বেনাপোল বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি হ্রাস পেয়েছে

জসিম উদ্দিন, বেনাপোল ॥ দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোল দিয়ে চলতি অর্থ বছরে ১১মাসে দ্বিগুন পরিমান পেয়াজ আমদানি কম হয়েছে । গত অর্থ বছরের তুলনায় চলতি অর্থ বছরের ১০ মাসে ২২ হাজার ২শ’ ৬৪ টন পেঁয়াজ কম আমদানি হয়েছে। ২০১২-১৩ অর্থ বছরের ১০ মাসে বন্দরটি দিয়ে ৪৬ হাজার ৯শ’ ১৬ দশমিক ৩৩ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়। যার আর্থিক মূল্য ছিল ১৬ কোটি ৪৮ লাখ ৬শ’ ২২ টাকা। চলতি অর্থ বছরের একই সময়ে আমদানি হয়েছে মাত্র ২৪ হাজার ৬শ’ ৪৮ দশমিক ৩৩ টন। এর আর্থিক মূল্য ১২ কোটি ৪৪ লাখ ৬শ’ ৫৪ টাকা। বেনাপোল কাস্টম হাউস সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোল দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে ২৪ হাজার ৬শ’ ৪৮ টন। জুলাইয়ে আমদানি হয় ২ হাজার ১শ’৭৮ টন। এ ছাড়া আগস্টে ১ হাজার ৩ শ’ ৪৫, সেপ্টেম্বরে ১ হাজার ২ শ’ ১৬, অক্টোবরে ১ শ’ ৫৫, নভেম্বরে ১ শ’ ৪৬, ডিসেম্বরে ৯ হাজার ৬ শ’ ২৮, জানুয়ারিতে ৬ হাজার ১ শ’ ৭৪, ফেব্র“য়ারিতে ২ হাজার ১ শ’ ৯৪, মার্চে ১ হাজার ৫ শ’ ৬ ও এপ্রিলে ১ শ’ ৫ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। আমদানিকারকরা জানান, বাজারে এখন পর্যাপ্ত পরিমাণ দেশি পেঁয়াজ রয়েছে। এ ছাড়া ভারতেও পণ্যটি বিপুল পরিমাণে গুদামজাত করে রাখা হয়েছে। ফলে এবার পণ্যটির আমদানি কম হচ্ছে। তবে রমজানের আগে পেঁয়াজের আমদানি বাড়বে। খুলনার পেঁয়াজ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স মায়ের দোয়া এন্টার প্রাইজের স্বত্বাধিকারী সাইফুর রহমান জানান, ডলার সংকটের কারণে ব্যাংক গুলো ছোট আমদানিকারকদের এলসি খুলে দিতে চাচ্ছে না। এ ছাড়া ভারতে পেঁয়াজের দাম বেশি থাকায় ব্যবসায়ীরাও আমদানি কমিয়ে দিয়েছেন। কেননা বর্তমান সময়ে পণ্যটি আমদানি করলে গাড়ি প্রতি ৩০ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। একই জেলার বড় আমদানিকারক সুজয় এন্টার প্রাইজের স্বত্বাধিকারী মিন্টু সাহা জানান, ভারতে মাঝারি মানের পেঁয়াজ প্রতি কেজি কিনতে হচ্ছে ১৪/১৫ টাকায়। আনুষঙ্গিক খরচ মিলিয়ে দাম পড়ছে ১৯-২০ টাকা। অথচ দেশের বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২২ টাকা কেজি দরে। এ অবস্থায় পেঁয়াজ আমদানি করলে পুঁজি হারাতে হবে। এ ছাড়া ডলার স্বল্পতার কারণে অনেক আমদানিকারক ভোগ্যপণ্য আমদানি করতে পারছেন না। যশোরের পেঁয়াজ আমদানিকারক আহমেদ এন্টার প্রাইজের ব্যবস্থাপক তুহিন সাহা বলেন, বর্তমান বাজারে দেশি পেঁয়াজের চাহিদা অনেক বেশি। তাই এখন আমদানি করলে লোকসান গুনতে হবে। ডলার সংকট প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বেসরকারি ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক বলেন, আমরা চাহিদা মতো বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ডলার সরবরাহ পাচ্ছি না। যে কারণে গ্রাহকদের এলসি করা কমিয়ে দিয়েছি। তবে স্থানীয় বাজার থেকে ডলার সংগ্রহ সাপেক্ষে কিছু এলসি খোলা হচ্ছে। যশোর আঞ্চলিক কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবার যশোর-বেনাপোলসহ খুলনা বিভাগে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে ২৫ হাজার ৭ শ’ ৮৮ হেক্টর জমিতে। মোট উৎপাদিত পেঁয়াজের পরিমাণ ২ লাখ ৫৭ হাজার ২ শ’ ১১ টন। বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে যশোর জেলায়। এখানে আবাদ হয়েছে ১ হাজার ৩ শ’ ৯৫ হেক্টর জমিতে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ-ভারত চেম্বার অব কমার্সের উপ-পরিচালক মতিয়ার রহমান বলনে, এবার দেশি পেঁয়াজের উৎপাদন ভালো হয়েছে। এ ছাড়া ভারতে দাম বেশি থাকায় আমদানিকারকরা পণ্যটি এনে লোকসানের ঝুঁকি নিতে চাইছেন না। এমনকি ডলার সংকট দেখিয়ে অনেক ব্যাংক আমদানিকারকদের এলসি খুলছে না। এ কারণে বেনাপোল বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি কমে গেছে। বেনাপোল কাস্টমসের যুগ্ম-কমিশনার আতিকুর রহমান বলেন, গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে বেনাপোল বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি কম হয়েছে। বাজারে চাহিদা না থাকায় ব্যবসায়ীরা আমদানি কমিয়ে দিয়েছেন।



মন্তব্য চালু নেই