মসজিদ কমিটির সদস্যদের তথ্য নিচ্ছে গোয়েন্দারা

জঙ্গিবাদ রোধে দেশের মসজিদগুলোর কমিটির সদস্য ও ইমামদের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করছে গোয়েন্দা পুলিশ।

মসজিদগুলোকে যেন জঙ্গিবাদ প্রসারে ব্যবহৃত না হয় সেজন্য এসব তথ্য নেয়া হচ্ছে বলে রবিবার সন্ধ্যায় বিবিসি অনলাইনের এক প্রতিবেদনে জানা গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে জঙ্গিবাদী তৎপরতায় ইসলাম ধর্মের ব্যবহার প্রতিরোধে এবং এর সম্পর্কে সঠিক বার্তা দিতে মসজিদভিত্তিক নানা ধরনের প্রচারণা কার্যক্রম ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে।

কমলাপুর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব খাজা মোহাম্মদ আরিফ রহমানের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের কাছে দেশব্যাপী ইমাম ও মসজিদ কমিটির সদস্যদের তালিকা চাওয়া হয়েছে। তারা ঢাকায় উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মসজিদগুলোর ওপর কাজ করছেন।

খাজা মোহাম্মদ আরিফ বলেন, বাংলাদেশে প্রায় তিন লাখ মসজিদ রয়েছে, যার মধ্যে কোনো কোনোটিতে আলেম-ওলামারাই উগ্রপন্থী মতাদর্শে বিশ্বাসী এবং তারা ইসলাম সম্পর্কে বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য দিয়ে থাকেন। তারা এখন বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলে জঙ্গিবাদ-বিরোধী প্রচারণা চালানোর কাজ করছেন বলে জানান।

বাংলাদেশে সম্প্রতি কজন ব্লগার হত্যা, শিয়া মসজিদ ও ধর্মীয় স্থাপনায় হামলা, বিদেশি নাগরিক হত্যাকা- ও কজন খ্রিষ্টান পাদ্রীকে হুমকির ঘটনায় পুলিশ জঙ্গিবাদের সংশ্লিষ্টতার কথা বলছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের অধ্যাপক সায়িদ আবদুল্লাহ আল মাজিদ বলছেন, মসজিদে মানুষজনের যে ধরনের জমায়েত হয়, বিশেষ করে শুক্রবার তাদের সেখানে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দিয়ে মসজিদ জঙ্গিবাদ রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

তার মতে, শুধু মসজিদ নয় এই কার্যক্রম হওয়া উচিত মাদ্রাসা-ভিত্তিকও। তবে কাছাকাছি সময়ে পুলিশ জঙ্গি কর্মকা-ের সম্পৃক্ততার জন্য যাদের আটক করেছে তাদের বেশির ভাগই বিশ্ববিদ্যালয়-পড়–য়া ছাত্র।

বাংলাদেশে পুলিশ ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, জঙ্গিবাদের সঙ্গে সম্পৃক্তরা ইদানীং তাদের কৌশল পরিবর্তন করছে এবং পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকার জন্য ছোট দলে কাজ করছে।

বাংলাদেশে ডিসেম্বরের শেষের দিকে পর পর দুটি অভিযানে পুলিশ চট্টগ্রামের হাটহাজারী এবং ঢাকার মিরপুরে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি স্নাইপার রাইফেল ও সেনাবাহিনীর পোশাক উদ্ধার করে।

মিরপুরে উদ্ধার করা হয় গ্রেনেড, বিপুল পরিমাণ বোমা, বোমা তৈরির সরঞ্জাম ও সুইসাইড ভেস্ট।

সেখানে বোমা ও গ্রেনেড বানানোর একজন প্রশিক্ষকও ছিলও বলে জানিয়েছে পুলিশ।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইন ও শালিস কেন্দ্রের জঙ্গিবাদ বিশেষজ্ঞ নুর খান লিটন বলেন, জঙ্গিবাদ রোধে শুধু মসজিদ-ভিত্তিক কার্যক্রম নিয়ে এগুনো সঠিক সিদ্ধান্ত নয়।

তার মতে, “পুলিশ বা প্রশাসনকে যুক্ত করার আগে রাজনীতিবিদরা যদি ধর্মীয় নেতাদের সাথে প্রাথমিকভাবে কাজ করতেন তাহলে ফল হতো। কারণ পুলিশকে ব্যবহার করলে মুসল্লিদের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।”

এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের দক্ষিণ বিভাগের উপ-কমিশনার মো. মাশরেকুর রহমান খালেদ  বলেন, মসজিদ কমিটির সদস্যদের কাছ থেকে গোয়েন্দা পুলিশের তথ্য সংগ্রহের বিষয়টি আমার জানা নেই।

“জঙ্গিবাদ শুধু মসজিদ-কেন্দ্রিক বা নির্দিষ্ট কোন বলয়ে সীমাবদ্ধ নয়। এটি সমাজের সব জায়গায় বিস্তৃত। তাই সমাজের সর্বস্তরেই প্রচারণা দরকার। শুধু মসজিদে কাজ করার মানে সমাজের একটি অংশকে আলাদা করে দেখা। তাতে ক ধরনের বৈষম্য তৈরি হতে পারে।ঢাকাটাইমস



মন্তব্য চালু নেই