ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে উত্তেজনার পরেও বাংলাদেশিদের বেশি হত্যা করছে বিএসএফ

সীমান্তে শুক্রবার দুই নিরীহ বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যা করেছে বিএসএফ। সীমান্তে নিরীহ ও বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করা নিয়মিত ঘটছে। এই হত্যাকাণ্ড যাতে পুর্নব্যক্ত না হয় ভারতের নিশ্চয়তার দিতে হবে। এই হত্যাকাণ্ডের মাত্রা যাতে শূন্যের কোঠায় আসে সেই দিকে নজর দিতে হবে বন্ধুপ্রতীম দুই প্রতিবেশি রাষ্ট্রকে। নিরীহ বাংলাদেশিদের রহস্যজনকভাবে হত্যা করা হচ্ছে। কেন রহস্যজনকভাবে নিরীহদের হত্যা করা হচ্ছে। এই হত্যাকাণ্ড প্রায়ই সংগঠিত হচ্ছে।

১৮ সেপ্টেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে এক নিরীহ যুবককে গুলি করে আহত করে বিএসএফ। ২০ সেপ্টেম্বর বাঙ্গারবাড়ি সীমান্তে একইভাবে আরো একজন বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যা করে বিএসএফ। মানবাধিকার সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১০ সাল থেকে ২০১৫ এই ৫ বছর ২৩৬ বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যা করেছে বিএসএফ।

সম্প্রতি ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নিয়ে আলোচনার আয়োজন করে। ওই আলোচনায় ভারতের পক্ষ থেকে সীমান্তে নিরীহদের হত্যা না করার কথা বলা হয়। নিরীহদের হত্যা শূন্যে আনার কথা বলা হয়। দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে বিএসএফের সঙ্গে নীতি নির্ধারকদের একটি ব্যবধান রয়েছে। নীতি নির্ধারকরা প্রতিশ্রুতি দিলেও মাঠে চিত্র ভিন্ন। প্রায়ই বিএসএফ এর গুলিতে প্রাণ হারাচ্ছে বাংলাদেশি নাগরিকরা।

বিএসএফ সশস্ত্র সদস্যরা বাংলাদেশি নিরস্ত্র নাগরিকদের হত্যা করছে। প্রতিবেশি দুই দেশের মধ্যে এমন আক্রমণ বন্ধ হওয়া উচিৎ। সর্বশেষ যে বাংলাদেশিদের হত্যা করা হলো তাদের হত্যার পেছনে শক্তিশালী কোনো কারণ খোঁজে পাওয়া যায়নি।

ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সীমান্তের পরিমাণ চার হাজার ৯৬ কিলোমিটার। বিশে^র দুই রাষ্ট্রের মধ্যে পঞ্চম বৃহত্তম সীমান্ত। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত প্রায়ই রক্তাক্ত হয়ে উঠছে। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ একতরফাভাবে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হাতে প্রাণ হারাাচ্ছে। এ নিয়ে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের পর্যায়ে আলোচনা হলেও কোনো অগ্রগতি নেই।

সীমান্তে মানুষ হত্যার দিক দিয়ে যেসব দেশের সীমান্তরক্ষীদের ব্যাপারে দুনিয়া জুড়ে বদনাম রয়েছে, তার মধ্যে বিএসএফ অন্যতম। এরা যে শুধু বাংলাদেশের নাগরিকদের খুন করে তা নয়, নিজ দেশের নাগরিকদের হত্যার রেকর্ডও কম নয়। বিএসএফকে বিশে^র অনেক মানবাধিকার সংগঠন ‘ট্রিগার হ্যাপি’ বাহিনী হিসেবে চিহ্নিত করেছে। কিন্তু এরপরও কোনোভাবেই বিএসএফের হত্যাকা- থামানো যাচ্ছে না।

ধারণা করা হয়, ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত সবচেয়ে উত্তেজনাকর। কিন্তু বিএসএফের হাতে খুব কমই পাকিস্তানি নাগরিক নিহত হয়। অপর দিকে পাকিস্তান সীমান্তরক্ষীদের হাতেও ভারতীয় নাগরিক নিহত হওয়ার ঘটনা বিরল। প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশি নাগরিকদের হত্যার ক্ষেত্রে বিএসএফের মধ্যে এক ধরনের মানসিক ঝোঁক রয়েছে।

হত্যার পর কোনো প্রতিক্রিয়া হবে না, এমন ধরে নিয়ে তারা হত্যাকা- চালায়। ভারতের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, যারা মারা যাচ্ছে এরা সবাই গরু চোরাকারবারি। যদি এরা গরু চোরাকারবারি হয়, তাহলেও এভাবে হত্যা করার কোনো অধিকার নেই। তাদের আইনের আওতায় আনা যেত। কিন্তু সীমান্তে যাওয়ার কারণে গুলি চালানো ও হত্যা করা স্পষ্ট বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শামিল।

বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তরক্ষীদের বৈঠকে ২০১১ সালেও ভারত প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, সীমান্তে কোনো ধরনের প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করা হবে না। কিন্তু ভারতীয় বাহিনী সে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি, বরং প্রতি বছর বাংলাদেশি নাগরিক হত্যার পরিমাণ বাড়ছে। বাংলাদেশের সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক এখন অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে ভালো।

দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের নমুনা হচ্ছে, উভয় দেশ তাদের নাগরিকদের কোন দৃষ্টিতে দেখে থাকে। বাংলাদেশের মানুষ দেখছে, সীমান্তে এ দেশের মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে, তখন তাকে কোনোভাবেই বন্ধুসুলভ আচরণ বলা যায় না। ভারত যদি প্রকৃতই বাংলাদেশের মানুষের সাথে বন্ধুত্ব প্রমাণ করতে চায়, তাহলে অবশ্যই সীমান্ত হত্যা বন্ধ করতে হবে। শিগগরই সীমান্তে নিরীহদের হত্যা বন্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া হোক। সূত্র: ডেইলি স্টার ও নয়া দিগন্ত।



মন্তব্য চালু নেই