‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমাকে বাঁচান!’

নিজের গায়েব হওয়ার আশঙ্কা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বাঁচার আবেদন করেছেন সাংবাদিক প্রবীর সিকদার। প্রবীর সিকদার তাঁর ফেসবুক পেজে বৃহস্পতিবার এ সম্পর্কিত একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। খবর-প্রথম আলো

‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমাকে বাঁচান!’ শিরোনামের এই স্ট্যাটাসে প্রবীর সিকদার বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা, আপনি অবিলম্বে আমাকে বাঁচান। আমি আমার মামলা নিয়ে কোনো ধরনের দয়া ভিক্ষা চাইছি না। ফরিদপুরে দায়ের করা ৫৭ ধারার মামলা ও তার চার্জশিট নিয়ে আমি মোটেই বিচলিত নই। আইন ও বিচারব্যবস্থা স্বাধীনভাবে কাজ করলে আমি নিশ্চিত, আইনি লড়াই করেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সোনার বাংলায় আমি টিকে থাকব, থাকবই। আমাকে যেন আর কেউ মিথ্যা মামলায় হয়রানি করতে না পারে, কিংবা ভুয়া গোয়েন্দা পরিচয়ে জিজ্ঞাসাবাদের নামে তুলে নিয়ে আমাকে গায়েব করে ফেলতে না পারে, সেটা আপনি নিশ্চিত করবেন, প্লিজ।’

ওই স্ট্যাটাসে প্রবীর সিকদার বলেন, ‘আমার এই শঙ্কার কারণ, ফরিদপুরে আমার পক্ষে আইনি লড়াই করছেন মাত্র একজন আইনজীবী। গত তিন দিন ধরে আমার মামলার চার্জশিটের নকল তুলতে পারছেন না ওই আইনজীবী। এই কষ্টের কথা আমি আপনি ছাড়া আর কাকেই বা বলব, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী!’

এ ব্যাপারে প্রবীর সিকদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘গতকাল বৃহস্পতিবার আমি ওই স্ট্যাটাস দিয়েছি। আগে প্রাণনাশের আশঙ্কায় আমি জিডি করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু সে সময় জিডি নেওয়া হয়নি। এখনো প্রশাসনকে বলে কী লাভ? আমার পক্ষে একজন আইনজীবী দাঁড়িয়েছেন। আইনি লড়াই লড়ছেন। তিনিও স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারছেন না। তাই আমার শঙ্কা যে আমাকে কেউ গায়েব করতে পারে।’

সাংবাদিক প্রবীর সিকদারের বিরুদ্ধে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ (২) ধারায় দায়ের করা মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। গত মঙ্গলবার এ মামলার ধার্য তারিখে জেলার ১ নম্বর আমলি আদালতে অভিযোগপত্র উপস্থাপন করা হয়। অতিরিক্ত বিচারিক হাকিম মো. মাসুদ আলী তাৎক্ষণিকভাবে মামলাটি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের সাইবার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করার নির্দেশ দেন। মামলার পরবর্তী তারিখ ধার্য করা হয়েছে আগামী ২৫ মে।

সাংবাদিক প্রবীর সিকদার দৈনিক বাংলা ৭১, উত্তরাধিকার-৭১ নিউজ অনলাইন পত্রিকা ও উত্তরাধিকার নামের এক ত্রৈমাসিক পত্রিকার সম্পাদক।

গত বছর ১৬ আগস্ট প্রবীর সিকদারকে একমাত্র আসামি করে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় তথ্য ও প্রযুক্তি আইনে মামলা হয়। মামলাটি করেন জেলা পূজা উদ্‌যাপন কমিটির উপদেষ্টা স্বপন পাল। স্বপন পাল জেলা জজ কোর্টের একজন এপিপি।

মামলার বাদী এজাহারে উল্লেখ করেন, প্রবীর সিকদার তাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ১০ আগস্ট বেলা ১১টা ১৫ মিনিটে ‘আমার জীবন শঙ্কা তথা মৃত্যুর জন্য যারা দায়ী থাকবেন’ শিরোনামে জনসমক্ষে একটি স্ট্যাটাস পোস্ট করেন। তাঁর নিচে তিনি (প্রবীর সিকদার) তাঁর মৃত্যুর জন্য দায়ী থাকবেন হিসেবে তিনজনের নাম উল্লেখ করেন। এর মধ্যে ১ নম্বরে বাংলাদেশ সরকারের এলজিআরডি মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নাম রয়েছে। এজাহারে বাদী অভিযোগ করেন, ‘এই পোস্টটি পড়ে আমার দৃঢ় বিশ্বাস হয় যে প্রবীর সিকদার ইচ্ছাকৃতভাবে গণমানুষের প্রিয় নেতা মাননীয় মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন সম্পর্কে মিথ্যা-অসত্য লেখা লিখে তাঁর নিজস্ব ফেসবুকে পোস্ট করে মাননীয় মন্ত্রীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছেন। উক্ত লেখাটি জনসমক্ষে প্রকাশের মাধ্যমে উসকানি প্রদান করে শান্তিপ্রিয় মানুষের কাছে মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়কে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য বিদ্বেষ ছড়িয়েছেন। এর ফলে মাননীয় মন্ত্রীর মানহানি ঘটেছে; যা একটি ফৌজদারি অপরাধ।’

গত ১৬ আগস্ট রাতেই প্রবীর সিকদারকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় আনা হয়। পরে তাঁকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়। পরদিন আদালতে প্রবীর সিকদারের রিমান্ডের আবেদনের শুনানি হয়। শুনানি শেষে আদালত তাঁর তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। গত ১৯ আগস্ট প্রবীর সিকদারকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়।



মন্তব্য চালু নেই