ব্যাটিং ব্যর্থতায় সিরিজ জয়ের স্বপ্নভঙ্গ

ইতিহাস ডাকছিল হাতছানি দিয়ে। একটি ম্যাচ জিতলেই বিশ্বের বড় কোনো দলের বিপক্ষে তাদেরই মাটিতে প্রথমবার ওয়ানডে সিরিজ জয়ের উৎসবে মাতে বাংলাদেশ। কিন্তু শীর্ষ ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় কলম্বোতে শ্রীলঙ্কাকে সিরিজ হারিয়ে ১৬ কোটি দেশের ক্রিকেট পাগল জাতিটাকে আরো একবার উন্মাতাল করা হলো না মাশরাফির দলের। হারল ৭০ রানে। শনিবার সিংহলিজ মাঠে ২৮১ রানের টার্গেট তাড়া করতে নেমে শীর্ষ ব্যাটসম্যানরা টাইগার ক্রিকেটপ্রেমীদের হৃদয় ভাঙলেন। শ্রীলঙ্কার বোলারদের দেওয়া শুরু আর মাঝের ধাক্কাতেই ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে বাংলাদেশ। তবু টেনে হিচড়ে স্কোরটা মেহেদী হাসান মিরাজের ফিফটিতে ২১০ পর্যন্ত গেছে। ফিফটি করেছেন সাকিব আল হাসানও। কিন্তু ব্যাটসম্যানরা সম্মিলিতভাবে জ্বলে উঠতে পারেননি, একজন বা দুজন ব্যাটসম্যান বড় ইনিংস খেলার দায়িত্বও নিতে পারেননি। ম্যাচ জেতার মতো জুটিও হয়নি। সব মিলিয়ে দারুণ বোলিং যে পথ তৈরি করে দিয়েছিল সেই পথ ব্যাটিংয়ের মাঝপতে হারিয়ে শেষে লড়ে ৪৪.৩ ওভারে ২১০ রানে অল আউট। তাতে অবশ্য ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজটা হারতে হয়নি বাংলাদেশের। টাইগাররা স্বাগতিকদের বিপক্ষে টেস্টের মতো ১-১ এ ড্র করলো ওয়ানডে সিরিজটাও। তবু রয়ে গেল আক্ষেপ।

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তাদের মাটিতে ওয়ানডে সিরিজ জেতার সুযোগ আবার কবে আসবে? নিষ্ঠুর বাস্তবতায় সিরিজ জয়ের স্বপ্ন হারানোর পর টাইগারদের এমন আক্ষেপ থাকতেই পারে। কতো আর টার্গেট ছিল? ২৮১। ঝড়ো শুরুর পরও লঙ্কান ব্যাটসম্যানরা ৯ উইকেটে ২৮০ রানে থামে বাংলাদেশি বোলার আর ফিল্ডারদের কৃতিত্বে। সিরিজের প্রথম ম্যাচ জিতেছিল বাংলাদেশ। দ্বিতীয়টিতে বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত। এই ম্যাচ জিতলে প্রথমবারের মতো সিরিজ জেতা হয় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। তাও তাদের মাটিতে, ২-০ তে। তাহলে ৪১ ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৬ নম্বর জয়টি আসত। আর বিদেশের মাটিতে প্রথম কোনো বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দলকে সিরিজ হারানোর সাধ ও স্বপ্ন পূরণ হতো। ব্যাটসম্যানরা তা পারলেন কোথায়? শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২০০৬ সালে বগুড়ায় প্রথম জয়টা ২১৩ রান তাড়া করে। ওটাই রেকর্ড হয়েই রইল। ২৮০ পার হওয়া হলো না।

তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহীম, মাহমুদউল্লাহর মতো অভিজ্ঞদের সাথে সৌম্য সরকার, সাব্বির রহমান, মোসাদ্দেক হোসেন, মেহেদী হাসান মিরাজের মতো প্রতিভা। কিন্তু মাত্র ১১ রানের মধ্যে, প্রথম ৪ ওভারেই ৩ উইকেট নেই! স্বপ্নটা দুঃস্বপ্নে তখনো পরিণত হতে দেননি সাকিব ও সৌম্য। ৭৭ রানের জুটি গড়লেন। ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন তারা দুজন।

কিন্তু তারপর আর জুটি কোথায়? রানই বা কে করলেন? সৌম্য ৩৮, সাকিব ৫২ রানে ফিরেছেন। ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে সাকিব যখন ৩৪তম ফিফটিটা নিয়ে ফেরেন দলের রান তখন ১১৮। ওভার ২৩.২।

ব্যাটসম্যান থাকলে তখনো স্বপ্ন দেখা যায়। কিন্তু সমস্যার মধ্যে থাকা মাহমুদউল্লাহ (৭) সাকিবের ৯ রান পরই আউট। আর থাকে কি? বাংলাদেশের প্রথম ৭ ব্যাটসম্যানের মধ্যে সৌম্য আর সাকিব কেবল দুই অংক পেরিয়েছেন। মেহেদী ৮ এ –, মাশরাফি ৯ এ ১৬। আর তামিম (৪), সাব্বির রহমান (৪), মুশফিকুর রহীম (০), মোসাদ্দেক হোসেন (৯) কিংবা মাহমুদউল্লাহ ঐতিহাসিক হতে পারতো যে দিনটি সেদিনে দাঁড়াতে পারলেন না বুক চিতিয়ে। এমন সিরিজ জয়ের সুযোগ হাতছাড়া করার আক্ষেপ আর কষ্ট কতোদিন যে পোড়ায় টাইগারদের!‍ শিরোপা ভাগাভাগি করে কি আর পুরো তৃপ্তি মেলে!

এর আগে টস জিতে মাশরাফি বললেন, বেশ বড় রানও তাদের জন্য সমস্যা হওয়ার কথা না। তেতে গিয়েই কি না কে জানে শ্রীলঙ্কার উদ্বোধনী জুটি ৭৬ রান এনে দিলেন ১০ ওভারে। ৫ বোলার ব্যর্থ। এরপর জোড়া আঘাত মেহেদী ও তাসকিনের। তারপর দুটি রান আউট। একটি ব্যাটসম্যানের ব্যর্থতায়, অন্যটি দারুণ ফিল্ডিংয়ে। একটি রান আউটের নিশ্চিত সম্ভাবনা পরে মিস।

তবে ঝড় তুলতে থাকা লঙ্কানদের রাশ টেনে ধরা গেছে ১০ ওভারের পর থেকেই। আগের ম্যাচে ৩১১ রান করেছিল তারা। এবার যেটা আরো বড় হবে বলে মনে হচ্ছিল তা হয়নি বাংলাদেশি বোলার-ফিল্ডারদের প্রাণপণ লড়াইয়ে। খুব বড় রানও কোনো লঙ্কান ব্যাটসম্যান পাননি। দুটি ফিফটি আর তিনটি ৩০ পেরুনো ইনিংস। মাশরাফি বরং ৬৫ রানে ৩ উইকেট নিয়ে বোলিংয়ে নেতৃত্ব দিলেন সামনে থেকে। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে দুটি উইকেট কাটার মাস্টার মোস্তাফিজের। ব্রেক থ্রু দেওয়া ১টি করে উইকেট তারো আগে মেহেদী ও তাসকিনের। কিন্তু বোলার-ফিল্ডাররা মিলে ইতিহাস গড়ার যে মঞ্চটা তৈরি করে দিয়েছিলেন ব্যাটসম্যানরা সেই মঞ্চে লঙ্কা জয়ের পতাকা উড়াতে পারলেন না।



মন্তব্য চালু নেই