বিবিসি বাংলাদেশ সংলাপে মতিয়া চৌধুরী-ইলিয়াস কাঞ্চন মুখোমুখি… (ভিডিও)

বিবিসি বাংলাদেশ সংলাপে সরকারের একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী বলেছেন আন্দোলনের নামে বিএনপি দেশে সহিংসতা চালাচ্ছে। তিনি বলেন পাঁচ বছর না যেতে বিএনপির সাথে সংলাপের কোন প্রশ্নই আসেনা।

বিএনপির চলমান আন্দোলন মানুষ সমর্থন করছে এমন দাবি করে বিএনপির একজন নেতা বলেছেন সরকার গণতন্ত্রের কবর রচনা করেছে। তাই সংলাপের মাধ্যমে দ্রুত নির্বাচন ছাড়া চলমান সংকটের সমাধান হবেনা ।

ঢাকায় বিয়াম মিলনায়তনে সংলাপের এ পর্বে বাংলাদেশের গণতন্ত্র, বিএনপির আন্দোলন, সংকটের সমাধান এবং গণমাধ্যমে হস্তক্ষেপ সহ নানা ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

সংলাপের এ পর্বে আলোচক ছিলেন কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য অবসরপ্রাপ্ত লে: জে: মাহবুবুর রহমান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নাসিম আখতার হোসাইন এবং নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের চেয়ারম্যান ও অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন।

অনুষ্ঠানে প্রথম প্রশ্ন করেন নিলুফার ইয়াসমিন নীলা।

তিনি জানতে চান চলমান যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি তাতে করে কি বলা যায় যে আমরা সত্যিই একটি গণতান্ত্রিক দেশে বাস করছি ?

এরপর সাবরীনা মজুমদার চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির দিকে ইঙ্গিত করে জানতে চান বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট কি কেবলমাত্র ক্ষমতায় যাওয়ার জন্যই আন্দোলন করছে?

এসব প্রশ্নের জবাবে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন সরকার দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে আর সেটিকে বাধা দেয়ার জন্যই বিএনপি আন্দোলনের নামে সহিংসতা করছে। সংকট উত্তরণে এখনি কোন সংলাপ আয়োজনের সম্ভাবনাও নাকচ করে দেন তিনি।

তিনি বলেন, “ এটা কোন আন্দোলন নয়, এটা সহিংসতা। এখন সংলাপের কথা আসছে। গত বছর যখন প্রধানমন্ত্রী ফোন করলেন তখন আসলেননা। এখন সংলাপ সংলাপ অনেকেই বলছেন। কিন্তু চৈত্র মাসের মাসালা মাঘ মাসে বললে তো হবেনা”।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “বিএনপিকে পাঁচ বছর অপেক্ষা করতে হবে, ওয়েট”।

বিএনপি নেতা মাহবুবুর রহমান বলেন দেশে এখন গণতন্ত্র বলতে কিছুই নেই। সংলাপের মাধ্যমে এ অবস্থা থেকে উত্তরণের কোন বিকল্প নেই বলেই মনে করেন তিনি ।

150110145606_sanglap99_audi_m_640x360_bbc_nocredit
দর্শক

 

তার দাবি দেশের মানুষ বিএনপির চলমান আন্দোলনকে সমর্থন করছে।

তিনি বলেন, “মহৎ উদ্দেশ্যে আন্দোলন হচ্ছে। আর তাহলো গণতন্ত্রের সংকট উত্তরণ। গণতন্ত্র তো নেই। ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন তো প্রহসন। ওই নির্বাচনের মাধ্যমে যে সরকার বা সংসদ এসেছে তা চোরাবালির মতো। এটাকে যত তাড়াতাড়ি বিদায় করতে পারি, জনগণ তা-ই চায়”।

আলোচনায় অংশ নিয়ে নাসিম আখতার হোসাইন বলেন, “গণতন্ত্র মানে শুধু একটি নির্বাচন নয়। বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব যাদের উপর ছিল তারা সেটি করতে পারেনি বলেই এখন এ সংকট দেখা দিয়েছে”।

সংকট থেকে উত্তরণ ঘটাতে আলোচনার উপরই জোর দেন তিনি।

তিনি বলেন, “গণতন্ত্রে সংকট হতে পারে । কিন্তু তাকে গণতান্ত্রিক উপায়েই তা সমাধান করতে হবে। গণতন্ত্রকে নির্বাচনের ফর্মুলায় ফেলে দিচ্ছে। কিন্তু গণতন্ত্র মানে তো শুধু নির্বাচন নয়”।

অপর প্যানেল প্যানেল আলোচক ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন সরকারের অনেক মন্ত্রী বা সংসদ সদস্য নিজেরাই ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে ভোট দিতে পারেননি। সেখানে গণতন্ত্রের চর্চা হয় কি করে।

তিনি বলেন, “দেশের রাজনীতি ঘুরপাক খাচ্ছে ক্ষমতায় থাকা আর যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে। সংকট নিরসনের কোন ধরণের উদ্যোগও দেখা যাচ্ছেনা”।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “ গণতন্ত্র চর্চা সেভাবে হয়নি। এটা শুধু সরকারেরই দায়িত্ব না। বিরোধী দলেরও দায়িত্ব ছিল”

গণমাধ্যমে হস্তক্ষেপ প্রসঙ্গ

বাংলাদেশের একটি বেসরকারি টেলিভিশনের মালিককে গ্রেফতারের ঘটনা উল্লেখ করে আরেকজন দর্শক জানতে চান গণমাধ্যমের উপর কোন ধরনের হস্তক্ষেপ চলছে কি-না।

জবাবে মাহবুবুর রহমান বলেন, “গণমাধ্যমকেও দমন করে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে সরকার”।

তিনি বলেন, “অনেকগুলো টিভি ও পত্রিকা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এখন আবার সরকার টেলিভিশনের জন্য যে নীতিমালা করেছে সেটিই তো নিয়ন্ত্রণমূলক”।

150110150607_sanglap99_audi_640x360_bbc_nocredit
দর্শকদের একাংশ

 

অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে মতিয়া চৌধুরী বলেন, “গণমাধ্যম বা কারও কথা বলার ক্ষেত্রে সরকার কোন ধরনের হস্তক্ষেপ করছেনা”।

তবে সবাইকেই আইনের আওতায় থেকে কাজ করতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, “কয়েকটি টিভি আর পত্রিকা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে যেগুলো বিরোধী দলের সমর্থক বলেই মানুষের কাছে পরিচিত”।

নাসিম আখতার হোসাইন বলেন, “সরকার গণমাধ্যমের উপর হস্তক্ষেপ করছে কি-না তা জানা নেই। তবে মানুষের মধ্যে এমন ধারণা রয়েছে”।

সংকট উত্তরণে উদ্যোগ আছে?

মো: গোলাম রহমান জানতে চান চলমান রাজনৈতিক সংকট সমাধানের লক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকে কোন পদক্ষেপ কি আপনারা দেখতে পাচ্ছেন ?

নাসিম আখতার হোসাইন বলেন, “ জনগণের সাথে সম্পৃক্ততা না থাকলে যেমন আন্দোলন হবেনা তেমনি করে গুম করে হত্যা সমাবেশ করতে না গিয়ে ,মত প্রকাশের স্বাধীনতা না দিয়ে গণতন্ত্র কায়েম করা যাবেনা”।

তিনি বলেন, “সমাবেশ করার অধিকার তো সব দলের অধিকার আছে। জুজুর ভয়ে সমাবেশ করতে না দিয়ে তো গণতন্ত্রকে তো ভয়ের শিকারে পরিণত করা যাবেনা”।

মাহবুবুর রহমান বলেন, “সংকট উত্তরণে সরকারের কোন পদক্ষেপ তো নেই-ই বরং তারা উল্টো পথে চলছে। সরকার গণতন্ত্রের নাম করে গণতন্ত্রের কবর রচনা করছে। একটা পুলিশী রাষ্ট্র তৈরি করতে যাচ্ছে”

150110150933_sanglap99_panel_640x360_bbc_nocredit
প্যানেল সদস্য বাঁ থেকে: কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের চেয়ারম্যান ও অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন, অনুষ্ঠান সঞ্চালক আকবর হোসেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নাসিম আখতার হোসাইন এবং বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য অবসরপ্রাপ্ত লে: জে: মাহবুবুর রহমান।

 

তিনি বলেন, “অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনই একমাত্র সমাধান এবং সেজন্য সংলাপ দরকার। সেটা করতেই হবে। গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে হলে চাঁদে যাওয়ার দরকার হলে তাও যাবো”।

ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, “আগে বলা হয়েছিলো সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য নির্বাচন করা হচ্ছে। পরে নতুন করে নির্বাচন দেয়ার কথা বার্তা শোনা গেছে। এখন ক্ষমতাসীনরা বলছে পাঁচ বছর আগে এধরনের কথাই তারা শুনতে রাজী নন”।

তিনি বলেন সংকট সমাধানের কোন উদ্যোগই দেখা যাচ্ছেনা।

মতিয়া চৌধুরী বলেন, “একটা নির্বাচন হয়ে গেছে। আরেকটা নির্বাচন পাঁচ বছর পর হবে। কাজেই নির্বাচনের জন্য আলোচনা পাঁচ বছরের মাথাতেই হবে”।

তিনি বলেন তারা ফরমাল বিরোধী দল নয়, তবে তারা বড় দল সেটা অস্বীকার করছিনা। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করতেই তারা এসব করছেন।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, “সভ্যতাকে রক্ষার জন্য অসভ্যকে নিবৃত্ত করতে হয়, তার জন্য যা করার দরকার সরকার সেটিই করছে”।

https://www.youtube.com/watch?v=3zdFNClquOU

https://www.youtube.com/watch?v=shdMsxg5oyQ



মন্তব্য চালু নেই