. আতাউর রহমানকে তদন্তে সহযোগিতা করছেন। ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়িয়া থানার মৃত নায়েব আলী ফকিরের ছেলে মো. রিয়াজ উদ্দিন ফকিরের(৭০) মামলার তদন্ত শুরু হয় গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে।


গত ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ থানার মৃত বানেছ আলী মুন্সীর ছেলে ঘোড়া মারা আজিজের (৫৬) মামলার তদন্ত শুরু হয়।মামলাটি তদন্ত করছেন জেডএম আলতাফুর রহমান। এছাড়াও মামলাটির তদন্তে সহযোগীতা করার জন্য আছেন প্রসিকিউটর আব্দুর রহমান হাওলাদার ও প্রসিকিউটর সৈয়দ সায়েদুল হক।


প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন এবং প্রসিকিউটর তাপস কান্তি বল হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং থানার মহিবুর রহমান ওরফে বড় মিয়ার (৬০) মামলাটি পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন। এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হলেন মো. নুর হোসেন। তিনি গত ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে মামলাটি তদন্ত করে আসছেন।

১০
নতুনভাবে তদন্তাধীন মামলাগুলো দশ নম্বরে রয়েছে ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও থানার মৃত মৌলভী আব্দুল মজিদের ছেলে আবুল ফালাহ মুহাম্মদ ফাইজুল্লাহের (৬২) মামলা। তদন্ত কর্মকর্তা মনোয়ারা বেগম এই মামলাটি গত ১৬ অক্টোবর থেকে তদন্ত কাজ শুরু করেন। এছাড়াও তদন্ত কর্মকর্তাকে মামলার তদন্ত কাজে সহযোগীতার জন্য সংযুক্ত করা হয়েছে প্রসিকিউটর সাহিদুর রহমান ও প্রসিকিউটর আবুল কালাম আজাদকে।

বেশ কিছু দিন ধরে তদন্ত চলতে থাকা এসব মামলার তদন্ত কাজ খুব শিগগিরই শেষ হবে বলে আশা করছেন মামলা সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তারা।

তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা (অতিরিক্ত তদন্ত পরিচালক) মনোয়ারা বেগম বাংলামেইলকে বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের নতুন কিছু মামলার তদন্তভার আমাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তদন্তের কাজও ইতেমধ্যে শুরু হয়েছে। আনুমানিক দু’এক মাসের মধ্যেই এসব মামলার তদন্ত কাজ শেষ হবে। তবে এর পরে আর কোনো যুদ্ধাপরাধী মামলা আসবে কি না তা এখন নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়।’

তদন্ত যথা সময়ে শেষ হবে বলে মনে করেন তদন্ত কর্মকর্তা (পরিদর্শক) মো. শাহজাহান কবীর। তিনি বলেন, ‘মাত্র কিছু দিন আগে মামলাগুলোর তদন্তের কাজ তদন্ত কর্মকর্তাদের হাতে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে প্রতিটি মামলায় প্রসিকিউটরদের সংযুক্ত করা হয়েছে। যা মামলার তদন্ত কার্যক্রমকে আরো বেশি সহায়তা জোগাবে। তবে মামলাগুলোর তদন্ত কাজ কবে নাগাদ শেষ হবে এ বিষয়ে এখন কিছু বলা যাবে না। যথা সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ হবে বলে আশা করি।’



মন্তব্য চালু নেই