ব্যস্ততায় অবসর নেই কামার পাড়ায়
ছোট্ট একটা শিশু অবিরাম টেনে চলেছে হাপরের শিকল, বাবা আগুনে লোহার টুকরো রেখে তার ওপর চাপিয়ে দিচ্ছেন কয়লা। মাঝে মাঝে লোহার লম্বা সরু একটি খুন্তি দিয়ে উস্কে দিচ্ছেন আগুন। পাশেই বলিষ্ট দেহের দুই কামারের হাতুড়ি পেটানোর টুংটাং শব্দ; চারদিকে স্ফুলিঙ্গের ছড়াছড়ি।
শনিবার বিকেলে নগরীর চৌধুরীহাট এলাকার জগন্নাথ কর্মকারের কামারশালার চিত্র ছিলো এটি। কেবল জগন্নাথের কামারশালা নয়, কোরবানির ঈদ উপলক্ষ্যে চট্টগ্রামের প্রায় সবকটি কামারশালার কামারেরা এখন দিন-রাত দা-ছুরি তৈরিতে এমন ব্যাস্ত সময় পার করছেন।
এদিকে বেশির ভাগ নগরবাসী এখনও কোরবানির পশু না কিনলেও জবাইয়ের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে দিয়েছেন। বাসাবাড়ির দা, বঁটি, ছুরি, চাকু, চাপাতি শান দিতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে কামারের বাড়ি। কেউ কেউ আবার এসব যন্ত্রপাতি কিনতে ছুটছেন কামারের দোকানে।
নগরীর বক্সিরহাট, ফিরিঙ্গিবাজার, চকবাজার, অক্সিজেন, চৌধুরীহাট, কাজিরহাট, বহদ্দারহাটসহ বেশ কয়েকটি বাজার ও কামারের দোকানে তৈরি হচ্ছে হাজার হাজার দা, বঁটি, ছুরি, চাকু, চাপাতিসহ নানা সামগ্রী।
জগন্নাথ কর্মকারের ভাষায়, এই সময়টাই তাঁদের মৌসুম। ঈদের আগে ১৫-২০ দিন ধরে দা-ছুরি, ধামা যা বিক্রি হয়, সারা বছরেও তা হয় না। এক মৌসুমে প্রায় ৩০-৪০ হাজার টাকার দা, ছুরি বিক্রি করেন তিনি। সারা বছর একা কাজ করলেও কোরবানি উপলক্ষে বাড়তি দুজনকে কাজে নিয়েছেন। সঙ্গে ছোট খাট সাহায্যর জন্য কামারশালায় নিয়ে এসেছেন তার ছেলে বিশুকেও। সে স্থানীয় স্কুলের পঞ্চম শ্রেনীতে পড়ালেখা করে।
জগন্নাথ বলেন, ‘কোরবানি সামনে রেখে ছোট-বড় ছুরি, ধামা, দা, বঁটিই বেশি তৈরি করে মানুষ। আকার ভেদে প্রতিটি দা ও ছুরি ১০০ থেকে ৫০০ টাকা এবং ধামা ৪০০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়। পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে ডজন হিসেবে এবং সাধারণ ক্রেতাদের কাছে খুচরা হিসেবে পণ্য বিক্রি করি।’
অক্সিজেন এলাকার এক কামারের দোকানের কর্মচারী নারায়ন জানান, বছরের অন্যান্য সময়ের চেয়ে কোরবানির ঈদের সময় তাঁদের কাজ এবং বিক্রি দুটোই বেড়ে যায়। তবে বেশ কয়েক বছর ধরে লোহার দাম বেশি থাকায় মানুষ এখন আর আগের মতো ছুরি-চাপাতি বানায় না। সাম্প্রতিক সময়ে এসব যন্ত্রের দামও বেড়ে গেছে। ফলে নতুন করে বানানোর চেয়ে পুরনো ছুরি-চাপাতিতে শান দিতেই মানুষ বেশি আসছে।
নগরীর কামারশালা গুলো সরেজমিন ঘুড়ে দেখা গেছে, পশুর চামড়া ছাড়ানোর জন্য ছোট দেশি ছুরি বিক্রি হচ্ছে একশ থেকে দেড়শ’ টাকায়। মাঝারি সাইজের দাম দুইশ থেকে আড়াইশ টাকা এবং বড় সাইজের চারশ থেকে সাড়ে পাঁচশ টাকা। বঁটি আকার ভেদে তিনশ থেকে আটশ টাকা। হাড় কাটার জন্য লোহার পাতের চাপাতির (বিভিন্ন সাইজের) দাম হাঁকা হচ্ছে পাঁচশ থেকে হাজার টাকা।
মন্তব্য চালু নেই