ভাষা শহীদদের প্রতি রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বিনম্র শ্রদ্ধা

একুশের প্রথম প্রহরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মহান ভাষা শহীদদের প্রতি জাতির পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাত ১২টা ১ মিনিটের পর প্রথমে রাষ্ট্রপতি এবং পরে প্রধানমন্ত্রী শহীদ মিনারের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন তারা। এ সময় তারা ভাষা শহীদদের স্মরণে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। পরে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী শহীদদের স্মরণে শহীদ বেদিতে ফুল দেন।

এরপর মন্ত্রিসভার সদস্যদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এসময় আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। এরপর ১২টা ১৫ মিনিটের দিকে বায়ান্নর ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানান জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ ও জাতীয় পার্টির নেতারা। এসময় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদও ছিলেন। এরপর পর্যায়ক্রমে তিন বাহিনীর প্রধান, পুলিশের মহাপরিদর্শক, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ভাষা সৈনিক এবং বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার ও বিদেশি সংস্থার প্রধানরা শ্রদ্ধা জানান।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা জানানোর পর সর্ব সাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয় শহীদ মিনার এলাকা। এরপর থেকে বিভিন্ন সামাজিক-রাজনৈতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে শহীদ বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। একে একে সরকারি দল আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ, আওয়ামী প্রজন্ম লীগ, বাংলা একাডেমি, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন শহীদ মিনারের বেদিতে শ্রদ্ধা জানায়।

ভাষা শহীদদের প্রতি শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানান, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সহ দলটির অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এদিকে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে শুক্রবার দিনগত রাত ১০টার পর থেকেই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনাও এর আশপাশের এলাকায় জড়ো হতে থাকেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

এ সময় শাহবাগ, আজিমপুর, নীলক্ষেতসহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারমুখী প্রতিটি প্রবেশপথেই ছিল মানুষের মিছিলের সারি। সারা রাত থাকবে এই মানব ঢল। অন্যদিকে ভোরে প্রভাত ফেরির আয়োজনও চলছে জোরেসোড়ে। শহীদ মিনারের আশপাশের এলাকায় মাইকে বাজানো হচ্ছে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো’,‘সালাম সালাম হাজার সালাম’সহ কালজয়ী একুশের গান।

১৯৫২ সালের এ দিনে ‘বাংলাকে’ রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে বাংলাদেশের (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শাসকগোষ্ঠির চোখ-রাঙ্গানি ও প্রশাসনের ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাজপথে নেমে আসে। মায়ের ভাষা প্রতিষ্ঠার দুর্বার আন্দোলন পাকিস্তানি শাসকদের শংকিত করে তোলায় সেদিন ছাত্র-জনতার মিছিলে পুলিশ গুলি চালালে সালাম, জব্বার, শফিক, বরকত ও রফিকসহ নাম না জানা শহীদের রক্তের বিনিময়ে বাঙালি জাতি পায় মাতৃভাষার মর্যাদা।

পরে ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ঐতিহাসিক মহান একুশের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করে ইউনেস্কো। এরপর ২০০০ সাল থেকে প্রতিবছর বাংলাদেশসহ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হচ্ছে দিনটি। দিবসটি উদযাপনে শনিবার জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে, উত্তোলন করা হবে শোকের কালো পতাকা। এছাড়া বিভিন্ন সামাজিক রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন দিবসটি উপলক্ষে আলাদা আলাদা কর্মসূচি গ্রহণ করে।



মন্তব্য চালু নেই