বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হত্যায় ৩ জনের ফাঁসির আদেশ

গাজীপুরের টঙ্গীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবদুর রহমান রিয়াদকে (২৫) অপহরণের পর হত্যার দায়ে তিনজনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ এবং এক নারীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

বৃহস্পতিবার সকালে গাজীপুরের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক এ কে এম এনামুল হক এ দণ্ডাদেশ দেন।

রায়ে একই সঙ্গে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। এ ছাড়া যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত নারীকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরো এক মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দেন আদালত। রায় ঘোষণার সময় আসামিরা সবাই আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হত্যায় মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্তরা হলেন—টাঙ্গাইলের গোপালপুর থানার জামতৈল গ্রামের মো. রেজাউল করিম সাগর (৩২), জামালপুর সদরের মোহনপুর গ্রামের মো. জামাল উদ্দিন (৩৬) ও মৌলভীবাজার সদরের বেকামোড়া গ্রামের মো. শাহাবুদ্দিন (২৭)। যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত নারী হলেন জামালপুরের মেলান্দহ থানার বল্লবপুরের সানজিদা আক্তার লিপি (৩০)। সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে সাগর ও লিপি স্বামী-স্ত্রী।

গাজীপুর আদালতের পরিদর্শক মো. রবিউল ইসলাম জানান, নিহত আবদুর রহমান রিয়াদ নোয়াখালীর সেনবাগ থানার নবীপুর গ্রামের সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রবাসী খাজা মাইন উদ্দিনের ছেলে ছিলেন। তিনি গাজীপুরের টঙ্গীর চেরাগ আলীতে উত্তরা ইউনিভার্সিটিতে বিবিএতে পড়তেন।

টঙ্গীর একটি কোচিং সেন্টারে পড়াশোনা করার সময় লিপির সঙ্গে রিয়াদের ঘনিষ্ঠতা হয়। এর একপর্যায়ে ২০১৩ সালে ২৩ জুলাই চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে লিপি রিয়াদকে তাঁর স্বামী সাগরের কাছে তুলে দেন।

এরপর সাগর রিয়াদকে অপহরণ করে নিয়ে গিয়ে ২০১৩ সালের ২৫ জুলাই আবুধাবিতে থাকা রিয়াদের বাবার কাছে ফোনে মুক্তিপণ দাবি করেন এবং হুমকি দেন, আইনের আশ্রয় নিলে রিয়াদকে মেরে ফেলা হবে।

এর দুদিন পর ২৭ জুলাই আবারও ফোন করে রিয়াদের বাবার কাছে ৩০ লাখ টাকা চায় অপহারণকারীরা। তারা আরো জানায়, পরদিন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পাঁচ লাখ টাকা না দিলে কান কেটে ফেলা হবে।

পরে রিয়াদের বাবা খাজা মাইন উদ্দিন তাঁর বোনের ছেলে সার্জেন্ট (অব.) জাকির হোসেনকে বিষয়টি জানান। ৩০ জুলাই জাকির হোসেন টঙ্গী থানায় এ বিষয়ে একটি অপহরণের এজাহার দায়ের করেন এবং র‌্যাব-১-এর কাছে এ বিষয়ে একটি দরখাস্ত দেন।

এদিকে, ঘটনার প্রায় এক মাস পর র‌্যাব-১ প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রথমে আসামি সাগর ও পরে জামালপুর থেকে বাকি তিন আসামিকে আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদে আসামি শাহাবুদ্দিন রিয়াদকে হত্যার কথা স্বীকার করেন। তিনি জানান, অপহরণের পর শাহাবুদ্দিন, সাগর ও জামাল উদ্দিন মিলে রিয়াদকে হত্যা করে জামালপুরে রাস্তার পাশের একটি গাছে ঝুলিয়ে রাখেন।

আসামিদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, পুলিশ জামালপুরে অজ্ঞাতপরিচয় এক মৃতদেহের কথা জানতে পারে, যাকে আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের মাধ্যমে অজ্ঞাত হিসেবে দাফন করা হয়েছিল। পরে হত্যার ৩৬ দিন পর রিয়াদের লাশ কবর থেকে তুলে ময়নাতদন্ত করা হয়।

ওই তদন্ত শেষে প্রথমে টঙ্গী থানা পুলিশ ও পরে পুলিশের সিআইডি চার আসামির বিরুদ্ধে পেনাল কোডের ৩৬৫, ৩০২/৩৪ ধারায় অপরাধের প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়ার পর সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করে। এর পর ১৯ সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ এবং শুনানি শেষে আজ বৃহস্পতিবার আদলতের বিচারক এই রায় দেন।

আলোচিত এই হত্যা মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন (পিপি) মো. হারিজ উদ্দিন আহমেদ এবং আসামিপক্ষে ছিলেন মো. ওয়াহিদুজ্জামান আকন্দ, মো. আবদুল জলিল ও জেবুন্নাহার মিনা।



মন্তব্য চালু নেই