তিস্তাপাড়ের কোটি মানুষের দাবি: 'আমাদের হতাশ করবেন না দিদি'

মমতা আজ আসছেন সেলিব্রেটি বহর নিয়ে

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আজ ১৯ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সফরে আসছেন। তিন দিনের এই সফরে তিনি নিয়ে আসছেন বিশাল লটবহর। সঙ্গে নামিদামি সব তারকা। মমতার এ সফরে ভারতের সঙ্গে বিদ্যমান অনেক অমীমাংসিত বিষয় সমাধানের মুখ দেখবে বলে আশা করছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র দপ্তর। যদিও সফরটি ২১ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রিক। মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে অমীমাংসিত বেশ কয়েকটি ইস্যু, বিশেষ করে তিস্তা চুক্তির ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের যে সহযোগিতা দরকার মমতার এ সফরের মধ্যে দিয়ে সেটি পাওয়া যাবে বলে প্রত্যাশা করি আমরা।’ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে মমতার এ সফর হলেও বেশ কয়েকটি সৌজন্য সাক্ষাৎও হবে বলে জানান মন্ত্রী। পশ্চিমবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে এটিই মমতার প্রথম ঢাকা সফর। শাহরিয়ার আলম আরো জানান, অফিসিয়ালি ১৮ জনের একটি প্রতিনিধি দল থাকছে মমতার সঙ্গে। তবে অনানুষ্ঠানিকভাবে আরো ২১ জনের নাম জানা যাচ্ছে। সরকার এই সফরে নানা সমস্যা সমাধানের আশাবাদ ব্যক্ত করলেও বাস্তবে শুধুই সম্পর্ক উন্নয়নের সফর বলেই মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এটি মূলত কেন্দ্রীয় সরকারের অ্যাসাইনমেন্ট!

মমতার সফরসঙ্গী হিসেবে যারা থাকছেন:

আনুষ্ঠানিক সফরসঙ্গী
নগর উন্নয়ন মন্ত্রী ফরহাদ হাকিম, পর্যটন মন্ত্রী ব্রাত্য বসু, দীপক অধিকারী এমপি, অভিনেত্রী ও নির্মাতা মুনমুন সেন এমপি, মুখ্য সচিব সঞ্জয় মিত্র, ব্যক্তিগত সচিব (এমএসএমই অ্যান্ড টি) রাজিব সিনহা, মুখ্যমন্ত্রীর সচিব গৌতম সান্যাল, নিরাপত্তা পরিচালক শ্রী বীরেন্দ্র, ডব্লিউআইডিসির ব্যস্থাপনা পরিচালক কৃষ্ণ গুপ্ত, মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয়ের ব্যক্তিগত সচিব কুসুম কুমার দ্বিবেদী, মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয়ের ব্যক্তিগত সচিব স্বরূপ গোস্বামী, অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, পরিচালক গৌতম ঘোষ, সুবোধ সরকার, কল্যাণী কাজী, শিল্পী নচিকেতা চক্রবর্তী, অরিন্দম শীল

অনানুষ্ঠানিক সফরসঙ্গী
হারশ নেওতিয়া, শ্রীকান্ত মোহতা, অনিন্দ্য যানা, শিল্পী ইন্দ্রানী সেন, শিবাজী পানজা, বিশ্ব মজুমদার, শিল্পী ও গীতিকার সুমন চট্টোপাধ্যায়, আসাবুল, উদিত প্রসন্ন মুখোপাধ্যায়, অশোক মজুমদার, কিংশুক প্রামাণিক, দ্বিপঙ্কর নন্দী, পুশন গুপ্ত, দুর্বার গাঙ্গুলী, সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায়, পল্লবী ঘোষ, উজ্জ্বল সিনহা, রজত রায় চৌধুরী, জয়দেব যানা, অগ্নী রায় এবং দেবদীপ পুরোহিত।

তিস্তাপাড়ের কোটি মানুষের দাবি: ‘আমাদের হতাশ করবেন না দিদি’

LALMONIRHAT-BM-up

লালমনিরহাট: ধূ ধূ বালুচরে পরিণত হওয়া তিস্তা অববাহিকার লাখো মানুষ এখন চাতক পাখির মতো চেয়ে আছে কখন পানির জোয়ার বইবে নদীতে। এমন আশায় বুক বেঁধেছেন তিস্তার সুবিধাভোগী প্রায় কোটি মানুষ। এবার তারা আর আশাহত হতে চান না। তাদের আশা, সেই বেদনার বালুচর পূর্ণ হয়ে উঠবে পানিতে।

১৯ ফেব্রুয়ারি ভারতের তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় তিনদিনের সফরে আসছেন বাংলাদেশে। এ খবর তিস্তা অববাহিকায় ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে চলছে আলোচনার ঝড়। তিস্তাপাড়ের মানুষের কথা, মমতাদি এবার আর আমাদের হতাশ করবেন না। ২০১১ সালে আমাদের তিনি হতাশ করেছিলেন। এবার আশায় বুক বেঁধেছেন তারা, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তিস্তার পানি চুক্তির অবশ্যই সমাধান করবেন।

বাংলাদেশে সফরকালে মমতা বন্দোপাধ্যায়কে তিস্তা অববাহিকা পরিদর্শনের বিনীত অনুরোধ জানিয়েছেন তারা। আর এ দাবিতে বুধবার দুপুরে শত শত কৃষক তিস্তার ডানতীরে সমাবেশ করে পানির দাবিতে মানববন্ধন করে।

মানববন্ধনের মধ্যে দিয়ে শত শত কৃষকরা মমতা বন্দোপাধ্যায়কে জানাতে চান, তিনি যেন তিস্তাপাড়ের কোটি মানুষকে হতাশার সাগরে আর না ডুবান।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বাংলাদেশে আসছেন- বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত এ খবর এখন তিস্তাপাড়ের কোটি কোটি মানুষের মুখে। মমতার পরেই আসছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। তারা বাংলাদেশকে চমকে দেবেন-এমন খবরও তাদের কাছে আছে।

সূত্রমতে, চলতি মাসেই ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে ভারতের সংসদীয় অধিবেশন। ওই অধিবেশনেই বাজেট পেশ করা হবে ও পাসও হবে। ওই অধিবেশনের প্রথম পর্ব শেষ হবে ২০ মার্চ। এ সময়ের মধ্যেই সীমান্ত বিল রূপায়নের জন্য ১১৯তম সংবিধান সংশোধন বিলটি দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে সংসদের দুই কক্ষেই পাস করাতে হবে। তৃণমূল কংগ্রেস বিল পাসে রাজি হওয়ায় আর কোনো সংশয়ও থাকছে না। ধারণা করা হচ্ছে বিল পাস করিয়েই ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সফরে আসবেন।

বিভিন্ন সূত্র বলছে, আগামী ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস। সেই দিনটিকেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পছন্দ করতে পারেন।

এদিকে, ভারত সরকারের এ অবস্থানকে স্বাগত জানিয়ে ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির নেতা দীপ্তিমান সেনগুপ্ত বাংলামেইলকে জানান, স্থলসীমান্ত চুক্তি বিল সংসদে পাস হওয়াটা এখন সময়ের অপেক্ষা। আশার আলো দেখছেন দুদেশের ১৬২টি ছিটমহলের প্রায় ৫৬ হাজার অধিবাসী।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের আগেই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসছেন। সূত্রমতে, মাতৃভাষা দিবসে যোগ দেয়া উদ্দেশ্য হলেও মমতা বন্দোপাধ্যায় তিস্তার পানি বণ্টন, সীমান্তে সন্ত্রাস বন্ধ এবং ছিটমহল বিনিময়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে চূড়ান্ত আলোচনা করবেন।

এদিকে, সম্ভাবনা জাগিয়েও বারবার থেমে যাচ্ছে তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি। এ চুক্তি বাস্তবায়নে যত দেরি হচ্ছে ততই হাহাকার বাড়ছে তিস্তা অববাহিকার লাখো মানুষের। পানির অভাবে নদীপাড়ের জমিগুলো ধূ-ধূ বালুচরে পরিণত হচ্ছে। দিন দিন নদীর পানি হ্রাস পাওয়ায় গত বছরের চেয়ে চলতি রবি ও খারিপ-১ মওসুমে তিস্তা ব্যারাজের মাধ্যমে সেচ প্রদানে জমির পরিমান ৩৭ হাজার ৫শত হেক্টর কমিয়ে আনা হয়েছে। তিস্তায় প্রবাহ কম থাকায় চলতি মওসুমে অর্ধেক জমিতে পানি সরবরাহ করা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

তিস্তার পানি প্রবাহ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রাফিউল বারী বলেন, তিস্তা নদীতে পানি প্রবাহ একেবারেই কমে গেছে। এ পানি দিয়ে সেচ দেয়া পুরোপুর অসম্ভব।



মন্তব্য চালু নেই