বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটি : সন্দেহের তালিকায় আরও ৩ জন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের যান্ত্রিক ত্রুটির কারণ অনুসন্ধানে ৬ জনের নাম প্রকা্শ হলেও আরও তিনজন রয়েছেন সন্দেহের তালিকায়। ৬ জনের নাম প্রকাশের পর বিমানে এখন ছাঁটাই আতঙ্ক বিরাজ করছে। এয়ারলাইন্সের যান্ত্রিক ত্রুটির কারণ অনুসন্ধানে গঠিত তদন্ত কমিটি সূত্রে জানা গেছে, প্রভাবশালী হওয়ায় এদের দোষী উল্লেখ করতে কালক্ষেপন করা হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তদন্ত কমিটির একজন সদস্য বলেছেন, বিমানের তদন্ত কমিটির প্রাথমিক প্রতিবেদনে কর্মকর্তাদের গাফিলতির বিষয়টি উঠে আসে। এরপর সাময়িক বরখাস্ত করা হয় বিমানের প্রকৌশল শাখার ছয়জনকে। নাম প্রকাশ হওয়া এই ছয়জন যাদের অধীনে কাজ করতেন তাদের মধ্যে আরো ৩ জন রয়েছেন যাদের এই অপরাধে জড়িত থাকার বিয়য়টিকে উড়িয়ে দেয়া যায় না।

কি কারণে ওই তিনজনের নাম প্রকাশ করা হয়নি এমন প্রশ্নের জবাবে ওই কর্মকর্তা বলেন, কারও বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ আনার আগে অনেক কিছু যাচাই বাছাই করে নিতে হয়। এজন্য বাস্তবতা ও সঠিক তথ্য মূল বিবেচ্য।

বিমানের লোক দিয়ে বিমানের লোকদের ঘটনা তদন্ত করার বিষয়ে ইতোমধ্যে সমালোচনা শুরু হয়েছে। কারণ এই সংস্থার একে অন্যের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন পেশ করা সত্যিই কঠিন। এ বিষয়ে আপনি কি মনে করেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটি কোন সমস্যা বলে আমি মনে করি না। এর আগেও অনেকবার একই নিয়মে তদন্ত হয়েছে। বরং বিমানের লোকেরাই এসবের গভীরে পৌছতে পারে। অন্যদের থেকে এতটা আউটপুট পাওয়া যায় না যতটা না বিমানের অভিজ্ঞদের কাছ থেকে পাওয়া যায়’।

বিমানের ইঞ্জিনিয়ারিং শাখা সূত্রে জানা গেছে, ইঞ্জিনিয়ার অফিসাররা কাজ করেন বিমানের ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী দেবেশ চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে। টেকনিশিয়ানরা কাজ করেন বিমানের চিফ অব টেকনিক্যাল ক্যাপ্টেন ফজল মাহমুদ চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে। সার্বিক তদারকির দায়িত্বে বিমানের পরিচালক (প্রকৌশল ও ম্যাটারিয়াল ম্যানেজমেন্ট) উইং কমান্ডার (অব.) আসাদুজ্জামান। এরমধ্যে ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী (প্রডাকশন) দেবেশ চৌধুরীসহ চারজন গ্রাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একই ফ্লাইটে, যারা আশখাবাদ বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণের পর বিমানটির ত্রুটি অনুসন্ধান করে মেরামত করেন।

এছাড়া তদন্ত কমিটিতেও রয়েছেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একজন কর্মকর্তা। তবে বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলছেন, পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন আসলে সব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে। সরকারপ্রধানের জীবনের প্রশ্ন জড়িত ছিল, সেহেতু কোনভাবেই হালকা করে দেখার অবকাশ নেই। এ দায় দায়িত্ব যারই হোক তাকে নিতে হবে।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স জানিয়েছে, প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর বুধবার (৩০ নভেম্বর) ছয়জনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তারা হলেন, ইঞ্জিনিয়ার অফিসার এস এম রোকনুজ্জামান, সামিউল হক, লুৎফর রহমান, মিলন চন্দ্র বিশ্বাস,জাকির হোসেন ও টেকনিশিয়ান সিদ্দিকুর রহমান।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এ ঘটনায় সোমবার (২৮ নভেম্বর) বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, সিভিল এভিয়েশন অথরিটি এবং বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় থেকে পৃথক তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। বিমানের চিফ অব টেকনিক্যাল ক্যাপ্টেন ফজল মাহমুদ চৌধুরীর নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি কমিটি করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন চিফ অব ফ্লাইট সেফটি ক্যাপ্টেন সোয়েব চৌধুরী, ডেপুটি চিফ অব ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ হানিফ ও ম্যানেজার (কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স) নিরঞ্জন রায়।

উল্লেখ্য, যাদের দায়িত্ব ছিল ইঞ্জিনিয়ার অফিসার ও টেকনিশিয়ান তদারকি করে বিমান উড্ডয়নের আগে সার্বিক যান্ত্রিক অবস্থা পরীক্ষা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, তারাই রয়েছেন বিমানের তদন্ত কমিটিতে। সেই কমিটির প্রাথমিক প্রতিবেদনে ছয়জনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। সন্দেহভাজন বাকি তিনজনের নামও আগামী সপ্তহের মধ্যে প্রকাশ করা হবে বলে আভাস দিয়েছে ওই সুত্র।



মন্তব্য চালু নেই