ভারতে রুপি বাতিলের সিদ্ধান্তে বিরোধীদের ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদ

ভারতে পাঁচশো ও হাজার রুপির নোট বাতিল করার সিদ্ধান্ত গ্রহণের পনেরো দিনের মাথায় এসে ঐক্যবদ্ধ বিরোধী দলগুলো সরকারের বিরুদ্ধে তাদের প্রতিবাদকে তুঙ্গে নিয়ে গেছে।

দিলিতে পার্লামেন্টে গান্ধীমূর্তির সামনে প্রায় সবগুলো বিরোধী দলের দুশোরও বেশি এমপি আজ বুধবার এক সারিতে দাঁড়িয়ে ব্যাঙ্কের টাকা তোলার লাইনে দাঁড়ানো মানুষের প্রতি সংহতি জানিয়েছেন। পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি দিল্লিতে এক বিক্ষোভ সমাবেশে ভাষণ দিয়ে ক্ষমতাসীন দল বিজেপি-কে হুমকি দিয়েছেন, তারা কীভাবে পরের নির্বাচনে জেতে তিনি দেখবেন!

সরকার অবশ্য এখনও বলছে এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের কোনও সম্ভাবনাই নেই। ভারতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র কালো টাকার বিরুদ্ধে লড়াইতে তার নাটকীয় সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর দুসপ্তাহর বেশি কেটে গেছে – কিন্তু দেশে এখনও আর্থিক লেনদেন, ব্যবসাবাণিজ্য স্বাভাবিক হওয়ার কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।

পাশাপাশি ব্যাঙ্কের সামনে, এটিএম মেশিনের বাইরে মানুষের অন্তহীন অপেক্ষাও শেষ হচ্ছে না। আমজনতার এই ভোগান্তিকে অস্ত্র করেই আজ দেশের প্রায় সবগুলো বিরোধী দল সংসদ ভবনের বাইরে একজোট হয়েছিল। বহুজন সমাজ পার্টির নেতা সতীশ মিশ্র বলছিলেন, “যেভাবে মানুষ টাকা জোগাড় করতে নাজেহাল হচ্ছে, সত্তরজনেরও বেশি মারা গেছেন – অথচ প্রধানমন্ত্রী পার্লামেন্টে বিরোধীদের মুখোমুখি হচ্ছেন না তার প্রতিবাদেই বিরোধী দলগুলোর এই যৌথ বিক্ষোভ।”

দুশোরও বেশি এমপি এক লাইনে দাঁড়িয়ে দেশের মানুষকে এই বার্তাই দিতে চেয়েছেন – ব্যাঙ্কের সামনে অপেক্ষারত মানুষদের প্রতি তাদের পূর্ণ সহানুভূতি আছে। সেই লাইনের মাঝখানে দাঁড়ানো কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীও দাবি করেন তারা কালো টাকার সমর্থক নন, কিন্তু মানুষের ভোগান্তির বিরুদ্ধে।

তিনি বলেন, “দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়া নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই, কিন্তু প্রশ্ন হল তা করতে গিয়ে একশো কোটি মানুষকে কেন এভাবে হেনস্থা করা হবে?” এর একটু পরেই রাজধানীর যন্তর মন্তরে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে সরকারকে আরও কঠোর ভাষায় হুমকি দেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেসের নেত্রী মমতা ব্যানার্জি – যিনি একেবারে প্রথম থেকে এই ইস্যুতে সরকারকে আক্রমণ করে আসছেন।

তিনি সেই জনসভায় বলেন, “যতদিন না মানুষের হাতে টাকা-পয়সা ব্যবহার করার ক্ষমতা ফিরছে ততদিন তার আন্দোলন চলবে – আমাকে গুলি করে, জেলে ভরেও সরকার দমাতে পারবে না।”

এমন কী, সামনের সাধারণ নির্বাচনে বিজেপি এরপরেও কীভাবে জেতে তিনি দেখবেন – প্রধানমন্ত্রীকে এই চ্যালেঞ্জও ছুঁড়ে দেন তিনি। সরকারের এই সিদ্ধান্তকে ”হিটলারের চেয়েও বেশি হঠকারী” বলে বর্ণনা করেন তিনি। শুধু দিল্লিতে নয়, এরপর সারা দেশেই এই আন্দোলনকে ছড়িয়ে দেওয়ার কর্মসূচি নিয়েছেন বিরোধীরা। কিন্তু সরকার দাবি করছে, সাধারণ মানুষ পুরোপুরি তাদের পাশে আছে।

সিনিয়র ক্যাবিনেট মন্ত্রী ভেঙ্কাইয়া নাইডু এদিন বলেন, “প্রধানমন্ত্রী দারুণ সাহসের সঙ্গে যে বৈপ্লবিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাতে গোটা দেশ খুশি। এখন দশটা না বারোটা দল তার প্রতিবাদ করছে তাতে কিছু যায় আসে না, প্রশ্ন হল পার্লামেন্টে তাদের মোট আসন কতগুলো? ফলে পাঁচশো ও হাজার রুপির নোট বাতিলকে ঘিরে সরকার ও বিরোধীরা এখন একেবারে যুযুধান অবস্থানে।

বিরোধীরা আন্দোলনের জন্য রাজপথকে বেছে নিলেও সরকার মনে করছে – পার্লামেন্টে তাদের যা শক্তি তাতে এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারে তাদের কোনও মতেই বাধ্য করা যাবে না। বিবিসি বাংলা



মন্তব্য চালু নেই