শিগগিরই টেন্ডার

ভারতের কর্তৃত্বে এশিয়ান হাইওয়ে

শিগগিরই এশিয়ান হাইওয়ের অবকাঠামো নির্মাণ বিষয়ক টেন্ডার ডাকা হবে। গত বৃহস্পতিবার ভারতীয় মন্ত্রীসভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম জি নিউজ।

জানা যায়, বাংলাদেশ, নেপাল ও ভূটানের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার ও যোগাযোগের মাত্রা বাড়াতে ভারত সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এজন্য এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক থেকে প্রায় ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ঋণ নেয়া হচ্ছে।

এ হাইওয়ের মধ্য দিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের পার্শ্ববর্তী তিনটি দেশের সঙ্গে স্থলপথে বাণিজ্যিক রুট তৈরি করা ছাড়াও প্রস্তাবিত মোট দেড়শ কিলোমিটার রাস্তার মাধ্যমে এই চারটি দেশের মধ্যে গড়ে তোলা হবে আন্তঃযোগাযোগ মাধ্যম।

এজন্য ভারতের উত্তরবঙ্গের মোট দুইটি জাতীয় সড়ককে একত্রিত করে দেড়শ কিলোমিটার দীর্ঘ চার লেনের আন্তর্জাতিক মানের রাস্তা তৈরি করবে পশ্চিমবঙ্গ সরকার।

এর আগে এশিয়ান হাইওয়ে নিয়ে ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদকে বলেছিলেন, ‘দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়নের কথা ভেবেই বাংলাদেশকে এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে যুক্ত করা হচ্ছে। এশিয়ান হাইওয়ে আর ভারতের সঙ্গে ট্রানজিট এক বিষয় নয়। এশিয়ান হাইওয়ের মাধ্যমে এশিয়া এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সংযুক্ত হবে বাংলাদেশ।’

কিন্তু বাংলাদেশের সুশীল সমাজ ও রাজনৈতিক কর্মীদের দীর্ঘদিনের বিরোধীতায় বর্তমান সরকারের গত আমলে এশিয়ান হাইওয়ে নিয়ে হঠাৎ করেই সব আলোচনা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর আর তেমন কোনো আলোচনা হয়নি।

ইউনাইটেড নেশনস্‌ ইকোনমিক অ্যান্ড সোস্যাল কমিশন ফর এশিয়া অ্যান্ড দি প্যাসিফিক (ESCAP) এর বর্ণনা অনুযায়ী এশিয়ান হাইওয়ের মূল উদ্দেশ্যগুলো হচ্ছে- রাজধানী থেকে রাজধানীর যোগাযোগ স্থাপন, প্রধান প্রধান কৃষি ও শিল্পভিত্তিক শহরগুলোর মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন, প্রধান প্রধান সমুদ্র ও নদীবন্দরগুলোর মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন, প্রধান প্রধান কনটেইনার টার্মিনাল ও ডিপোগুলোর মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন এবং প্রধান প্রধান দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন।

এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে বাংলাদেশ সম্পৃক্ত হলে ভারত, চীন, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া এবং মালয়েশিয়ার সঙ্গে সরাসরি বাণিজ্যিক যোগাযোগের রাস্তা পরিস্কার হবে। তবে বাংলাদেশ এরইমধ্যে কিছু হাইওয়ের মাধ্যমে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে, তাই নতুন এই হাইওয়ে দিয়ে বাংলাদেশ কতটা লাভবান হবে তা বলা মুশকিল।

এ বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান বলেন, ‘এশিয়ান হাইওয়েতে যুক্ত হলে ব্যবসা-বাণিজ্যে অনেক ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। দ্বিপাক্ষিক যোগাযোগের চেয়ে বহুপাক্ষিক যোগাযোগ সব সময়ই উত্তম। এর বিরোধিতা করার কোন যৌক্তিক কারণ নেই। এশিয়ান হাইওয়েতে যুক্ত না হওয়া মানে নিজেদের বিচ্ছ্ন্নি করে বসে থাকা।’

যদিও এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশনের (এসকাপ) পরিকল্পনায় যে হইওয়েটির নকশা করা ছিল সেখানে জাপান থেকে শুরু হয়ে দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরান ও তুরস্ক হয়ে ইউরোপের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ ছিল। কিন্তু ১৯৯৩ সালের ২৯ নভেম্বর থেকে ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত দিল্লীতে অনুষ্ঠিত এসকাপের বৈঠকে নতুন হাইওয়ে ম্যাপ তৈরি হয়।

এসকাপ এএইচ-১ নামে প্রধান যে রুটটি নির্ধারণ করেছে সে রুটের শুরু হবে যশোরের বেনাপোল সীমান্তে এবং বেনাপোল থেকে ঢাকা ও সিলেট হয়ে রুটটি বাংলাদেশের তামাবিল সীমান্তে পৌঁছাবে।

এসকাপের এএইচ-২ নামের দ্বিতীয় রুটটি পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা সীমান্তে শুরু হবে এবং সেখান থেকে দিনাজপুর, বগুড়া, টাঙ্গাইল ও ঢাকা হয়ে আবারও সিলেটের একই তামাবিল সীমান্তে গিয়ে শেষ হবে।

এরপর হাইওয়েটি তামাবিল থেকে দুর্গম পাহাড়ি পথ বেয়ে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী শিলং ও আসামের রাজধানী গৌহাটির পাশাপাশি মনিপুর, নাগাল্যান্ড, মিজোরাম হয়ে দক্ষিণে যাবে- যে পর্যন্ত যাওয়ার পর ভারতের এশিয়ান হাইওয়ের আর কোনো প্রয়োজন থাকবে না। মিজোরাম থেকে এশিয়ান হাইওয়ে মিয়ানমারের প্রদেশ শান, কুচিন, কারেন, চীন প্রভৃতির ভেতর দিয়ে ইয়াংগুন পর্যন্ত যাবে।

এর ফলে বাংলাদেশকে অন্তত ২০০০ কিলোমিটার বা প্রায় ১২০০ মাইল অতিরিক্ত পথ পাড়ি দিতে হবে। শুধু তাই নয়, এসকাপের কথামতো তামাবিল-আসাম-মেঘালয় রুটে যুক্ত হতে হলে বাংলাদেশকে নিজের খরচে প্রায় ১০৫০ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ ও উন্নয়নের কাজ সম্পন্ন করতে হবে।

উল্লেখ্য, এসকাপের প্রকল্পে এএইচ-৪১ নামেও একটি রুটের প্রস্তাব আছে। যার শুরু খুলনার মংলা বন্দর থেকে সিরাজগঞ্জের হাতিকুমরুলের মধ্য দিয়ে ঢাকা ও কাঁচপুর হয়ে প্রথমে চট্টগ্রামে এবং তার পর চট্টগ্রাম থেকে টেকনাফ পর্যন্ত যাবে। তবে এসকাপের কাছে এই রুটটি তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় বাস্তবায়ন হওয়ার সম্ভাবনা কম।

গত ২০০৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এসকাপ বাংলাদেশকে তার সিদ্ধান্ত বদলানোর জন্য সর্বশেষ হুঁশিয়ারি জানিয়েছিল। কিন্তু তখন বাংলাদেশ রাজি না হলেও এসকাপ তার পরিকল্পনা থেকে বাংলাদেশকে বাদ দেয় নি। কারণ বাংলাদেশকে বাদ দিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করলে ভারতকে তার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে যেতে হলে পাড়ি দিতে হবে ১৫০০ কিলোমিটার।



মন্তব্য চালু নেই