ভারত চাইলে বাংলাদেশে তা হয় না এমন দৃষ্টান্ত নেই

তেল-গ্যাস-বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, ‘রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে আমরা যে শঙ্কাটা করেছি, সেটা হলো ভারতের কয়লা ব্যবহার। ভারতের ‘কোল ইন্ডিয়া’ কয়লা সরবরাহের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ভারত চাইলে বাংলাদেশে তা হয় না এমন দৃষ্টান্ত আমাদের সামনে নেই। তাই সমূহ সম্ভাবনা, ভারতের ‘কোল ইন্ডিয়া’র কয়লাই এখানে আসবে। আর ‘কোল ইন্ডিয়’র কয়লার মান নিয়েতো প্রশ্ন আছেই।’

শনিবার দুপুরে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের কনফারেন্স মিলনায়তনে সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির ‘ঝুকিপূর্ণ ও অতিরিক্ত ব্যয়বহুল রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র ও একটি আন্তর্জাতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন প্রকাশ’ নিয়ে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার বার বার বলছে ভারতের কয়লা আনা হবে না। অস্ট্রেলিয়া বা ইন্দোনেশিয়া থেকে বিশুদ্ধ কয়লা আনা হবে। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি, সরকার আস্তে আস্তে ‘কোল ইন্ডিয়া’র দিকে ধাবিত হচ্ছে। এর আগে ভারতের ‘হেভি ইলেট্রনিক’ কোম্পানিকে এ প্রকল্পের টেন্ডার পাওয়ানোর জন্য আইন-কানুনও পরিবর্তন করা হয়েছে।’

বাংলাদেশকে ভারত বর্জ্যাগার হিসেবেও ব্যবহার করতে চাইছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘রামপাল প্রকল্পে নরওয়ে ও ইউরোপীয়ান ব্যাংক তাদের ফান্ডিং প্রত্যাহার করে নিয়েছে। ভারতের রাষ্ট্রিয় ইএক্সআইএম ব্যাংক এ প্রকল্পের জন্য ৩ বিলিয়ন ডলার ফাইনান্স করবে। ব্যাংকের টার্মস অব রেফারেন্সে আছে, সেই ব্যাংক সেখানেই ফাইনান্স করবে, যেখানেই ভারতের রপ্তানি করার সুযোগ তৈরি হয় বা সম্প্রসারিত হয়। প্রকল্পে ভারতের ট্রাক, জিনিসপত্র, কনসালটেন্স আর ট্রানজিট মিলিয়ে প্রায় ৯০ শতাংশ খরচ তাদের এখানে চলে যাবে। সেটাই হচ্ছে সেই ব্যাংকের টার্মস অব রেফারেন্স।’

তিনি আরো বলেন, ‘রামপাল প্রকল্পের টেকনোলজির ব্যাপারে বাঙালিকে হাইকোর্ট দেখানোর অবস্থা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ বার বার বলছে, রামপাল প্রকল্পে সুপার টেকনিক্যাল প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন, এটা ‘অলরেডি আউট ডেট অব টেকনোলজি’। এ প্রযুক্তিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন পরিবেশের জন্য বড় বিপর্যয় ডেকে আনবে।’

দেশি-বিদেশি বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে যে, রামপাল বিদুৎপ্রকল্প বাস্তবায়ন হলে সুন্দরবনের বিনাশ অনিবার্য। বাংলাদেশের জন্যও এটা একটা অচিন্তনীয় ফলাফল। যেহেতু এটা একটা বিশ্বঐতিহ্য, তাই আন্তর্জাতিকভাবে উদ্রেগ বাড়ছে।’

সংবাদ সম্মেলনে সুলতানা কামাল বলেন, ‘বাড়ির দেয়াল যেমন আমাদের রক্ষা করে, সুন্দরবনও বাংলাদেশকে রক্ষা করে। কিন্তু রামপাল প্রকল্পের মাধ্যমে সেই জায়গাটাকে ভেঙ্গে দেয়া হচ্ছে। জনগণ এ প্রকল্পের ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন। কিন্তু জনগণের দিকটাকে কোনো ভাবেই বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে না। এটা খুবই অমানবিক ব্যাপার এবং রাষ্ট্রের পক্ষে দায়িত্ব অবহেলার শামিল। রাষ্ট্র এটা কোনোভাবেই করতে পারে না।’

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এমএম আকাশ, জিইওলজি বিভাগের অধ্যাপক বদরুল ইহসান, পরিবেশ বাচাঁও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান প্রমুখ।



মন্তব্য চালু নেই