ভালবাসার শক্তি
ভালবাসা কারে কয়, এ তো বিজ্ঞানীদেরও অজানা। ভালবাসার রসায়ন আরও জটিল রহস্য। ভালবাসার মূল্য কত তা যেমন জানেন প্রেমিক-প্রেমিকারা তেমনি এর হিতকরী মূল্য যে অনেক স্বাস্থ্যকুশলের ওপর তা তো জানা গেছে আজকাল। বিট্লসদের সঙ্গীত তুও হববফ ংড়সবনড়ফু ঃড় ষড়াব্থ এবং তারা তা পেয়েছিল বটে। ভালবাসা ও স্বাস্থ্য দুটোই জড়িত পরস্পর নানাভাবে, পুরোটা জানা নেই, অবাক কথা। মানুষ উন্মুখ হয়ে থাকে একটু ভালবাসার জন্য, এত সত্যি : সুসম্পর্ক চর্চা যখন করি আমরা, পুরস্কার তো পাই অনেক। সবসময় শিরদাড়া শিউরে ওঠা রোমান্সের কথা বলি কেন?
‘এনসাইক্লোপেডিয়া অব হিউম্যান রিলেশনশিপস’ গ্রন্থের সহ সম্পাদক ড. হ্যারি রেইস বলেন, ‘নতুন রোমান্সের তীব্র, প্রগাঢ় পর্যায় স্বাস্থ্যহিতকরী, তেমন তথ্য প্রমাণ নেই’ ‘যারা প্রেমে পড়ে তাঁরা বলে, এ অনুভূতিটি মিশ্র, এক সঙ্গে অবাক করা অনুভূতি, কখনও বেদনার….’ এমন উথাল পাথাল প্রেমের ঢেউ মনের ওপর ফেলে চাপ।
স্বাস্থ্য হিতকরী ফল পেতে হলে চাই শানত্ম, আরও স্থিতিশীল প্রেম, রেইস বলেন, যারা তৃপ্তিকর, মন সুখকর, স্থায়ী ভালবাসার সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন এদের স্বাস্থ্য কুশল হয় বেশি। প্রণয় থেকে পরিণয়, ভালবাসার পরিণতি এভাবে হোক_ তাই বলেন অনেকে। বেশিরভাগ গবেষণা তাই পরিণয়কে ঘিরেই। তা গন্ধর্ব বিবাহ হোক আর সামাজিক বড় বিয়েই হোক। তবে রেইস বলেন, আরও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক যেমন সঙ্গী, মা-বাবা বা বন্ধুর সঙ্গে ভালবাসার সম্পর্কও সুফল আনে স্বাস্থ্যের ওপর।
মূল ব্যাপারটি হলো, অন্য লোকের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া, অন্যের কাছ থেকে ভালবাসার মর্যাদা পাওয়া, মূল্য পাওয়া, নিজেকে স্বজন ভাবার মতো অনুভূতি… বলেন রেইস।
ভালবাসা ও স্বাস্থ্যের মধ্যে সম্বন্ধের দশটি বয়ান তো আছেই।
ডাক্তারের কাছে যেতে হয় কম
বিবাহ ও স্বাস্থ্যের মধ্যে সম্বন্ধ খুঁজেছেন বিজ্ঞানীরা। বিবাহিত দম্পতিরা চিকিৎসক দর্শন করেন কম, হাসপাতাল বাসের কালও তাদের হ্রস্ব।
‘প্রেমময় সম্পর্ক কেন যে স্বাস্থ্যহিতকর তা অবশ্য জানা নেই। রেইস বলেন, ‘এর পৰে শ্রেষ্ঠ যুক্তি হলো বিবর্তনের ধারা অনুযায়ীই মানুষ ঘন সংবদ্ধ সামাজিক দলে বাস করতে অভ্যসত্ম হয়ে ওঠে : যখন তা ঘটে না তখনই দেহের সব জৈব ব্যবস্থা গোলমেলে হয়ে যায়, অভিভূত হয়ে যায়।’ আরেকটি তত্ত্ব হলো : যেসব জনগোষ্ঠীতে পরস্পর সুসম্পর্ক এরা নিজেদের দেখভাল করে বেশি। সুখের স্বাস্থ্য ভাল না মন্দ সে সম্পর্কে সঠিক বার্তা দেন জীবনসঙ্গী। ভাল বন্ধু আপনাকে দানাদার শস্য খাওয়ার জন্য উৎসাহিত করবে। কালক্রমে এসব সুঅভ্যাস অনেক কম রোগ হবার দিকে শরীরকে ঠেলে দেবে, রোগ অসুখ হবে অনেক কম।
কম হয় বিষণ্নতা, রোধ হয় নেশা করার প্রবণতা
হেলথ্ এ্যান্ড হিউম্যান সার্ভিসেস প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিবাহ করা এবং বৈবাহিক সম্পর্ক অটুট রাখা স্ত্রী-পুরম্নষ দু’পৰের মধ্যে বিষণ্নতা হ্রাস করে। ফলাফলটি অবাক হবার মতো নয়। কারণ সমাজে নিঃসঙ্গ হয়ে থাকলে বিষণ্নতা অনেক বেশি হয়। বিবাহ করলে তরম্নণ দম্পতিদের মধ্যে অতিরিক্ত মদ্যপান ও নেশা করা অনেক অনেক হ্রাস পায়।
কমে আসে রক্তচাপ
সুখের বিবাহ রক্তচাপের জন্য বড় হিতকর। ‘এনালস্্ অব বিহেভায়রাল মেডিসিনে’ প্রকাশিত একটি গবেষণা নিবন্ধে তা বলা হয়েছে। গবেষকরা দেখেছেন সুখী দম্পতিদের রক্তচাপ খুব ভাল মানে থাকে, অবিবাহিতদের তুলনায় অনেক ভাল। অসুখী দম্পতিদের রক্তচাপ বড় নড়বড়ে। কেবল পরিণয় করা নয়, ‘সুখে বসবাস করিতে থাকিলো’ ব্যাপারটি হলো বড় কথা। এতে বোঝা গেল, ইতিবাচক সম্পর্কে সুফল আছেই। আবার চিরকুমার হলেও যাদের সামাজিক নেটওয়ার্ক বেশি, এদেরও
রক্তচাপ থাকে কম।
কম দুশ্চিন্তা ও উদ্বেগ
দুশ্চিন্তর প্রসঙ্গ যখন আসে, তখন নতুন রোমান্সের চেয়ে একটি প্রেমময়, স্থিতিশীল সম্পর্ক অনেক বেশি সুফলপ্রদ।
স্টোনি ব্রকে স্টেট ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্কের গবেষকরা এমআরআই স্ক্যান করে দেখেছেন ভালবাসায় লিপ্ত মানুষের মগজ। প্যাশনেট নতুন দম্পতির সঙ্গে জোরালো ভালবাসার স্থায়ী সম্পর্ক যেসব সঙ্গীদের, এদের মধ্যে তুলনা করে দেখা হলো। দুটো দলের লোকদের মধ্যে মগজের যে এলাকা তীব্র ভালবাসার সঙ্গে জড়িত, সে এলাকা সক্রিয় দেখা গেল।
অন্যতম গবেষক ড. আর্থার অ্যারন বলেন, এলাকাটি হলো ‘ডোপাসিন রিওয়ার্ড এলাকা’_ কোকেন খেলে বা বড় কোন পুরস্কারপ্রাপ্তি ঘটলে এই এলাকাও উত্তেজিত হয়।
কিন্তু মগজের অন্যান্য অঞ্চলে দু’দলের লোকের মধ্যে বেশ তারতম্য দেখা গেল। যাদের মধ্যে রয়েছে দীর্ঘকালের সুসম্পর্ক, এদের মধ্যে মগজে যে এলাকা ‘বন্ধনের’ সঙ্গে জড়িত তাহলো সক্রিয়, আর যে এলাকা উদ্বেগের সঙ্গে জড়িত তা হলো কম উদ্দীপিত। সোসাইটি ফল নিউরোসায়েন্সের ২০০৮ সালের সম্মেলনে গবেষণাটি উপস্থাপিত হয়েছিল।
বেদনা হয় নিয়ন্ত্রণ
এফএমআরআই স্টাডিতে দীর্ঘমেয়াদী সঙ্গীদের মধ্যে দেখা গেছে মগজের যে এলাকা বেদনাকে নিয়ন্ত্রণে রাখে তা বেশি উদ্দীপিত হয়। সিডিসির একটি প্রতিবেদনে এর সত্যতা পাওয়া গেছে। ১২৭,০০০ লোকের মধ্যে গবেষণায় দেখা গেছে বিবাহিত দম্পতিরা মাথা ধরা ও পিঠ ব্যথার অভিযোগ অনেক কম করেন।
চাপের মোকাবেলা হয় আরও কুশলী
ভালবাসা মানুষকে ব্যথা বেদনা মোকাবেলা করতে সহায়তা করে। অন্য সব চাপের ৰেত্রে কেমন হয়। অ্যারন বলেন, সামাজিক অবলম্বন ও চাপ মোকাবেলার মধ্যে সম্পর্কের ব্যাপারে প্রমাণ রয়েছে। যদি চাপের মুখোমুখি হন এবং একে মোকাবেলার জন্য কাউকে পান সঙ্গী হিসেবে, ভালবাসার জন, তাহলে মোকাবেলা করা যায় ভাল।
কম হয় ঠাণ্ডা সর্দি জ্বর
আমরা দেখেছি, ভালবাসার সম্পর্ক হ্রাস করে মানসিক চাপ, উদ্বেগ ও বিষণ্নতা_ এতে রোগ প্রতিরোধ শক্তি হয় উজ্জীবিত। কার্নেজি মেলন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা দেখেছেন, যারা ইতিবাচক ইমোশন প্রদর্শন করেন এদের ঠাণ্ডা সর্দি, ফ্লু ভাইরাসের প্রকোপ হয় কম।
ক্ষত শুকায় তাড়াতাড়ি
ইতিবাচক সম্পর্কের শক্তি মানুষের দেহের পেশীতে ৰত দ্রম্নত শুকাতে সহায়তা করে। নানা পরীৰায় তা দেখা গেছে।
দীর্ঘতর জীবন
অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, বিবাহিত দম্পতিরা দীর্ঘজীবী হন। অ্যারন বলেন, দম্পতিদের পারস্পরিক সহমর্মিতা, অবলম্বন, অর্থনৈতিক সুবিধা ও সনত্মানদের অবলম্বন এর কারণ। রেইস বলেন, বিবাহ মানুষকে নিঃসঙ্গতা থেকে মুক্তি দেয়, দেয় জীবনে চলার গতি, ভালবাসা পেয়ে, সঙ্গ সুখ পেয়ে মানুষ বাঁচে বেশিদিন।
সুখী জীবন
স্পষ্টত ভালবাসা অন্যতম শ্রেষ্ঠ সুফল হলো ‘আনন্দ’। গবেষকরা দেখেছেন কত জোরালো হতে পারে এ সম্পর্ক। জর্নাল অব ফ্যামিলি সাইকোলজিতে প্রকাশিত নিবন্ধে দেখানো হয়েছে, অর্থের চেয়ে পারিবারিক সম্পর্কের মান সুখী হওয়ার জন্য বেশি গুরম্নত্বপূর্ণ। ভালবাসার শক্তি, অর্থের শক্তিকে অতিক্রম করে।
সম্পর্ককে লালন করুন
ভালবাসার সম্পর্ককে জিইয়ে রাখতে হয়
মন্তব্য চালু নেই