মাগো আমার, কোন দ্যাশে ছিলা?

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ির বিলুপ্ত ছিটমহল দাসিয়ারছড়ায় আসলেন শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর সফর এর আগে কখনও দেখেনি এলাকাবাসী। দলে দলে ছুটে আসলেন তারা। আসলো বৃদ্ধ, যুবক, শিশু-দলে দলে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী বলে কথা, কড়া নিরাপত্তা ঠেলে তার কাছে যাওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন বেশিরভাগ।

সফরে বিলুপ্ত ছিটমহলবাসীর উন্নয়নে বেশ কিছু প্রকল্প ‍উদ্বোধন শেষে মঞ্চ থেকে নেমে যাওয়ার সময় শেখ হাসিনা দেখেন কয়েকজন নারী ঢ়িড় ঠেলে আসার চেষ্টা করছেন। কিন্তু আটকে দিচ্ছে নিরাপত্তারক্ষীরা। প্রধানমন্ত্রী বললেন “ওদের আসতে দাও”। এক অশীতিপর বৃদ্ধা কাছে এসে ব্যাকুল স্বরে বললেন, ‘মাগো, হামরা বিদ্যুৎ পায়া খুব খুশি। ছিটের মানুষ সারা জীবন আন্দারোত আছিল। রাইতোত কুপি জ্বালাই। তোমরায় হামাক বাতি দিলেন। মাগো খুব খুশি হইছি। খুশিতে একনা গান বানাছো। তোমার জন্য গান বানছিলাম মা, গাইতে পারলাম না, ফুল আনছিলাম, দিতে পারলাম না”। প্রধানমন্ত্রী হাত বাড়িয়ে প্ল্যাটফর্মের উপর তাঁর পাশে টেনে তুললেন বৃদ্ধাকে। বললেন “আপনার গান শোনান”।

তার নাম করফুলা বেওয়া। বয়স ছাড়িয়েছে ৯০ এর কোটা। তিনি যখন গাইছিলেন, পুরোটা সময় তাকে ধরে রাখলেন শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীকে মা হিসেবেই গান রচনা করেছেন করফুলা। মায়ের মমতা দিয়েই শেখ হাসিনাও আগলে রাখলেন তাকে।

capture_87057_1

করফুলা বেওয়া সুর করে গাইতে থাকেন, ‘মাগো আমার, কোন দ্যাশে ছিলা? তুমি মা জননী, জগৎ তরণী। আলো পাইলাম। তোমায় পাইলাম।’ গান শুনে প্রধানমন্ত্রী বৃদ্ধাকে বুকে জড়িয়ে ধরেন।

বৃদ্ধা করফুলা বেওয়া সেকেন্দার আলীর স্ত্রী। তাঁর বাড়ি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার ভেতরে সাবেক ছিটমহল দাসিয়ারছড়ার ৫ নম্বর ওয়ার্ড হাবিবপুরে। তাঁর এক ছেলে ও এক মেয়ে। তিনি এখন ছেলের সঙ্গে থাকেন।

প্রধানমন্ত্রী বুকে টেনে নিয়ে আদর করায় কেমন লাগল? জানতে চাইলে করফুলা বলেন, ‘মনে হয় মায়ের বুকে মাথা দিয়া আছি। হাসিনা আলো দিয়া আন্ধার দূর করছে।’ প্রধানমন্ত্রীর কাছে কিছু চেয়েছেন? উত্তরে বৃদ্ধা বলেন, ‘হামরা গরিব মানুষ। তার কাছে কী চামো? ছিটের ছাওয়া পাওয়াগুলা যেন কাম কাজ করি খাবার পায়, সে ব্যবস্থা যেন করে।’

ভিডিও:



মন্তব্য চালু নেই