ভারতে বসে দেশে চাঁদাবাজি ৪৩ সন্ত্রাসীর!

ভারতে বসে দেশে চাঁদাবাজি করছে ৪৩ কুখ্যাত সন্ত্রাসী। পুলিশ ও র‌্যাবের তালিকাভুক্ত  এসব শীর্ষ সন্ত্রাসীর কেউই বর্তমানে দেশে নেই। অথচ তাদের নামে চাঁদাবাজি বন্ধ হচ্ছে না। এসব সন্ত্রাসীকে নিয়ে র্যাব-পুলিশের গলদঘর্ম অবস্থা। সন্ত্রাসীরা দেশে না থাকার কারণে তাদের গ্রেপ্তারও করতে পারছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ফলে পুলিশ বা র‌্যাবের তদন্ত একটা পর্যায়ে গিয়ে থমকে যাচ্ছে।
দীর্ঘ তদন্তের পর ভারতে পালিয়ে থাকা এসব সন্ত্রাসীর অবস্থান শনাক্ত করেছে র‌্যাব।  র‌্যাবের তরফ থেকে ৪৩ জন সন্ত্রাসীকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জমা দেয়া হয়েছে। র‌্যাবের ওই প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বাংলাদেশ থেকে চাঁদার টাকা নিয়ে ভারতে জীবন যাপন করছে এসব সন্ত্রাসী।
সর্বশেষ গত মাসে নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত বিজিবির সঙ্গে ভারতের বিএসএফের মহাপরিচালক পর্যায়ের বৈঠকে বিজিবির পক্ষ থেকে এই ৪৩ সন্ত্রাসীর একটি তালিকা দেয়া হয়েছে।
বিএসএফকে তালিকা ধরে সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করে দেশে পাঠাতে অনুরোধ করেছে বিজিবি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও নারায়ণগঞ্জের আলোচিত ৭ খুনের ঘটনায় অন্যতম প্রধান পরিকল্পনাকারী নূর হোসেনের পাশাপাশি ভারতের কারাগারে বন্দি থাকা কয়েকজন সন্ত্রাসীকে ফিরিয়ে আনতে তৎপরতা শুরু করেছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও নূর হোসেনসহ গ্রেপ্তারদের ফেরত পাওয়ার বিষয়টি দেখভাল করছে। শুরু হয়েছে তৎপরতাও। শিগগিরই কয়েকজন শীর্ষ সন্ত্রাসীকে ফেরত পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ভারতে পালিয়ে থাকা সন্ত্রাসীদের ফিরিয়ে আনতে আমরা তত্পরতা শুরু করেছি। পর্যায়ক্রমে সব সন্ত্রাসীকেই ফিরিয়ে আনা হবে।
র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসান বলেন, দেশে বর্তমানে চাঁদাবাজি হচ্ছে কমবেশি ৪৩ সন্ত্রাসীর নাম ব্যবহার করে। এদের কেউই এখন আর দেশে নেই। সবারই অবস্থান সীমান্তের ওপারে। এই সন্ত্রাসীদের দেশে থাকা ক্যাডাররা বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও চাকরিজীবীকে হুমকি দিচ্ছে, চাঁদা আদায় করছে। প্রয়োজন হলে সীমান্তের ওপারের নম্বর ব্যবহার করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে হুমকিও দিচ্ছে এসব শীর্ষ সন্ত্রাসী। এদের দেশে ফেরানো গেলে চাঁদাবাজি অনেকটাই কমে আসবে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
সন্ত্রাসীরা কে কোথায়:
র‌্যাবের ওই তালিকায় দেখা গেছে, ১৬টি হত্যা মামলার আসামি মিরপুরের শাহাদত হোসেনের বর্তমান অবস্থান মুর্শিদাবাদ। ভারতীয় ৭টি মোবাইল ফোন নম্বর ব্যবহার করে দেশে চাঁদাবাজি করছে।
৪টি হত্যা মামলার আসামি আমিনুল ইসলাম মুকুল ভারতের কারাগারে বন্দি রয়েছে। নয়াটোলার জিসান ওরফে মন্টু আছে কলকাতায়। তার বিরুদ্ধে ৮টি হত্যা মামলা। কিছুদিন আগে সে দুবাই ছিল। সেখানে তার নিজের ফ্লাটও রয়েছে। তার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের ওয়ারেন্ট আছে।
আগরতলায় আছে হত্যাসহ ১৩ মামলার আসামি শাহীন সিকদার। চট্টগ্রামের খন্দকার তানভির ইসলাম ওরফে জয় আছে কলকাতায়। ৮টি হত্যাসহ ২৫ মামলার আসামি মোহাম্মদুপরের নবী হোসেন আছে আলীপুর জেলে। ৩টি হত্যাসহ ৭টি মামলার আসামি আনোয়ার হোসেন আনু আছে ভারতের গোবিন্দপুরে নিজ ফ্ল্যাটে। ছদ্ম নাম দিয়ে নাগরিকত্ব নেয়ার চেষ্টাও করছে।
অন্য সন্ত্রাসীদের মধ্যে ৬টি মামলার আসামি আনিসুর রহমান লিটন আছে বনগাঁও’র সাতাবাওর এলাকার ভিবা’য়। অমল কৃষ্ণ মন্ডলও আছে বনগাঁওয়ে। তার বিরুদ্ধে ৩টি হত্যাসহ ৬টি মামলা। তৌফিকুল আলম খান ওরফে পিয়াল খানও আছে বনগাঁওয়ে। ৮ মামলার আসামি সে। ত্রিপুরাতে অবস্থান করছে মামুনুর রশীদ মামুন। ৪টি হত্যাসহ ১৭টি মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
কলকাতায় অবস্থান করছে পুরস্কার ঘোষিত শীর্ষ সন্ত্রাসী প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ ও শামীম আহমেদ ওরফে আগা শামীম। পুরস্কার ঘোষিত অপর শীর্ষ সন্ত্রাসী খন্দকার তানভিরুল ইসলাম জয় স্থায়ী ঘাঁটি গেড়েছে কলকাতার নিউমার্কেট এলাকায়। নিজে বাড়ি কিনে সেখানেই ৫/৬ বছর ধরে অবস্থান করছে এই সন্ত্রাসী।
ঝালকাঠির মোল্লা মাসুদ আছে মুর্শিদাবাদ। নদীয়ার করিমপুর থানার বকসীপুরে থাকে চরমপন্থি নেতা এনামুল হক এনা। তারও নিজের বাড়ি রয়েছে। তার বিরুদ্ধে ৫টি হত্যাসহ ৯টি মামলা। চট্টগ্রামের নুরুল আলম প্রকাশ ওরফে এতিম প্রকাশ থাকে কলকাতায়। তার বিরুদ্ধে ৪টি হত্যাসহ ১৬টি মামলা। এর বাইরে মনু থাকে শিলিগুড়ি, মাসুদ থাকে আগরতলা ও পুরস্কার ঘোষিত অপর শীর্ষ সন্ত্রাসী বিকাশ কুমার বিশ্বাস থাকে কলকাতা এলাকায়।
এছাড়া শাহী ওরফে রুমী, নরোত্তম সাহা ওরফে আশিক, কালু, চট্টগ্রামের সন্ত্রাসী সুনীল কান্তি দে, গৌতম চন্দ্র শীল ওরফে গৌতম চেয়ারম্যান (মাঝে মধ্যে বাংলাদেশে আসে), চপল, মোস্তাফিজুর রহমান মুকুল, বাবু ওরফে মিরপুর বাবু, মিন্টু, পুরস্কার ঘোষিত শীর্ষ সন্ত্রাসী হারিছ আহমেদ, আতাউর রহমান আতা, হালিম, জাফর আহমেদ ওরফে মানিক, কালাচাঁন ওরফে চাঁন, মিনহাজ উদ্দিন ওরফে দুখু, সিদ্দিক, তৈমুর, মোর্শেদ খান, রাজিব দত্ত ওরফে প্রকাশ, সাজ্জাদ খান, শহিদুল ইসলাম ও ইব্রাহিম খলিলের ভারতের অবস্থানের ঠিকানা আংশিক পেয়েছে র‌্যাব। এদের প্রত্যেকেই ৮ থেকে ২০টি ভারতীয় বিভিন্ন কোম্পানির মোবাইল ফোন নম্বর ব্যবহার করে।
তালিকা প্রসঙ্গে র‌্যাবের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, এই তালিকায় ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন এলাকার গুরুত্বপূর্ণ আসামিদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তবে তালিকার অধিকাংশই ঢাকার সন্ত্রাসী।
এরা ভারতে বিভিন্ন ছদ্মনাম ব্যবহার করে জীবন যাপন করছে। সহযোগীরা ঢাকা থেকে যে চাঁদাবাজির টাকা পাঠায় তা দিয়েই চলছে তাদের জীবন। অনেক ব্যবসায়ী ভয়ে সরাসরি ভারতে নির্দিষ্ট সন্ত্রাসীকে টাকা পাঠিয়েছেন বলেও খবর পাওয়া গেছে।


মন্তব্য চালু নেই