ভাসিয়ে দিল সবাই নিজেকে আনন্দের জোয়ারে
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা সাগরকন্যা হিসেবে বিখ্যাত কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত বাংলাদেশের বরিশাল বিভাগের পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার লতাচাপলী ইউনিয়নে অবস্থিত। যেখানে কিলোমিটার সমুদ্র সৈ্কতে দাঁড়িয়ে একসাথে উপভোগ করা যায় সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত। ঢাকা থেকে কুয়াকাটার দুরত্ব ৩৮০ কি.মি. সময় লাগে প্রায় ১০ ঘন্টা।
সাগরকন্যাকে উপভোগ করার উদ্দেশ্যে প্রথমবারের মত নবীনগর থেকে গণ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি(গবিসাস) ৫ ডিসেম্বর ২০১৪ বিকেল ৪টায় যাত্রা শুরু করে। ৪টার আগেই আশরাফ রেন্ট এ কার থেকে ভাড়া করা গাড়ি নবীনগরে উপস্থিত ছিল। যথাসময়ে সাংবাদিক সমিতির সকল সদস্য উপস্থিত হবার পর আমাদের যাত্রা শুরু হল। ভাসিয়ে দিল সবাই নিজেকে আনন্দের জোয়ারে।
সি.এন.জি গ্যাস ভরে যাত্রা শুরু করল গাড়ি। গাড়ির জানালা দিয়ে বাংলার অপরূপ প্রাকৃতিক সৌ্ন্দর্য উপভোগ করতে করতে প্রায় ৪৫ মিনিটের মধ্যে আমরা পাটুরিয়া ফেরিঘাটে। ৩০ মিনিটের মধ্যে ফেরির মাধ্যমে পাড়ি দিলাম পদ্মা নদী। ওপারে গিয়ে আবার শুরু যাত্রা। রাস্তার দূ’ধারের গাছগুলোকে একে একে পিছনে ফেলে দ্রুত এগিয়ে চলছি আর আমাদের মধ্যে সঞ্চার হচ্ছে কুয়াকাটায় পাড়ি জমানোর চরম উদ্যমতা।
এবার গাড়ি চলছে অকটেন তেলে। বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে সি.এন.জি গ্যাস এখনও পৌছায় নি। যে কারণে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি অতিরিক্ত খরচের মুখে পড়তে হয় গাড়ির মালিকদের। মাঝে বরিশালে কিছুক্ষণ বিরতি দিয়ে আবার ছুটলাম। পটুয়াখালী পৌছুতেই দেখতে পেলাম বাংলাদেশের অন্যান্য এলাকার মত পটুয়াখালীও তার নিজ বৈশিষ্ঠ ধরে রেখে অভিবাদন জানাচ্ছে।
কুয়াকাটার স্থলপথের রাস্তার উন্নয়নের কাজ সমাপ্ত হয়েছে কিন্তু ব্রীজের কাজগুলো এখনো সম্পন্ন হয়নি। ব্রীজগুলো সম্পূর্ণ হয়ে গেলে ট্যুরিস্টদের সময় আরও কম লাগবে। এরপর আরও ৩টি ফেরী পার হয়ে অবশেষে ভোর ৪টায় আমরা কুয়াকাটার সমুদ্র সৈ্কতে পা রাখলাম।
তবে কুয়াকাটায় নেমেই অবাক করা ঘটনা সেখানকার যাত্রীবাহী মটরসাইকেল চালকদের জন্য। তারা আমাদের ঘিরে ধরল আর আমরা দুশচিন্তায় যে ওরা কি চায়। পরবর্তীতে ওদের মটরসাইকেলে চড়ে পশ্চিম সৈ্কত থেকে ৮ কি.মি. দূরে গঙ্গামতির বাকে গিয়ে অবলোকন করলাম মনোরম সূর্যোদয়ের দৃশ্য।
সেখানে সকাল ১০টা পর্যন্ত ঘূরে আমরা আবার ফিরে এলাম পশ্চিম সৈকতে। সকালের নাস্তা সেরে বেরিয়ে পড়লাম কুয়াকাটার অন্যান্য দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরে দেখার উদ্দেশ্যে। একে একে আমারা ঘুরে দেখলাম কুয়াকাটার প্রাচীন কুয়া, ফাতরার বন, সীমা বৌদ্ধ মন্দির, কেরানিপাড়া, আলীপুর বন্দর, মিশ্রিপাড়া বৌদ্ধ মন্দির, গঙ্গামতির জঙ্গল। এসময় সবাই সমুদ্রে স্নান করার মজাটাও লূফে নিতে ভুলল না। পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে কুয়াকাটা আকর্ষণীয় স্থান হলেও সেখানে ট্যুরিস্টদের জন্য সুব্যাবস্থার যথেষ্ঠ অভাব রয়েছে। কুয়াকাটার স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে পরিচালিত “ট্যুরিস্ট গাইড সমিতি” নামক একটি সংগঠন রয়েছে। তবে তাদের নেই কোন পৃষ্ঠপোষকতা কিংবা সরকারী সহায়তা। এই সমিতির মাধ্যমে প্রায় ৭০০ মটরসাইকেল পরিচালনা করা হয়। যেগুলো ট্যুরিস্টদের ঘোরাঘুরির কাজে ব্যাবহৃত হয়। ৪০০ টাকা থেকে শুরু করে ১০০০ টাকা পর্যন্ত প্যাকেজ রয়েছে পুরো কুয়াকাটার সব দর্শণীয় স্থান ঘুরে দেখার জন্য। সূর্যাস্ত দেখে আবারও বেরিয়ে পড়লাম ফিরতি পথের যাত্রায়। ফেরার পথে আমরা সাক্ষাৎ করলাম পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির সাথে। নৈশভোজের পর্বটা সেরে আমরা গাড়িতে চড়লাম। সারাদিনের ঘোরাঘুরির পর সবাই ক্লান্ত ছিল। তাই ফিরতি পথের যাত্রা তন্দ্রায় কেটে গেল সবার। ঘুম থকে জেগে দেখি ঘড়িতে রাত ৩টা বেজে ৪৫ মিনিট এবং আমরা আবারও নবীনগরে। আর এভাবেই শেষ হল গবিসাসের প্রথম আনন্দভ্রমণ।
মন্তব্য চালু নেই