ভয়ঙ্কর রূপ নিচ্ছে ইন্টারনেটে ব্ল্যাকমেলিং । নিজে সাবধান থাকুন, অন্যকেও সাবধান করুন শেয়ার দিয়ে
গ্রাম-শহরের অলি-গলিতে ইন্টারনেটের হাত ধরে ক্রমে ছড়িয়ে পড়ছে ব্ল্যাকমেলিংয়ের ঘটনা। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিংয়ে অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি ছড়িয়ে ‘সেক্সুয়াল ব্ল্যাকমেলিং’ বাড়ছে সব সমাজে। ফলে কিশোরী-তরুণীসহ ভুক্তভুগী নারীরা আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছে। কিছু ঘটনা মিডিয়ার কারণে সামনে এলেও অধিকাংশই চাপা থাকে। লোক-লজ্জার ভয়ে তারা মুখ খুলতে পারে না, মেনে নিতে হয় দুর্বৃত্তকারীর অসৎ কার্যকলাপ। এর ফলে দিনের পর দিন আরও বেশি ভয়ঙ্কর রূপ নিচ্ছে ইন্টারনেটে ব্ল্যাকমেলিংয়ের মতো ঘটনা।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের ৬০টি সাংগঠনিক জেলা শাখা থেকে প্রাপ্ত এবং বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ কর্তৃক ১৪টি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার সংরক্ষিত তথ্যের ভিত্তিতে দেখা যাচ্ছে, নারী নির্যাতন, নারী হত্যা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ নারী নির্যাতনের এসব ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে।
বিভিন্ন ওয়েবসাইট, টরেন্ট লিঙ্ক, ওয়েব সেক্সটিং সাইট (ওয়েবক্যামের মাধ্যমে সেক্স ভিডিও শেয়ার করার সাইট)-এ এখন সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো হোমমেড পর্নোগ্রাফি। অর্থাৎ কোনও অভিনয় ছাড়াই, গোপন ক্যামেরা অথবা পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে যৌনক্রিয়ার দৃশ্য বা ছবি ধারণ করা।
ভারতের সাইবার ক্রাইম বিশেষজ্ঞ বিভাষ চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, ‘ইন্টারনেটে যত তথ্য আছে, তার মধ্যে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশই হলো পর্নোগ্রাফি অথবা সেমি-পর্নোগ্রাফি।
ফেসবুক ব্যবহার করে দুইভাবে নারীদের সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্টের পথ করে দেয়া হচ্ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ফেইক (ভুয়া) অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। সেই অ্যাকাউন্টের প্রোফাইল পিকচারজুড়ে দেয়া হয় ইন্টারনেট থেকে নেয়া সুন্দরী কোনো মেয়ের ছবি কিংবা ফেসবুক ব্যবহারকারী কোনো মেয়ের ওয়াল থেকে নেয়া ছবি। এরপর ফেইক অ্যাকাউন্ট থেকে শুরু হয় বিভিন্ন পর্নো ছবি আপলোড, অশ্লীল সব স্ট্যাটাস দেয়া। কয়েকদিন পর ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ভিকটিম মেয়েটির মোবাইল নম্বর ফেসবুক ওয়ালে স্ট্যাটাস দেয়। সঙ্গে জুড়ে দেয়া হয় সেক্সুয়াল বিভিন্ন প্রস্তাব।
শুধু ফেসবুক না, ব্লগস্পট, ওয়ার্ডপ্রেস ব্লগের মতো জনপ্রিয় মাধ্যমগুলোতে ফ্রি ব্লগ খুলে প্রতিদিন আপডেট করা হচ্ছে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মেয়েদের ছবি, মোবাইল নম্বর। সেকেন্ডেই লাখ লাখ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর কাছে পৌঁছে যাচ্ছে একটি মেয়ের ছবি, মোবাইল নম্বর। বিভিন্ন টরেন্ট লিঙ্কে শুধু দিনে গড়ে প্রায় ৫ থেকে ৮টি ভিডিও শেয়ার হচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনস্তত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপিকা তিলোত্তমাদেবী বলছেন, ‘আমাদের কাছে পর্নো অ্যাডিকশনের প্রচুর কেস আসে। দেখা যায়, এসব ঘটনা পত্রিকায় পড়ে বা অনলাইনে দেখে অনেকে প্রভাবিত হচ্ছে। আবার অনেক সময় চাপের মুখে অনেকে জেনেশুনেও শুধু সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার দায়ে এমন ভিডিও বানাচ্ছে। সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পরে যা ব্ল্যাকমেলিংয়ের কাজে ব্যবহার হচ্ছে। এটা আসলে আধুনিক সময়ের ছেলেমেদের গড়া সবচেয়ে বড় সমস্যা। ব্লাকমেলিংয়ের করাল গ্রাস থেকে রক্ষা পেতে আমাদের পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতা বাড়াতে হবে। ছেলেমেয়েদের সাবধান করতে হবে এর কুফল সম্পর্কে।
মন্তব্য চালু নেই