কল্যাণপুর অভিযান

মনিরুলের প্রশ্ন, কেউ কি আশা করেছিলেন চার পুলিশ মারা যাক

রাজধানীর কল্যাণপুরের একটি জঙ্গি আস্তানায় মঙ্গলবার ভোরের পুলিশি অভিযান নিয়ে কেউ কেউ বিতর্ক সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যকে কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন- ‘এত বড় অভিযানে নয় জঙ্গি মারা গেল, কিন্তু পুলিশ সদস্যদের কিছুই হলো না কেন।

এমন বিতর্কের জবাব দিয়েছেন পুলিশের বিশেষ শাখা কাউন্টার টেররিজম শাখার প্রধান মনিরুল ইসলাম। তিনি লিখেন, ‘দুঃখিত, বন্ধু, এরকম একটা খবর যদি আপনি আশা করে থাকেন- তাহলে আমরা আপনার প্রত্যাশা পূরণ করতে পারিনি! প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ায় আপনি যদি কষ্ট পেয়ে থাকেন, আমরা সত্যিই দুঃখিত!’

মঙ্গলবার গভীর রাতে তিনি স্ট্যাটাস লিখেন।

গত সোমবার গভীর রাতে রাজধানীল কল্যাণপুরের ৫ নম্বর সড়কের জাহাজ বাড়িতে ‘জঙ্গিদের’ একটি আস্তানায় ঘেরাও করে পুলিশ। পরদিন ভোরে এক ঘণ্টার অভিযানে নিহত হয় সন্দেহভাজন নয় জঙ্গি। ধরা পড়েন একজন। অভিযানে ওই কক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএসের পতাকা, তাদের মত পোশাক, চারটি পিস্তল ও বেশ কিছু ধারাল অস্ত্র উদ্ধার করে পুলিশ।

এর আগে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে সেনাবাহিনীর কমান্ডো অভিযানে নিহত নয় পাঁচ জঙ্গি। এর আগেই তারা ২০ জিম্মিকে হত্যা করে। তাদেরকে উদ্ধারে যাওয়ার চেষ্টাকালে দুই পুলিশ কর্মকর্তাও জঙ্গিদের ছোড়া গুলি ও গ্রেনেডে নিহত হন। ওই অভিযানে পুলিশের ক্ষয়ক্ষতি হলেও কল্যাণপুরে তেমন কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। এ জন্যই কেউ কেউ এই অভিযান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। বিএনপি নেতা হান্নান শাহও বলেছেন, নিহতরা জঙ্গি কি না সে বিষয়ে তার প্রশ্ন আছে।

উঠা এসব নানা কথার জবাব দেন মনিরুল ইসলাম। তিনি লিখেন, ‘কল্যাণপুরে জঙ্গি আস্তানায় অভিযানকালে সন্ত্রাসীদের গ্রেনেড নিক্ষেপে পুলিশের ৪ কর্মকর্তার মৃত্যু, আহত ৪২ কর্মকর্তা, তিন জঙ্গি গ্রেপ্তার হলেও বাকিরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে! দুঃখিত, বন্ধু, এরকম একটা খবর যদি আপনি আশা করে থাকেন তাহলে আমরা আপনার প্রত্যাশা পূরণ করতে পারিনি! প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ায় আপনি যদি কষ্ট পেয়ে থাকেন, আমরা সত্যিই দুঃখিত!

মনিরুল লিখেছেন, ‘নাম-ঠিকানা না জেনে জঙ্গি বলছেন কীভাবে?’ ‘জঙ্গিরা এরকম পাঞ্জাবি, কেডস পরে ঘুমাতে গিয়েছিল কেন?’ ‘চারটি পিস্তল দিয়ে কিভাবে সারারাত মুর্হূমুর্হূ গুলি চালানো সম্ভব?’ ‘কেন তাদের জীবিত ধরা গেল না?’ এরকম অনেক যৌক্তিক প্রশ্ন কারো মনে আসতেই পারে।

পুলিশ কর্মকর্তা লিখেন ‘আমি যদি বলি, আপনি বুঝেও না বোঝার ভান করছেন- আপনি খণ্ডাবেন কি করে? গোটা সোস্যাল মিডিয়াজুড়ে আলোচনা হচ্ছে যে, প্রতিবশীরা বলছে- ওই বাসার লোকেরা সারারাতই কথিত জিহাদের স্বপক্ষে স্লোগান দিয়েছে, তাদের রুমে কথিত আইএসের পতাকা পাওয়া গিয়েছে, প্রচুরসংখ্যক উগ্রবাদী বইপুস্তক পাওয়া গেছে। তারপরও এরা জঙ্গি কিনা তা বোঝার জন্য কি রিসার্চের প্রয়োজন আছে?’

কল্যাণপুর অভিযানের একটি বর্ণনাও দেন মনিরুল ইসলাম। তিনি লিখেন, ‘আনুমানিক রাত একটার কাছাকাছি পুলিশের প্রথম দলটি বাসাটিতে নক করে এবং প্রথম দফা সংঘর্ষের পরে প্রায় সারারাত বিল্ডিংটা কর্ডন করে রাখা হয়। চূড়ান্ত অভিযান শুরু হয় ভোর ৫.৫০ এর দিকে। এতদীর্ঘ সময় তারা ঘুমিয়ে ছিল কিনা, এই পোশাক পরার সময় পেয়েছিল কিনা তা বোঝার জন্য বুদ্ধিজীবী হওয়ার প্রয়োজন আছে কিনা দয়া করে ভেবে দেখবেন কি?’

সারারাত মূর্হূমূর্হূ গোলাগুলি হয়েছে-এমন তথ্য ভুল বলে জানান মনিরুল ইসলাম। বলেন, ‘এরকম কোন তথ্য আমার জানা নাই। আমি যতটুকু জানি, যখনই পুলিশ বাসাটিতে ঢুকতে চেষ্টা করেছে ততবারই গুলি চালানো হয়েছে। চূড়ান্ত অভিযান হয়েছে একঘণ্টার কাছাকাছি। ঐ সময়েই মূলত চূড়ান্ত গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। আপনার বিশ্বাস এ তথ্য আপনার অজানা নয়। তাহলে কেন এরকম প্রশ্ন তুলছেন? পুলিশের সাফল্য মানতে পারছেন না তাইতো!’

মনিরুল লিখেন, ‘আপনি তো সবজান্তা অথচ আপনি এই ধরনের অপারেশনগুলোর ইতিহাস জানেন না। দেশে এবং দেশের বাইরে কোথায় এই ধরনের অপারেশনে কতজন জীবিত গ্রেপ্তার হয়েছে জানালে বাধিত হব। আসলে, পুলিশের কেউ মারা যায়নি কিংবা কেউ গুরুতর আহত হয়নি- এতেই তো আপনার যতো আপত্তি তাই না, বন্ধু।’



মন্তব্য চালু নেই