মাতৃভাষা দিবসে জামায়াত নেতার সাথে বনভোজনে ইউএনও

একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও শহীদ দিবস পালন বাদ দিয়ে জামায়াত নেতাকে নিয়ে প্রমোদ ভ্রমণে দিন কাটালেন আটঘরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভ্রমণের ছবি দেখে সমালোচনার ঝড় উঠেছে পাবনায়। ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন স্থানীয় সুধী সমাজ, সাংস্কৃতিক কর্মী ও মুক্তিযোদ্ধারা।

জানা গেছে, ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও মহান শহীদ দিবসে আটঘরিয়ায় ঢিলেঢালাভাবে পালন করে উপজেলা প্রশাসন। ওই দিন উপজেলা অফিসার্স ক্লাবের উদ্যোগে পরিষদের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা পাকশীতে বনভোজনে ব্যাস্ত সময় কাটিয়েছেন। যার নেতৃত্বে ছিলেন, আটঘরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইদুজ্জামান। আমন্ত্রিত অতিথী হিসেবে তার সাথে ছিলেন, পাবনা জেলা জামায়াতের নায়াবে আমীর (ভারপ্রাপ্ত আমীর) ও উপজেলা চেয়ারম্যান মাও. জহুরুল ইসলাম খান। দিনভর তারা পদ্মানদীতে নৌ ভ্রমণ, দুপুরে ভোজসহ বিভিন্ন প্রমোদ আড্ডায় মেতে সময় পার করেন। পরদিন প্রমোদ ভ্রমণের এসব ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রকাশ করেন উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা কর্মচারীরা। যা দেখে ক্ষুব্ধ হয় স্থানীয় লোকজন ও সুধী সমাজ। পরে বিষয়টি ছড়িয়ে পরলে জেলা জুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে।

উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, সরকারি নিয়ম রক্ষার্থে উপজেলা প্রশাসন একুশে ফেব্রুয়ারী উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করে দাওয়াত পত্র বিতরণ করেন। কিন্তু পিকনিকের জন্যে রাত ১২টা এক মিনিটে শহীদ মিনারে পুস্পস্তবক অর্পণ ছাড়া আর কোন কর্মসূচি পালন করে না উপজেলা প্রশাসন। পরে স্থানীয় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের নিয়ে গঠিত কমিটি নাম মাত্র উপজেলা প্রশাসনের নামে কর্মসূচিগুলো পালন করে থাকেন।

এ ব্যাপারে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার জহুরুল হক বলেন, যদি ২১শে ফেব্রুয়ারি শোকের দিনে উপজেলা প্রশাসন জামায়াত নেতাকে সঙ্গে নিয়ে এ ধরনের আয়োজন করে থাকেন, তাহলে এই ন্যাক্কারজনক আয়োজনকে আমরা ঘৃণা জানাই। আটঘরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল গফুর মিয়া বলেন, শোকের দিনে এ ধরনের অপকর্ম থেকে বিরত থাকতে হবে। আর এ ধরনের আয়োজন নিন্দনীয় ও দুঃখজনক।

পাবনা ড্রামা সার্কেলের সাধারণ সম্পাদক রাসেল রহমান বলেন, শোকের দিনে এ ধরনের আয়োজন ভাষা শহীদদের অবমাননা করার শামিল। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।

জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি জাকির হোসেন বলেন, যেখানে সারা বিশ্ববাসী দিবসটিকে স্মরণ করছেন, সেখানে একজন সরকারি কর্মকর্তা প্রমোদ ভ্রমণ করেন কী করে। বিষয়টি আমাদের বোধগম্য নয়। এদের শরীরে জামায়াত শিবিরের রক্ত প্রবাহিত বলেই সম্ভব।

এ বিষয়ে আটঘরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ সাইদুজ্জামান বলেন, শুধু এবারই নয়, এর আগের একুশে ফেব্রুয়ারিতেও এভাবে বনভোজন হয়েছে। এখানে জামায়াত নেতা বলে কোনো কথা নয়, তিনি একজন জনপ্রতিনিধি, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। আর শুধু আমরাই নয়, উপজেলা প্রশাসন ও থানা প্রশাসনের অনেকেই ছিলেন। তবে শোকের দিন এমন বনভোজন করা কতটুকু ন্যায়সঙ্গত এমন প্রশ্নের উত্তের তিনি বলেন, একুশে ফেব্রুয়ারি বনভোজন না করে অন্য কোনো দিন করা যেত, তবে অনেকে থাকে না বিধায় সবার উৎসাহে ওইদিন করা হয়েছে। বিষয়টি অন্যভাবে দেখার সুযোগ নেই।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক রেখা রানী বালো বলেন, জাতীয় দিবসের ছুটি কাটানোর জন্যে নয়, দিবস পালনের জন্যেই ছুটি দেয়া হয়ে থাকে। আর যেহেতু শহীদ দিবস, এই দিনে আনন্দ ভ্রমনের কোন সুযোগ নেই। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখবো।



মন্তব্য চালু নেই